নাগরিক আলেমসমাজকে বর্বরতার কাহিনি শুনালেন সিলেটের মাদরাসা ছাত্র
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ১৪ ২০২৪, ১৭:৫৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে আহত হয়ে এখনও শয্যাশায়ী দিন কাটছে মাদরাসা ছাত্র হাফিজ মামুন আহমদের। ছাত্রআন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরীর নয়াসড়কে তিনি হামলার শিকার হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নাগরিক আলেমসমাজের সমন্বয়করা তাকে দেখতে গেলে নিজের ওপর চলা বর্বর হামলার দুর্বিষহ কাহিনি বর্ণনা করেন মামুন। তিনি সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের রাজারগাঁও দারুল হাদিস মাদরাসার মেশকাত জামাতের ছাত্র ও ফকিরেরগাঁও গ্রামের মাওলানা মনির আহমদের ছেলে।
মামুন জানান, ৪ আগস্ট রাজারগাঁও মাদরাসা থেকে তিনি ও তার সহপাঠী হাফিজ মুহসিন আন্দোলনে যোগ দিতে নগরীতে আসেন। একই দিন তাদের মাদরাসা থেকে আরও অনেকে সিলেটে এসে আন্দোলনে যোগ দেন। বিকেলে নগরীর নয়াসড়কে ছাত্রজনতার মিছিলে শরিক হন তারা। এ সময় ছাত্রলীগ- যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা চৌহাট্টা থেকে নয়াসড়ক এসে আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে অনেকে নয়াসড়কের নির্মাণাধীন মসজিদে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের ওপর চড়ায় হয় ছাত্রলীগ। আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, হকিস্টি, রড ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটাতে থাকে।
মামুন জানান, তারা ১৫/২০ জন মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকলকেই নির্মমভাবে নির্মমভাবে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। তার শরীরের রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়েছে। তাকে পঙ্গু করে দিতে সবচে বেশি আঘাত করা হয়েছে পায়ে। এতে তার বাম পা ভেঙে গেছে। রামদার কোপে তার পায়ের দুটো আঙুল অর্ধেক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। মাথায় ও ঘাড়েও কোপ ছিলো। এছাড়া শরীরে দুটি গুলিও ছিলো। এই অবস্থায় দৌড়ে মসজিদ থেকে নামতে গিয়ে দেখেন সিড়ির মুখে ছাত্রলীগের ক্যাডারা ওঁৎ পেতে আছে। মসজিদ থেকে তাড়া খেয়ে বাইরে আসতেই সিড়িতে তাকে আরেক দফা পেটানো হয়।
এরপর কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এক বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিকশায় আবারও তার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত-নিহতদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মামুনকে দেখতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন নাগরিক আলেমসমাজের প্রধান সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক নোমান বিন আরমান, মিশন ওয়ান মিলিয়নের প্রধান নির্বাহী ফায়যুর রাহমান ও লেখক নাওয়াজ মারজান। এ সময় পাশে ছিলেন হাফিজ মামুনের পিতা মাওলানা মনির আহমদ। আহত মামুনের চিকিৎসার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে নগদ দশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
মামুনের পিতা মনির আহমদ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকা ছেলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে। শরীরের অন্যান্য ক্ষত সেরে উঠলেও ছেলের পা ঠিক হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার পরিবার। চলাচলের উপযোগী হলেও ছেলে আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে না বলে হাহাকার করে ওঠেন তিনি।