“ধর্ম যার,উৎসব ও তার” পূজায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও অংশগ্রহণ যে কারণে হারাম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ৩০ ২০২২, ১৯:২৭

শাহ মমশাদ আহমদ: প্রতিটি জাতি ধর্মের আলাদা কৃষ্টি কালচার রয়েছে,সমাজে প্রত্যেকেই নিজের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করে চলে, মুসলমানদের তো রয়েছে উজ্বল,স্বতন্ত্র তাহজিব- তামাদ্দুন ঐতিহ্য।তা হলে কিভাবে একজন মুসলিম অন্যের সংস্কৃতি ধার করতে পারে? অন্য ধর্মাবলম্বীর উপাসনায় শরিক হতে পারে?

হিন্দুদের দুর্গাপূজা সহ বিভিন্ন পুজায় মুসলিম ভাইদের অংশ গ্রহণ। এ-উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে দেখা যায়।ইদানীং তা ব্যাপক আকার ধারন করেছে।কিন্তু হিন্দুদের পুজায় অংশ নেয়া এবং শুভেচ্ছা জানানো যে হারাম ও মারাত্মক গুনাহ, অনেক মুসলমান তা জানেনই না।

আমাদের দেশে মুসলমানরা অমুসলিমদের সাথে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ ভাব নিয়ে থাকেন। অনেকে আবার উদারতার নামে ঈমান বিলিয়ে দেন, ইসলামের অবস্থান কিন্তু মধ্যমপন্থা অবলম্বনের।তাদের সাথে আচরণ হবে উদারতার, অতিউদারতার নয়।অমুসলিমদের সাথে আমাদের আচরণ কি হওয়া উচিত?

আসুন পবিত্র কুরআন দেখে নেই। আল্লাহ বলেন,

وقولو للناس حسنا

তোমারা মানুষকে ভাল কথা বলবে।(সুরা বাকারা ৮৩)

لاينهاكم الله عن الذين لم يقاتلوكم في الدين ولم يخرجوكم من دياركم ان تبروهم

যারা তোমাদের সাথে ধর্মযুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি,তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও ন্যায্যতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেননা। (মুমতাহিনা)

এ দুটি আয়াতে অমুসলিমদের সাথে সদাচরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়।সদাচরণ বলতে তাদের জুলুম না করা,ধর্মকর্ম পালনে বাধা না দেয়া, মানবিক সহায়তা, সুন্দর কথাবার্তা বুঝায়,কিন্তু কেউ যদি তাদের শিরকের সাথে একাত্মতা পোষণ কিংবা সাদৃশ্য গ্রহণ করে,তাদের এবাদাতের কাজে সহায়তা করে (নিরাপত্তা প্রদান ছাড়া)আনন্দের ছলে তাদের পুজায় গিয়ে দলভারী করে সেটা তাদের দলভুক্তির শামিল।

হিন্দুদের পুজায় শুভেচ্ছা জানানো ও হারাম,কাবিরা গুনাহের কাজ।শুভেচ্ছা মানেই তো শুভ ইচ্ছা বা কল্যাণ কামনা। পুজা একটি শিরকি কাজ,একাজের প্রতি শুভ ইচ্ছার প্রকাশ বা কল্যাণ কামনা মুসলমানদের জন্য হারাম,তবে ইসলামী বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়,এমন শব্দ দ্ধারা হিন্দু ভাইদের ব্যক্তিগত কল্যাণ কামনা করা যেতে পারে।যেমন তোমার জীবন কল্যাণময় হোক,তুমি ইহজগতে সুখী হও।

আল্লাহ বলেন, تعاونو على البر والتقوى ولاتعاونو على الاثم والعدوان তোমারা পুন্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করবে কিন্তু অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহায়তা করবেনা।(সুরা মায়েদা)

এছাড়া বুখারীর হাদীসে বর্ণিত প্রিয় নবী (সা.) বলেন, من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করল সে তাদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে গেল।

 

এ ব্যাপারে হযরত উমর রা. বলেন, لا تدخلو عليهم فى كنائسهم يوم عيدهم فان السخة تنزل عليهم

তোমরা কাফের মুশরিকদের উপসানালয়ে তাদের উৎসবের দিনে প্রবেশ করোনা,কারণ সে সময় তাদের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে।(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা)

এ বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া হারাম,পরস্পরের সম্পর্কের ভিত্তিতেই হোক অথবা চাপে পড়ে হোক, কোন অবস্থাতেই তা জায়েজ নয়,ঘুরেফিরে দেখার জন্য ও যাওয়া যাবেনা। (ফতোয়া নং ৬২৪৬।

আল্লাহ পাক বলেন, لا تركنو الى الذين ظلمو فيمسكم النار

তোমরা পাপীদের প্রতি ঝুকবেনা,নতুবা তোমাদের জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। (সুরা হুদ)

প্রিয় ভাই,তাদের প্রতি সামান্য ঝুকলে ও তাদের সাদৃশ্য রাখলে যদি জাহান্নামে যাবার শংকা থাকে তাহলে তাদের শিরকী উৎসবে অংশ নেয়ার পরিণতি কি হবে?আমরা সহজেই বুঝতে পারি।

কেউ কেউ তো পুজায় অংশ নেয়াকে গর্বের বিষয় ভাবেন, গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাবো?আমার ঈমান ঠিক আছে বলে দম্ভোক্তি ও করে থাকেন।

হে প্রিয় ভাই,একটু গভীরভাবে ভাবুন, মুর্তিপুজা প্রকাশ্য শিরকী কাজ,জঘন্য পাপ,আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা মানেই আল্লাহকে অবমাননা করা,সন্তানের সামনে পিতামাতার অবমাননা হলেএকজন সুসন্তান কি তা উপভোগ করবে?তাহলে আপনি সত্যিকার ঈমানদার হলে আল্লাহর অবমাননা কিভাবে বরদাশত করবেন?

মহান আল্লাহ বলেন, لا تشرك باالله ان الشرك لظلم عظيم

নিশ্চয়ই শিরিক সবচেয়ে বড় অন্যায়।

পরিশেষে বলবো, প্রিয় ভাই,আমরা স্বাধীন দেশে হিন্দু ভাইদের পুজায় কোন বাধা দিবোনা,যতটুকু সম্ভব সরকারি নির্দেশনার আলোকে তাদের নিরাপত্তা দিবো কিন্তু শিরকী কাজে সামান্যতম সহযোগিতা করা যাবেনা।পুজার সময় যেহেতু প্রকাশ্য শিরকী কাজ হয় তাই প্রতিমাদের অসারতা প্রমাণ করে তাদের তাওহিদের দাওয়াত দিতে হবে।

প্রত্যেক ধর্মের উৎসব তার নিজের ধর্মাবলম্বীদের,কোন ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন হতে পারেনা, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার একটি অবাস্তব ও প্রত্যেক ধর্মের চেতনা বিরুধী শ্লোগান, মুলত শ্লোগান হবে,ধর্ম যার, উৎসব ও তার।

আল্লাহ আমাদের বিষয়টি বুঝার তাওফিক দিন।