ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে রমযান-ঈদ উদযাপন করুন -আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৭ ২০১৮, ১৮:৫৮

মাহে রমযান। সিয়াম-সাধনার মাস। ইবাদত-বন্দেগিতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পাপ মাফ করার পবিত্র মাস।
রমযান মাসে কোন আমল সবচে’ উপকারি, করণীয়-বর্জনীয় কি কি, যাকাত প্রদান পদ্ধতি ও শরীয়তসম্মত ঈদ উদযাপনসহ নানা দিক নিয়ে আলোকিত রাউজানকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, দেশের অন্যতম ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, বিদগ্ধ মুহাদ্দিস, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহকারি মহাপরিচালক, শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন, আলোকিত রাউজানের নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মাদ ইশতিয়াক সিদ্দিকী।
একুশে জার্নালের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: রমযান মাস শুরু হয়েছে। আমরা কিভাবে ইবাদতের প্রস্তুতি নিতে পারি?

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: রমযান মাস ক’দিন আগেই শুরু হয়েছে ৷ আমাদের উচিত হবে, যতটুকু সম্ভব হাতের কাজ হালকা করা ৷ অধিনস্থদের কাজের বোঝা ও দায়িত্ব কমিয়ে দেয়া ৷ সবমিলিয়ে প্রত্যেক নারী-পুরুষের উচিত রমযানের দিনগুলো আমলের জন্য ফারেগ করা ৷

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: রমযান মাসে কোন কোন আমল বেশি করা উচিত?
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস ৷ তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত ৷ পাশাপাশি বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করা। যিকির করা। তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবীহ আদায় করা। সামর্থানুযায়ী দানসদকা করা।

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: রমযান উপলক্ষে দেশব্যাপী কুরআন শিক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয় ৷ কার্যক্রমগুলো কেমন দেখছেন ?

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা ও সংগঠনের উদ্যোগে বয়স্ক, ও মেয়ে-শিশুদের কুরআন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় ৷ এটা অত্যন্ত প্রশংসার বিষয় ৷ প্রতিটি গ্রাম, মসজিদ-মাদ্রাসায় এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়া উচিত ৷ কুরআন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিখার ব্যবস্থা করা দরকার ৷

সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ইশতিয়াক সিদ্দিকী


ইশতিয়াক সিদ্দিকী: রমযান মাসে শারীরিক কষ্টের কথা বলে, স্বাস্থ্যহানীর কথা বলে অনেকে রোযা ছেড়ে দেয় ৷ এ বিষয়ে কী বলেন?

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: রোযা শরীয়তের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ফরজ বিধান ৷ যা প্রত্যেক বালেগ মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ ৷ যারা বিনা ওজরে রোযা রাখে না তারা প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না ৷ মূলত সিয়াম-সাধনা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শরীরের জন্য খুব উপকারী কাজ ৷

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: ঈদের খুশিটা কিভাবে উদযাপন শরীয়তসম্মত ?

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: ঈদ হলো, আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহকে খুশি উদযাপনে দেয়া বিশেষ উপহার ৷ ঈদের দিনে আমরা মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নিবো ৷ যাকাত-ফিতরা আদায় করবো ৷ সব মিলিয়ে একটি সুখময় সমাজ তৈরিতে চেষ্টা করবো ৷
কিন্তু ইদানিং ঈদের দিনগুলোতে দেখা যায়, আনন্দের নামে তরুণ-তরুণীরা এমনকি মহিলারা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাটে-পার্কে বেপর্দা ঘুরে বেড়ায় ৷ বিভিন্ন অশ্লীলতায় মেতে উঠে ৷ মিডিয়াগুলো বিনোদনের নামে অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করে ৷ এসব গর্হিত কাজ ইসলাম কখনই সমর্থন করে না ৷ ঈদের আনন্দের নামে এসব পরিহার করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য ৷

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: প্রতিবছর লাখো মানুষ যাকাত দিচ্ছে কিন্তু দরিদ্রতা কমছে না ৷ করণীয় কী ?

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: বাংলাদেশে লাখ-লাখ ধনী মানুষ আছে যাদের উপর যাকাত ফরজ ৷ অনেকে পূর্ণভাবে যাকাত দিচ্ছে না ৷ যদি সব ধনীরা যাকাত আদায় করতো তাহলে দেশে দারিদ্রতা থাকতো না৷ অন্য দেশের কাছে ঋণ নিতে হতো না৷ আমাদের দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো ৷
আর যারা যাকাত দিচ্ছে তাদের যাকাতে দরীদ্রদের চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে না ৷
আমি মনে করি, সরকারী যাকাত খাতকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করতে হবে ৷ আর ব্যক্তি উদ্যোগে যেসব যাকাত দেয়া হচ্ছে তাতে সমন্বয় সাধন করা উচিত ৷ প্রয়োজনে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া যায় ৷
প্রচলিত ধারায় জন-জন শাড়ী-লুঙ্গি দেয়ার পাশাপাশি তালিকাভিত্তিক ব্যক্তিদের হাঁস-মুরগি-ছাগল বা অন্য কিছু কিনে দেয়া যায় অথবা নগদ টাকা দেয়া যাতে তারা সাবলম্বি হতে পারে ৷

ইশতিয়াক সিদ্দিকী: আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।