ধর্মভিত্তিক রাজনীতিচর্চার নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৮ ২০১৯, ১০:০৫

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া

ডাকসুর সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিচর্চা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডাকসুর এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি স্বীকৃত। নিষিদ্ধ নয়। বাংলাদেশের সংবিধান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়েছে। মানুষের স্বাধীনভাবে সুষ্ঠু, সুসংগঠিত ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চর্চার অধিকারকে সংরক্ষণ করে গণতন্ত্র। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চর্চাও গণতান্ত্রিক অধিকার। যেভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য মতাদর্শের রাজনীতি চর্চার সুযোগ পায় সেভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চর্চারও সুযোগ থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসচর্চা বর্তমানে হয় না। এ প্রজন্মকে এর প্রতিষ্ঠার সঠিক ইতিহাস থেকে সম্পুর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। আজ যারা মেকি অসাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে মুখে ফেনা তুলছে তাদের পূর্বপুরুষরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হোক, তা কখন‌ও চায়নি। এমনকি রবিঠাকুরও এর চরম বিরোধীতা করেছিলেন। এমন‌ই মুহূর্তে ঢাকার মুসলিম নবাব স্যার সলিমুল্লাহ খান এগিয়ে আসেন। তিনি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জমি দান থেকে নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করেন।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ খান ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই করতেন। তিনি মাওবাদ, লেলিনবাদ বা তথাকথিত স্যাকুলারবাদের রাজনীতির চর্চা করতেন না। অথচ আজকে তারই দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চর্চারও সুযোগ নেই। স্যার সলিমুল্লাহ খান যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করতেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবা মরহুম শেখ মজিবুর রহমানও সে দল অর্থাৎ মুসলিম লীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। শেখ সাহেব ছাত্রাবস্থা থেকেই ধর্মীয় রাজনীতির চর্চা করতেন। এককথায় ধর্মীয় রাজনীতি চর্চার মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান।

যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্যান্য মতাদর্শের রাজনীতি চর্চার অবাধ সুযোগ থাকে তাহলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চর্চার সুযোগ কেন থাকবে না? একই প্রতিষ্ঠানে দ্বিমুখী নীতি থাকতে পারে না। যে প্রতিষ্ঠান দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই অনুদার, সংকীর্ণমনা হয়ে উঠবে।

ঢাবির চত্ত্বর সব মতাদর্শের রাজনীতির জন্য উন্মুক্ত হলে কেবল ধর্মীয় রাজনীতি চর্চার দ্বার কেন রুদ্ধ থাকবে? সব ধরনের কার্যক্রম যে ক্যাম্পাসে অবাধে চলবে সেখানে ধর্মীয় কর্মকান্ডে বাঁধা থাকবে কেন? এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? এটা কোন ধরনের প্রগতিশীলতা?

পাক আমলে ঢাবিতে সীরাতুন্নাবী মাহফিলসহ নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হত। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় বর্তমানে সীরাত মাহফিল তো দুরের কথা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ার কথাও শুনা যায় না। মুসলিম সংস্কৃতির পরিচায়ক কোন কর্মকান্ড হতেও দেখা যায় না। অথচ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতির চর্চা ঢাবিতে অবাধে হয়ে থাকে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে যেসব কার্যক্রম হয়ে থাকে তার সবই তো খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যে শোভাযাত্রা বের করা হয় তা সর্বাঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের বোধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। তখন তো কাউকে কিছু বলতে শুনা যায় না। 

রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে ধর্মীয় রাজনীতি চর্চার কোন বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে থাকে। নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে ধর্মীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করছে যারা। সেখানে ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিচর্চার অধিকার কেন ভূলুণ্ঠিত হবে?

উগ্রবাদী আর ধর্মীয় সংগঠন এক নয়। উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর ধর্মীয় কার্যকলাপ এক জিনিস নয়। ধর্মের সঠিক এবং পরিপূর্ণ চর্চার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মানুষকে বিরত রাখা। তথাকথিত প্রগতিশীল সংগঠনের ব্যানারের আড়ালে কেউ যদি উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় তবে সে সংগঠনকে তো সন্ত্রাসী, উগ্রবাদী সংগঠন বলা হয় না। আজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে, যারা কুপিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করছে, যারা গুলি করে মানুষ খুন করছে, তাদের কারণে তো সে সংগঠনকে কেউ উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী, জঙ্গি সংগঠন বলছে না। ঐসব সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে না। আজকে ক্যাসিনো, জুয়া ও মদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দলকে কেউ তো জুয়ারি দল বলছে না। তবে কেন ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এত বাঁধা বিপত্তি?

এধরনের আচরণ কারো জন্য কল্যাণকর নয়। এ নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য অশনিসংকেত ডেকে আনবে। দেশের শান্তি সম্প্রীতির পবিত্র পরিবেশ বিনষ্টের পথকে উন্মুক্ত করে দিবে।