দেশ ও ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবেলা করে দুর্নীতি ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ২০ ২০২২, ২১:৪১
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, একটি অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ঘাদানিকের শ্বেতপত্রকে “গণনাগরিক অবমাননা” অবহিত করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, কথিত শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের একধরণের রাখঢাক-লুকোচুরি ও মিডিয়াবাজি প্রমাণ করে যে, তারা সারবত্তাহীন অভিযোগপত্র নিয়ে নাগরিকদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এধরণের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড রুঁখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১তম বর্ষে এসেও আজকের সরকার ৭১ পূর্ববর্তী সরকারের মতো, নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোন অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে, বাকস্বাধীনতা পাবে, ন্যায়বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণ-মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণীর এহেন কর্মকান্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি দেশে একধরণের দুর্ভিক্ষ জন্ম দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। খাবারের জন্য খাদ্য ট্রাকের পেছনে মানুষ দৌড়াচ্ছে। জাতিকে নেশাগ্রস্থ করে স্বার্থ হাসিলের পায়তারা চলছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।
আজ ২০ মে ২০২২ শুক্রবার, বাদ জুম’আ বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস্ পার্ক) অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমূদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম শায়খে চরমোনাই।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় দাওয়াহ বিষয়ক উপদেষ্টা প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, সহ অর্থ-সম্পাদক মাওলানা নূরুল ইসলাম আল আমীন, ইসলামী যুব আন্দোলন সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল করীম আকরাম, চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফতী সৈয়দ জিয়াউল করীম, বরিশাল সদর জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফতী হেদায়েতুল্লাহ আজাদী, বাকেরগঞ্জ নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ হুমায়ুন কবির সহ বিভাগস্থ জেলা মহানগর নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইসলামী যুব আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, ইসলামী আইনজীবী পরিষদ ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বাদ জুম’আ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জুম’আর আগেই বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। বিকেল ৪.৩০মি. যখন দলের আমীর বক্তব্য রাখেন সমাবেশ স্থলে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। সমাবেশের কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যানবহনশূণ্য হয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দাম বাড়ে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে। সরকারীদলের সমর্থনপুষ্ট মধ্যস্বত্বভোগীরা স্তরে স্তরে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে। পথে-ঘাটে পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানরা চাঁদাবাজি করে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করার ক্ষেত্রে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের কারসাজী করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। সরকারের ভুল মুদ্রানীতি, শুল্কনীতি, আমদানী সিদ্ধান্তে অপরিণামদর্শিতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সিন্ডিকেটবাজী বন্ধ করতে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবসায়ীদের দৌরত্ব কমাতে হবে। যেকোন মূল্যে খাদ্যদ্রব্যের দাম সহনীয় করতে হবে।
মাদক প্রসঙ্গে তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ মদের ওপর, তা পানকারীর ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার ওপর, যে তা নিষ্কাসন করে এবং যার আদেশে নিষ্কাসন করে তার ওপর আর যে ব্যক্তি তা বহন করে এবং যার কাছে পৌঁছে দেয়, সবার ওপর।’ (সুনানে আবি দাউদ)
“অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২” নামক মদ সহায়ক একটি বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার দেশে মদ ও অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয় বিক্রয় এবং সংরক্ষণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে চাইছে। মদকে একটি সাধারণ ও সহজলভ্য পানীয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যার মাধ্যমে গোটা দেশের তরম্নণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে পীর সাহেব বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এইচএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়াবলী থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেয়া হয়েছে। মানবিক বিভাগ ছাড়া বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও অন্যান্য বিভাগে ইসলাম শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয়েও রাখা হয় নাই। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরে যতটুকু ইসলাম শিক্ষা রাখা হয়েছে তাতেও ইসলামকে খন্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর উচ্চশিক্ষায় ইসলাম শিক্ষা সম্পূর্ণই বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মেধাবীরা দেশের জন্য সম্পদে পরিণত না হয়ে দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। বুয়েটে পড়েও কিছু ছেলে খুনিতে পরিণত হয়েছে। সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখা মেধাবীরাই প্রশাসনে গিয়ে দুর্নীতি করে দেশের উন্নয়ন ও বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে।
তিনি শিক্ষার সকল স্তরেই ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। স্বাস্থ্য সেবা প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, চিকিৎসা সেবার করুণদশা গত করোনা মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিরীহ উলামায়ে কেরামসহ হাজার হাজার নাগরিককে কেবলমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বিনাবিচারে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। তিনি উলামায়ে কেরামসহ সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, করনীতি ও কর ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে, সম্পদের পুঞ্জিভবন রোধ করতে হবে। জাকাতকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার অধীনে আনতে হবে। কালোটাকার জন্ম ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সম্পদের পুন:বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আজ চিন্তিত। দেশময় সংঘাত আর সহিংসতার অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা বারবার রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দাবী জানিয়ে আসছি। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিকদল এবং নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিগণ সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে আসলেও, কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা তাদের দলীয় লোকদেরকে নির্বাচিত করার জন্যে এহেন কাজ নেই যা করেনি। নির্লজ্জভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ফলে নির্বাচনকে মানুষ এখন প্রহসন এবং তামাশা মনে করে। আগামীতে মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। আবারও ২০১৪ ও ১৮ এর নির্বাচনের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। রাতের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদের কোন নৈতিক বৈধতা নেই। এই অবৈধ সংসদ বহাল রেখে কোন নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আমরা দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা, জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দূর, মানুষকে স্বস্তি ও নিরাপত্তা দিতে চাই। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মানবীয় ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই। প্রতিহিংসা জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির চির অবসান চাই। এ জন্যে আমরা কালজয়ী আদর্শ ইসলামের আলোকে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই।
পীর সাহেব বলেন, ইসলাম নিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে এখনো কিছু ভুল ধারণা আছে। অনেকের ধারণা, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে, রাষ্ট্রের সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে। অন্য ধর্মের মানুষ তাদের অধিকার হারাবে। নারীরা গৃহবন্দি হবে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে যাবে। এসব ভূল ধারণা, রাষ্ট্রে ইসলাম বিজয়ী হলে, মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রে যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে- সব বহাল থাকবে। রাষ্ট্রের যে যেই অবস্থানে কর্মরত আছে, সে সেখানেই থাকবে; কারো উপর কোন অন্যায় করা হবে না। তাবে কেউ দুর্নীতি করতে পারবে না, কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় করতে পারবে না। কেউ জনগণকে হয়রানী করতে পারবে না। ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের লোকজন আরো বেশী সুবিধা ভোগ করবে। তাদের ধর্মকর্মের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তাদের জান-মাল এবং ইজ্জতের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। তারা রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। নারীরা সবচেয়ে বেশী সম্মানিত হবেন। সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধায় নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নারীদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো বিস্তৃত এবং আরো নিরাপদ করা হবে। এক কথায় রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে, মানুষের জন্যে এবং রাষ্ট্রের জন্যে যা কল্যাণ তার কিছুই পরিবর্তন করা হবে না। মানুষের জন্যে যা অকল্যাণ এবং দেশের জন্যে যা ক্ষতিকর তা-ই শুধু পরিবর্তন করা হবে।
তিনি বলেন, অতীতে যারা দেশ শাসন করেছে, জনগণের কাছে তাদের নতুন কিছু বলার নেই। মানুষ তাদের কর্মকান্ড দেখেছে। তাদের প্রতি জনগণের কোন আস্থা নেই। অতএব জনগণের আস্থা অর্জনে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদেরকে জনগণের হৃদয় জয় করতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। দেশের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা অন্যায়-অবিচার আর জুলুমকারীদেরকে বর্জন করুন। দুর্নীতিবাজদেরকে চিরতরে প্রত্যাখ্যান করুন। ন্যায়ের পক্ষে এবং কল্যাণের পক্ষে অবস্থান নিন। দেশের সকল স্তরের ওলামা মাশায়েখ, অপরাপর ভাতৃপ্রতিম ইসলামী সংগঠন এবং সকল মতের ইসলামপন্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসুন আমরা এদিক সেদিক ছুটাছুটি না করে ইসলামকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেয়ার জন্যে একটি কার্যকর ও টেকসই ঐক্য গড়ে তুলি। কার্যকর এবং ফলপ্রসূ ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে ইসলামী শক্তিই হবে এদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
সভাপতির বক্তব্যে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়েখে চরমোনাই বলেন, যাদের চরিত্রের ঠিক নেই, যারা অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটর থেকে বহিস্কার হয়েছে, যে মহিলা মাকে ঘর থেকে বের করে দেয়, বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত সে ব্যক্তি ওলামাদের তালিকা করে। বিচারপতি মানিকের অপকর্মের শেষ নেই।
এধরণের দুর্নীতিবাজরা ওলামাদের জঙ্গি ও দুর্নীতিবাজ বলে গালি দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যতটুকু উন্নতি তার পুরোটাই মানুষের শ্রমের ফসল, সরকারের কোন নীতির কারণে নয়।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, রাষ্ট্রের রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি। বিদেশে টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। আসলে মানিক-তুরিন গংরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে। সরকার যদি ভোটের অধিকার বারংবার কেড়ে নিতে চান তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদেরও উৎখাত করে ছাড়বে। আমরা কোন হামলা, মামলা বা বুলেটের ভয় করি না। বাংলার মানুষ আইয়ুব খানের বুলেটের ভয় পায় নাই, আপনাদের এসব জুলুম নির্যাতনকেও ভয় পায় না।
তিনি বলেন, দেশে কোথাও মদের দোকান খোলা হলে বাংলাদেশের জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, মদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কঠোর অবস্থান ছিলো। তাঁর কণ্যার সময় মদের আইন পাশ হতে পারে না। তিনি কারাবন্দী সকল আলেমের মুক্তি চান। তিনি বলেন, যদি সোজা আঙ্গুলে ঘি না ওঠে তাহলে বাংলার জনতা আঙ্গুল বাঁকা করতে জানে।