দেশে গণতন্ত্র নেই ; মাহমুদুর রহমান মান্না

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ১৭ ২০১৯, ১৫:৪৮

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র নাই। ভোট ডাকাত স্বৈরাচার জনগণের অধিকার হরণ করেছে। এজন্যে স্পষ্ট করে বলা দরকার- ক্ষমতায় যারা আছেন ওরা মিথ্যুক, ওরা প্রতারক, ওরা ভন্ড এবং ওরা কাপুরুষ। গতকাল নাগরিক ঐক্যের এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তোপখানা রোডে শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস ও আমরা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা হয়।

মান্না বলেন, এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। আমরাই সাহসী, আমরা ১০ বছর লড়ছি। আমরা আছি- শেষ পর্যন্ত আমরা লড়ব। কোনো বিভ্রান্তিতে আমাদের পড়া ঠিক হবে না।

ছাত্রলীগের দুই নেতার সরিয়ে দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, গতকালকে একটা টকসোতে গেছি, গত কয়েকদিন ধরে এই যে, ছাত্র লীগের বিরাট অর্জন-এটা নিয়ে কথা-বার্তা হচ্ছে এবং উনারা আমাদেরকে দিয়ে বলাবার চেষ্টা করেন- প্রধানমন্ত্রী যে এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন এটাকে অন্তত প্রশংসা করেন, ছাত্র লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকে দায়িত্ব থেকে বের করে দিয়েছেন-এটাকে ভালো বলবেন না? আরে এটা যদি ভালোই হতো, এটা যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার্তাই হতো তাহলে হলমার্কের কেলেংকারীর পরে আপনার উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি কেনো? জনতা ব্যাং, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন? এটা যদি সত্যিই হতো আপনি জনগনকে বার্তা দিতে চান যে আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই শুরু করতে চান তাহলে বাংলাদেশের সব কয়টা ব্যাংক যে একের পর এক খালি হয়ে যাচ্ছে-এই ব্যাংকের পতনের জন্যে যারা যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কিছু করেছেন আজ পর্যন্ত? কিছুই করেনি।

 

মান্না বলেন, আপনার আগের অর্থমন্ত্রী (আবুল মাল আবদুল মুহিত) বলেছেন, সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ওটা তো বাদামের খোসার মতো। ওই বাদামের খোসার একটু পরিমাণ জায়গার জন্যে বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছর সাজা দিয়েছেন। উনি (খালেদা জিয়া) টাকাটা চুরি করেছেন? ওই টাকা এক ব্যাংকে রাখার কথা সেটা আরেক ব্যাংকে আছে। বলতে পারেন যে, উনি একটা ইরেগুলারিটি করেছেন। সেই ২ কোটি টাকা ফুলে ফেঁপে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। উনার যদি ১০ বছর সাজা হয়, তাহলে ৮৬ কোটি টাকা চাওয়ার জন্যে কয় বছর সাজা হবে? সেই সাজার ব্যবস্থা করেননি আপনি (প্রধানমন্ত্রী)। জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ঘুষ চাওয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা ছিলো। কোনো মামলার ধারে-কাছেই যাচ্ছেন না। ওদেরকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন? ওরা তো ছাত্র লীগের নেতা আছে, ডাকসুরও নেতা আছে, ওটা কী ছেড়েছে তারা। হাই কমান্ড ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছন- বাবা তুমি ছাত্র লীগের পদ ছাড়ো, ডাকুস ছাড়া যাবে না, ডাকুস ধরে রাখো ওটা বড় কষ্টে অর্জন করেছি।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করা হয়েছিলো, কয়েকটি মিনিটের মধ্যে পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হয়েছে এজন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগেনি। বাকশাল বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের সহযোগিতা করেছে। এখন আবার অঘোষিত বাকশাল অলমোস্ট হয়ে গেছে। আমি বলতে চাই, এসব করে কোনো লাভ হবে না। এই স্বৈরাচার দিয়ে গণমানুষের উন্নয়ন হবে না। জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে এই স্বৈরাচার হটানো যাবে না। পুরো জাতির গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক, বামপন্থি শক্তি সকলে মিলে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে এদের বিদায় করতে হবে সকলকে এক হয়ে রাজপথে নামতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে বর্তমানে বিদেশীদের ‘পাপেট’ সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রহীনতা- এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বে পলিটিক্যাল চেইজেন্স যেগুলো ঘটছে তার মধ্যে বাংলাদেশে পড়ে গেছে। আজকের সরকার ওই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির সঙ্গে যোগসাজস করে বাংলাদেশের জনগনের অধিকারকে হরণ করে দিচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে তারা সম্প‚র্ণভাবে পাপেট সরকারে পরিণত হেেয়্ছ। যারা আজকে বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, যারা আজকে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা আজকে তাদের একটা ক্রীড়ানক হয়ে এই সরকার ক্ষমতায় আছে ।

ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় দেখতে পারছেন না। সক্রিয় কোন দিক দিয়ে না। আমরা আমাদের কাজগুলো করছি, আমরা দল ও সংগঠনকে সংগঠিত করে আমরা যারা স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে নেমে আসতে পারি তার জন্য কাজ করছি। আমি জানি, অন্যান্য দলগুলো প্রত্যেকে তাদের নিজেদের কাজগুলো করছেন এবং সংগঠন শক্তিশালী করছেন।

 

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, তাকে যদি মুক্ত করতে হয়, সুচিকিৎসার জন্যে যদি বাইরে আনতে হয় তাহলেও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বের করে নিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটা জিনিসেরই সময় আছে, ধাপ আছে। আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের জনগন কোনোদিনই এরকম ফ্যাসিস্ট সরকারকে মেনে নেয়নি, স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি, জনগন ঐক্যবদ্ধ হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তারা করবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জনসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, মোমিনুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বক্তব্য রাখেন।