দেশের প্রথম দশ কেরাতের হাফেজ হলেন মুস্তাজীবুর রহমান আযহারী

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০৮ ২০২০, ১৯:১৪

ইলিয়াস সারোয়ার:

দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পর গতকাল “একত্রে দশ কেরাতের হিফযের খতম” সম্পন্ন করলেন হাফেজ মাওলানা মুস্তাজীবুর রহমান আল আযহারী। মিশরের প্রসিদ্ধ ও অন্যতম কুরআন ও ইলমুল কেরাতের প্রতিষ্ঠান মারকায মাআসরাভী কায়রোর প্রধান শাখায় তিনি এই হিফজ সম্পন্ন করেন মারকাযেরই অন্যতম উস্তাদ শেইখ রমাদ্বান বিন ইসমাইল আশশারক্বাভী আলমাসরীর হাতে।

এর আগে বাংলাদেশের কেউ একত্রে পূর্ণ দশ কেরাতের খতম সম্পন্ন করেছেন বলে এখনও জানা যায়নি। সে হিসেবে তিনিই সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম দশ কেরাতের হাফেজ।

খতম সম্পন্ন করা উপলক্ষে কোভিড ১৯ পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক গতকাল জুম অ্যাপের মাধ্যমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে তার পরিবার, পরিজন এবং কাছের অনেক পরিচিতজনের অংশগ্রহণ খতম অনুষ্ঠানটিকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। তবে অনেকেই নেটজনিত সমস্যার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। উপস্থিত অনুপস্থিত সকলের প্রতি শুকরিয়া, মোবারকবাদ ও দোয়া জানান মুহাম্মাদ মুস্তাজীবুর রহমান আযহারী।

বিশেষভাবে তিনি তার এই খতমের শেইখ এবং মারকায মাআসরাভী কায়রো প্রধান শাখাসহ অন্যান্য সকল মাশায়েখ, প্রতিষ্ঠান, মা বাবা ভাই-বোন,আত্মীয় স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ও সাথী-সঙ্গীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “যাদের উসিলা, মেহনত, দুআ ও সামান্যতম কোনও সহায়তা ও পরামর্শের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ইলমে দ্বীন আহরণের সুযোগ লাভ করেছি, করছি তাদের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ ও ‌ঋণী। এ ঋণ কখনো শোধ করার নয়। আল্লাহ পাকের নিকট সর্বদা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাদের সবার দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বক্ষেত্রে অফুরান কল্যাণ দান করেন এবং উভয় জাহানে তাদেরকে রহমত ও বরকতের চাদরে ঢেকে রাখেন।
আমীন।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নেত্রকোনা সদর এলাকার কাইলাটি চরপাড়া (হাজী বাড়ি) গ্রামে মুহাম্মদ মুস্তাজীবুর রহমানের জন্ম। ১১ বছর বয়সে নিজ বড় ভাই শায়েখ খলিলুর রহমানের কাছে হিফজ সম্পন্ন করে বেফাক পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ইবতিদাইয়্যায় ১৫তম, মুতাওয়াসসিতায় ৩য় ও ঢাকার ফরিদাবাদ জামিয়া থেকে দাওরায়ে হাদীসে ১৭তম মেধাতালিকার স্থান লাভ করেন। এরপর উলূমুল হাদীস বিভাগে দুই বছর অধ্যয়নের পর ২০১৫ সালে মিশরে গমন করেন।
মিশরের বিশ্ববিখ্যাত আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উসুলুদ্দীন বা ধর্মতত্ত্ব বিভাগের উলূমুল কুর‌আন ওয়াত তাফসীর বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। দীর্ঘ চার বছরে কৃতিত্বের সঙ্গে অনার্স সমাপ্ত করার পাশাপাশি মিশরের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও বড়বড় শেইখদের বিশেষ সান্নিধ্য ও তত্বাবধানে ইলমুল কেরাতের ৭টি বিষয়ে (১. ইলমুল কেরাত, রেওয়ায়েত, তুরুক, ইসনাদ, উসুল, ফুরুশের আদ্যোপান্ত ২. ইলমুত তাজভীদ ৩. ইলমুল ওয়াকফ ওয়াল ইবতিদা ৪. ইলমু রাসমিল কুরানি ওয়াদ দ্বাবত ৫. ইলমূল ফাওয়াসেল ও আদ্দিল আয়াত ৬. ইলমুল খাতমি ওয়াল ইবতিদা এবং ইলমুত তাওজীহাত।) ডিপ্লোমা অর্জন করেন‌ এবং পৃথকভাবে দশ কেরাতের (সুগরা ও কুবরা) হিফজের উপর সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন। পাশাপাশি কেরাতে শাযযাহগুলোরও ইজাযা লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল একত্রে দশ কেরাতের (সুগরা) খতম সম্পন্ন করেন মুহাম্মদ মুস্তাজীবুর রহমান আযহারী।