দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প তালিকায় ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তির নাম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০৮ ২০২০, ১৬:৩৬

রোকন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে দরিদ্রদের নামের তালিকায় টাকার বিনিময়ে ধনীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ইউনিয়নে প্রকল্পের গরু বিতরণ করা হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ও সচ্ছল পরিবার গরু পেয়েছেন। প্রত্যেক উপকারভোগীকে ৪০ হাজার টাকার গরু দেওয়ার কথা থাকলেও ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকার ছোট ও রোগাক্রান্ত গরু দেওয়া হয়েছে। দুই-একজনকে গরুর সঙ্গে উদ্বৃত্ত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব গরু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন সুবিধাভোগীরা। কারও গরু মারা গেছে, কেউ গরু বিক্রি করেছেন, আবার অনেকে গরুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের অধীনে কুড়িগ্রামে গরু বিতরণ প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বগুড়ার বেসরকারি সংস্থা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। গরু বিতরণের শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নামে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

নীতিমালা অনুযায়ী উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সদস্য সচিব ও সংশ্নিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সদস্য করে কমিটি করার কথা। কিন্তু সংশ্নিষ্ট চেয়ারম্যানরা কিছুই জানেন না। অভিযোগ আছে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বাদ দিয়ে একটি মহল টাকার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা প্রণয়ন করে গরু ক্রয় ও বিতরণ করছেন। বাস্তুভিটা ও কৃষি জমি নেই এমন ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও অনেক সচ্ছল ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গরু দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরডিএর তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও চিলমারী উপজেলায় দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১২ হাজার ৪১০ জন সুবিধাভোগী গরু পাবেন। এর মধ্যে উলিপুরে পাবেন ৪ হাজার ১১০ জন। এসব সুবিধাভোগীকে গরু লালন-পালনের জন্য ওষুধ বাবদ এককালীন ৩৫০ টাকা এবং প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে (৬ মাস) দেওয়ার কথা। ইতোমধ্যে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ৩১৫ সুবিধাভোগীর মধ্যে গরু বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপজেলায় ১ হাজার ৩২৬ জন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, থেতরাই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী আফরোজা বেগম ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে, ২ নং রামনিয়াসা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম, ছেলে সাইফুল ইসলাম, একই বাড়িতে থাকেন মেম্বারের বোনের স্বামী হায়দার আলী, বড় ভাই আয়ুব আলী পেয়েছেন প্রকল্পের গরু। এছাড়া সুবিধাভোগী ৫নং ওয়ার্ডের সচ্ছল দুই ভাই শামসুল আলম ও সাইদুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ডের মিন্টু মিয়া, ৬নং ওয়ার্ডের দোলেনা বেগম, ৮নং ওয়ার্ডের লায়লা বেগম। ১নং ওয়ার্ডের গোড়াইপিয়ার গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি কায়সার আলীও গরু পেয়েছেন।

থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, আমার ইউনিয়নে গরু বিতরণ করা হয়েছে অথচ আমি জানলাম না। যদিও আমি কমিটির সদস্য। যারা গরু পেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই সচ্ছল ও ধনী মানুষ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ প্রধান বলেন, গরু কেনায় সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এজন্য আগামীতে ডিজিটাল স্কেল দিয়ে গরু কেনার কথা ভাবা হচ্ছে।

প্রকল্পের উপপরিচালক শেখ মেহেদী মোহাম্মদ জানান, গরুর দাম নিয়ে সুবিধাভোগীদের অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ইউএনও নূরে-এ-জান্নাত রুমি বলেন, তালিকা কীভাবে হয়েছে সেটা আমি জানি না, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরডিএ জানে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, সরকারের এ প্রকল্প দারিদ্র্য হ্রাসকরণের জন্য। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হলে মেনে নেওয়া হবে না।