দক্ষিণ এশিয়ার নেতা শেখ হাসিনা
একুশে জার্নাল
জানুয়ারি ০২ ২০১৯, ১২:৩৪
দীপঙ্কর দাশগুপ্ত
আজ ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা যে জয়ী হচ্ছেন, সেটা নিয়ে কোনো সংশয়ই নেই। দেশীয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর বিভিন্ন সমীক্ষা-সংগঠন, সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ তো আগেই এ বিষয়ে আওয়ামী লীগকে কয়েক যোজন এগিয়ে রেখেছিল। মার্কিন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারও (আরডিসি) জানিয়ে দিয়েছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৪৮ আসনে হেসেখেলে জিতে যাবে মহাজোট। উল্লেখ্য, এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই কিন্তু গত সপ্তাহে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক-সংক্রান্ত ইস্যুতে বিরূপ মন্তব্য করেছিল। বাংলাদেশের সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আর সেইসঙ্গেই শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং দলনেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে পরের ধাপের জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হতে শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বেশিরভাগ জায়গায়ই যখন সংখ্যালঘু নিরাপত্তার বিষয়টি ইদানীংকালে বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা শেখ হাসিনা নিতে পারেন কি-না, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। প্রশ্নটি এই কারণেই উঠছে যে, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই ক্ষেত্রটিতে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা খুইয়ে বসেছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তথা সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আরও বেশি করে এই অবিশ্বাস ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা এক বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের যাবতীয় চাপ উপেক্ষা করে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে আশ্রয় শিবিরে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগলে রেখেছেন। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রকাশ করতে গিয়েও তিনি বলেছেন, এবার জিতে এলে দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য একটি কমিশন বানাবেন তিনি। উল্লেখ্য, এই সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন দেশের সংখ্যালঘু সমাজের মানুষ। ফলে সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার নেত্রী হয়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে শেখ হাসিনার সামনে। আর তার ক্ষেত্রও অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে রয়েছে তার সামনে।
গোটা পরিপ্রেক্ষিত খতিয়ে দেখলে এমন সম্ভাবনাও উঠে আসতে পারে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা যায় কি-না। কিংবা এ বিষয়টি নিয়ে এই অঞ্চলে কোনো সম্মেলন করা যায় কি-না! যেখানে সব ক’টি দেশ সমতার ভিত্তিতে এক বা একাধিক কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। এই উদ্যোগ নেওয়ার পক্ষে এ মুহূর্তে উপমহাদেশে শেখ হাসিনাই যে সবচেয়ে উপযুক্ত তা নিয়ে দ্বিধার কোনো কারণ থাকতে পারে না। বিশেষ করে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সমস্যা তিনি যেভাবে সামলেছেন, এখনও সামলে চলেছেন এবং তাদের এখন পর্যন্ত সেভাবে সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হয়নি, এই বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, গোটা বিশ্বের সম্মান আদায় করে নিতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। সে কারণেই উঠছে সেই সম্ভাবনার কথা। এমনকি মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির ওপর যে ভরসা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ করেছিলেন, তাও শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি।
সম্প্রতি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার সুনিশ্চিত না করলে যে দীর্ঘমেয়াদি অসন্তোষ দানা বাঁধতে পারে, তা বোঝাতে গিয়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের উদাহরণ টেনেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বলিউডের অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত সপ্তাহের শেষ দিকে ইমরান বলেছেন, দুর্বলের প্রতি ন্যায়বিচার না করলে, তা তাদের বিদ্রোহের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশের জন্মের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের অধিকার দেওয়া হয়নি, সেটাই বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের অংশে পড়া বর্তমান বাংলাদেশ শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল ধারাবাহিকভাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে নানাভাবে বঞ্চিত করেছে পাকিস্তানের শাসকরা। এমনকি মাতৃভাষার অধিকারের জন্যও বাঙালিকে রক্ত দিতে হয়েছে।
সেই অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের পরই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। রাজনৈতিক পর্যালোচকরা মনে করছেন, প্রায় সেই পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা!
লেখকঃ ভারতীয় সাংবাদিক
সৌজন্যেঃ দৈনিক সমকাল