ত্রুটিপূর্ণ আক্বিদা নিয়ে ঘরে মৃত্যুর চেয়ে সহিহ আক্বিদা নিয়ে মসজিদে মৃত্যু উত্তম

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৭ ২০২০, ২২:৪৬

।। আব্দুল কাদির আল মাহদি ।।

আজ সমাজের কিছু লোক মৃত মানুষের জানাযা থেকে পলায়ন করে বেড়াচ্ছে। মানুষের সাধারণ রোগ-বালাই হলেই এক শ্রেনীর লোক ভিন্ন চোখে তাকাচ্ছে। কারণ কী? কারণ হচ্ছে করোনা আতঙ্ক।

কেন আমি একজন রোগাক্রান্ত মানুষকে ঘৃণা করবো? কেন এই সঙ্কটময় সময়ে রোগাক্রান্ত লোক থেকে পালাবো? কেন নিজের নিকট আত্মীয়ের জানাযায় শরিক হতে ভয় পাবো! কেন নিজের মা, বাবা, ভাই, বোন কারও সামান্য জ্বর, কাশি হলে করোনা মনে করে রাস্তায় ফেলে আসবো? কেন করোনায় মৃত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট এলাকায় কবর দিতে অস্বীকার করবো? কেন করোনার জন্য অস্থায়ি হাসপাতাল স্থাপনে বাঁধা প্রদান করবো? এ জাতীয় ঘটনা সম্বলিত নিউজ পত্রিকা, সোশাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত কেন পড়তে হচ্ছে আমাদের?

নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমার মানবতাবোধ আজ কোথায় দাঁড়িয়েছে? আমি কি আমার ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি? আমার মোরালিটি বা নৈতিকতা কোথায়?

রাসুলুল্লাহ (সা.) কি বলেননি, একজন মুমিনের প্রতি অপর মুমিনের ছয়টি হক রয়েছে। জানেন কি সেগুলো? ছয়টি হকের অন্যতম দুটি হক্ব হলো- অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা। কেউ মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হওয়া।

حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ: إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْهُ، وإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ، وإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وإِذَا مَاتَ فَاتْبَعْهُ.( رَوَاهُ مُسْلِمٌ.)

এরকম পরিস্থিতি বিশ্বে আজ কি প্রথম? বিশ্বে কোথাও কি আর মহামারী দেখা যায়নি?‏ এর সলিউশন কি ইসলামে নেই?

করোনা আতঙ্ক যদি মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় তাহলে আমাদের ভিতর শারীরিক ও আধ্যাত্মিক প্রবলেম হবে। এরকম চিন্তা চেতনা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক প্রবলেমের উপসর্গ।

করোনার বাহ্যিক ক্ষতি যেমন মানুষকে শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। তেমনি এর আধ্যাত্মিক ক্ষতি হচ্ছে, একজন ঈমানদ্বারের ঈমানে আঘাত আনা।

‏করোনায় কিছু মানুষ শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও আরও কিছু মানুষ আধ্যাত্মিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এই বিপর্যয়ের নাম হচ্ছে আক্বিদা বা এক আল্লাহ তা’আলার উপর বিশ্বাস।

অথচ রাসুল (সা.) অবস্থার আলোকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে গেছেন। আমরা কি সেটুকুর উপর আমল করছি? সেটির উপর আমল করলে নিজে বেঁচে যেতাম, বেঁচে যেতো সমাজের আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ।

রাসুল (সা.) এক ফরমান হচ্ছে, যদি কোন লোক রোগাক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করার পর নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে, সে উক্ত ব্যাধিতে কখনো আক্রান্ত হবে না।

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ عَافَانِىْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ – وَ فَضَّلَنِىْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَنْ خَلَقَ تَفْضِيْلَا
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মানিবতালাকা বিহি; ওয়া ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।’

অর্থ : “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার অসংখ্য সৃষ্টির উপর আমাকে সম্মান দান করেছেন”,

স্মরণ রাখা দরকার, আমার মৃত্যু অবধারিত। কোন রোগ-বালাই মৃত্যু দিতে পারে না। এটা আক্বিদার অংশ।

‏মৃত্যুর ভয়ে আমরা করোনা পরিস্তিতির শিকার লোকদের থেকে পালাচ্ছি, তাই না? অথচ মৃত্যুর স্মরণ না হওয়া মারাত্মক ক্ষতির কারণ। সেই করোনা আমাদের মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
রাসুল (সা.) বলেন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অন্তরে ‘আল-ওয়াহন’ ভরে দিবেন। এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আল-ওয়াহন’ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুর প্রতি অনাগ্রহ। (সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ৪২৯৭

ليقذفن الله في قلوبكم الوهن، فقال قائل: يارسول الله وما الوهن؟ قال: ((حب الدنيا وكراهية الموت))

‏এসবের প্রতিষেধক হচ্ছে মানুষকে যতটুকু সম্ভব আল্লাহমুখি করা। ইসলামি পরিবেশ থেকে দূরে থাকার কারণে মানুষ আরও বিভ্রান্ত হচ্ছে। করোনা লকডাউনের কারণে মসজিদ বা ইসলামি
মজলিসগুলো বন্ধ। এতে করে মানুষের ভিতর গলত আক্বিদা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। করোনাই মৃত্যু ঘটায়। কিছু মানুষের ভিতর এ বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে।

এমন পরিস্তিতিতে সচেতনতা বজায় রেখে মানুষকে মসজিদমুখি করাই ভালো। এতে কিছু বাহ্যিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও অভ্যন্তরীণ ভালোর দিক নিহিত আছে।

ভ্রান্ত আক্বিদা নিয়ে ঘরে মৃত্যু বরণ থেকে সহিহ আক্বিদা নিয়ে মসজিদে মৃত্যুই ভালো। এমন মৃত্যু আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার চেষ্টায় মৃত্যু বলে গণ্য হবে। যে ধাবিত হওয়ার নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা নিজেই ঘোষণা করেন।
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ
অতএব, আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর তরফ থেকে তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী। (আল কোরআন ৫০/৫১)


লেখক: আব্দুল কাদির আল মাহদি,
বার্সেলোনা, স্পেন থেকে…