তোমার তুলনা তুমিই
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ০৭ ২০২২, ২২:০২
মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতি দীর্ঘ দেহের অধিকারী ছিলেন না। আবার খর্বকায়ও ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন মধ্যম গড়নের অধিকারী। তাঁর শির মোবারক ছিল বেশ বড়; তবে অস্বাভাবিক নয়। তাঁর মাথার কেশ মোবারক অধিক কোঁকড়ানো ছিল না। আবার সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং ঈষৎ ঢেউ খেলানো ছিল। যদি অনায়াসে সিঁথি এসে যেত তবে সিঁথি কাটতেন। অন্যথায় ইচ্ছে করে সিঁথি করতেন না। তাঁর কেশ মোবারক প্রলম্বিত হয়ে কর্ণলতি অতিক্রম করত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গায়ের রং চুনার ন্যায় ধবধবে শুভ্র ছিল না, আবার একদম শ্যমল বর্ণেরও ছিল না। বরং উজ্জ্বল ও কান্তিময় ছিল। তাঁর ললাট ছিল প্রশস্ত। ভ্রুদ্বয় বক্র, সরু ও ঘন ছিল। উভয় ভ্রু পৃথক পৃথক ছিল। একটি অপরটির সাথে সংযোজিত ছিল না। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে একটি রগ ছিল, ক্রোধ তা স্ফীত করে তুলত।
তাঁর নাসিকা মোবারক কিছুটা উঁচু ছিল এবং তাতে একটি নূর চমকাত। আকস্মিক দর্শনে তাঁকে উন্নাসিক মনে হত। তাঁর দাড়ি মোবারক ঘন ও পরিপূর্ণ ছিল। চোখের মনি ছিল কৃষ্ণ বর্ণের।
তাঁর মুখগহ্বর পরিমিত বড় ছিল। দন্তরাজি সরু ও চকচকে ছিল। সামনের দন্তরাজিতে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন কথা বলতেন, মনে হতো দন্তরাজি থেকে নূর বেরিয়ে আসছে।
তিনি উম্মাহর চিন্তায় ধ্যানে মগ্ন ও পারলৌকিক ফিকিরে বিভোর থাকতেন। ফলে তাঁর প্রশান্তি ছিল না। অধিকাংশ সময় নীরব থাকতেন। অপ্রয়োজনীয় কথা বলতেন না। তিনি বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ মুখে কথা বলতেন। অর্থবহুল শব্দে কথা বলতেন। তাঁর কথা একটি থেকে অপরটি পৃথক হত। তাতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় স্থান পেত না। আবার প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্পও হত না।
তিনি কঠোর প্রকৃতির লোক ছিলেন না। কাউকে হেয় প্রতিপন্নও করতেন না। আল্লাহর নিয়ামত যৎসামান্য হলেও বিশাল মনে করতেন। এর কোনোটিরই নিন্দা বর্ণনা করতেন না। তবে খাদ্যদ্রব্যের নিন্দা কিংবা প্রশংসা কোনোটাই করতেন না।
দুনিয়া বা পার্থিব বিষয় তাঁকে ক্রোধান্বিত করতে পারত না। অবশ্য কেউ দ্বীনি বিষয় এবং সত্যের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করলে প্রতিশোধ গ্রহণ ব্যতীত কোন কিছুই তাঁর ক্রোধ প্রশমিত করতে পারত না। ব্যক্তিগত কারণে রাগান্বিতও হতেন না এবং প্রতিশোধও গ্রহণ করতেন না। কারো প্রতি যখন কোন কারণে ইঙ্গিত করতেন তখন পূর্ণ হাতে ইঙ্গিত করতেন। কোন বিষয়ে আশ্চর্যান্বিত হলে হাত উল্টে দিতেন। কথা বলার সময় হাত নাড়াতেন। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ডান হাতের তালুতে আঘাত করতেন।
কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার প্রতি তাকাতেন না। আনন্দিত হলে লজ্জায় চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে ফেলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় মৃদু হাসতেন। হাসির সময় তাঁর দাঁত মোবারক শিলা দানার মত চমকাত।
বক্ষ থেকে নাভি পর্যন্ত পশমের সরু রেখা ছিল। তাঁর গ্রীভা মোবারক মূর্তির গ্রীভার ন্যায় মসৃণ, সুন্দর ও উজ্জ্বল ছিল। তাঁর দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরিমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। মজবুত ও শক্তিশালী দেহের অধিকারী ছিলেন। পেট ও বক্ষ সমান ছিল। গ্রন্থির হাড়সমূহ সবল ও মোটা ছিল। দেহের অনাবৃত অংশ অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল।
তাঁর দেহ মোবারক অত্যধিক মোটা ছিল না। চেহারা মুবারক একদম গোলাকার ছিল না। তাঁর গায়ের রং সাদা-লাল মিশ্রিত দুধে-আলতা ছিল। চক্ষুদ্বয় ছিল কৃষ্ণকালো। পলক দীর্ঘ ছিল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়ার হাড় বেশ মোটা ছিল। দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থানও বেশ মোটা ও মাংসল ছিল।
দেহ মোবারকে অস্বাভাবিক লোম ছিল না। বক্ষদেশ হতে নাভী পর্যন্ত লোমের একটি সরু রেখা ছিল। এ ছাড়া বক্ষদেশের দু’দিক ও পেট লোমশুন্য ছিল। তবে উভয় বাহু, কাঁধ ও বক্ষদেশের উপরিভাগে লোম ছিল।
হাতের কবজি দীর্ঘ ও প্রশস্ত ছিল। হাত ও পাদ্বয় মাংসল ছিল। হাত-পায়ের আঙ্গুল পরিমিত দীর্ঘ ছিল। পায়ের তলদেশ বেশ গভীর ছিল। পা ছিল মসৃণ। ফলে সহসাই তা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ত।
যখন হাঁটতেন সজোরে পা উঠাতেন। হাঁটার সময় মনে হত, কোনো নিম্নভূমিতে অবতরণ করছেন। ভূমিতে পা আস্তে ফেলতেন, জোরে নয়। দ্রুত চলতেন। তাঁর পদক্ষেপ ছিল বড় বড়।
যখন কারো দিকে তাকাতেন তখন স্বশরীরে তার প্রতি মনোনিবেশ করতেন। শুধু মুখ ফিরিয়ে কথা বলতেন না। তার দু’কাধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত ছিল। তিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্ত্বাগতভাবে মহান ছিলেন। আর মানুষের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাঁর চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ছিল। তাঁর দৃষ্টি অধিকাংশ সময় ভূমির দিকে থাকত।
লোকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাধিক দানশীল। সবচেয়ে সত্যবাদী। অতি বিনয়ী। সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। হঠাৎ দর্শনে কেউ ভীত হয়ে পড়ত। কারণ তিনি অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। অবশ্য কেউ তাঁর সাথে উঠাবসা করলে তখন তাঁকে প্রিয়তম ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হতো। তাঁর বাহ্যিক সৌন্দর্যের বর্ণনাকারী পরিশেষে বলতে বাধ্য হত, আমি পূর্বে বা পরে তাঁর মত সুন্দর মানুষ আর কাউকে দেখিনি।
وَأَحسَنُ مِنكَ لَم تَرَ قَطُّ عَيني وَأَجمَلُ مِنكَ لَم تَلِدِ النِساءُ
خُلِقتَ مُبَرَّءً مِن كُلِّ عَيبٍ كَأَنَّكَ قَد خُلِقتَ كَما تَشاءُ