তেঁতুলিয়ায় ভিক্ষুকদের দুর্দিন: ব্যহত হচ্ছে ভিক্ষুক পুনর্বাসন 

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ০৩ ২০২০, ১৬:৫০

এস কে দোয়েল,পঞ্চগড় প্রতিনিধি: আনুষ্ঠানিকভাবে তেঁতুলিয়া উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও পূর্ণতা পাচ্ছে না ভিক্ষুকমুক্ত প্রকল্পের পুনর্বাসন ব্যবস্থা। ঘোষণার শুরুতেই যেন হোচট। এতে করে না হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ আর না হচ্ছে ভিক্ষুক পুনর্বাসন। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে নানারকম আশ্বাস থাকলেও তা পাচ্ছে না বলে নানান অভিযোগ তেঁতুলিয়ার ভিক্ষুকদের। শুধু মাত্র কয়েক কেজি চাল, আটাসহ ভোগ্য সামগ্র বিতরণ করে শপথ করানো হয়েছে ভিক্ষা না করার। প্রচার মাইকিংও করা হয়েছে তাদের ভিক্ষা না দেয়ার। এতে করে ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় জড়িত অসহায় মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে।

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১২৭ জন ভিক্ষুককে ভিক্ষা না করার জন্য শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথ পাঠের সময় প্রাথমিকভাবে শীতবস্ত্র, চাল, ডাল, তেল, লবন ও চিনি ও কয়েকজনকে ছাগল ও ভ্যানগাড়ী বিতরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য সক্ষমতা অনুযায়ী ভ্যান গাড়ি, সেলাই মেশিন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়ার কথা জানানো হয়।

কিন্তু প্রায় ২মাস পেরিয়ে যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে তাদের মাঝে নগদ কোন আর্থিক সহযোগিতা পৌছেনি এরকম অভিযোগ এখানকার সকল ভিক্ষুকদের। অর্থের জোগান না থাকায় দিনকার রুজি-রোজগার করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে দিন এসব ভিক্ষাবৃত্তি পেশার অবহেলিত অসহায় মানুষগুলোর। ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা ঘোষণায় তারা বাধ্য হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তাদের ভিক্ষা দিচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ নানান সচেতন মানুষরা। উল্টো নানান প্রশ্নবাণে দগ্ধ করছেন এমনই অভিযোগ ভিক্ষুকদের।

সরেজমিনে ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় জড়িত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জাহিদুল ইসলাম জানান, আমাকে একটি ব্যবসা চালানোর পদ্ধতির একটি ভ্যানগাড়ী দেয়া হয়েছে। আমি তো চোখে দেখি না। কিভাবে ব্যবসা করবো। তাছাড়া কোন অর্থ সহযোগিতা করা হয়নি। আর ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা ঘোষণা করায় কেউ আমাদের ভিক্ষাও দিচ্ছে না। উল্টো কেউ কেউ আমাদের বলছে, আমাদের নাকি সরকার থেকে আড়াই লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তাহলে ভিক্ষা করছি কেন?

উপজেলার গুয়াবাড়ী গ্রামের জয়গুন, ডাঙ্গাপাড়ার মনোয়ারা, আমেনা, ময়নাকুড়ির আব্দুল হামিদ, সফেদাসহ বেশ কয়েকজন ভিক্ষুক জানান, আমাদের শুধু চাল, আটাসহ খাওয়ার মতো কিছু দিছে। নগদ কোন অর্থ পাইনি। ভিক্ষাও করতেও নিষেধ। কী করবো এখন, ভিক্ষা না করলে খামু কি। এদের মধ্যে একজন জানান, আমাকে একটি ছাগল কিনে দেওয়া হয়েছে। কোন অর্থ সহযোগিতা দেয়া হয়নি। এখন এই ছাগল কতদিনে বড় হবে, কত দিনে এটা দিয়ে স্বাবলম্বী হব। প্রতিদিন তো তিন বেলা খেতে হয়। এখন কী করবো। তাই আগের পেশাতেই জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে নানানজনের নানান কটুকথা শুনতে হচ্ছে।

দর্জিপাড়া গ্রামের জুব্বার পাগলা জানান, কিছুই পাইনি। শুধু কয়েকদিনের খাবার ছাড়া। কীভাবে চলবো। ভিক্ষা করতে না করায় মানুষজন এখন আর ভিক্ষা দিতে চায় না। চলবো কীভাবে? এরকম অভিযোগ এখানকার সব ভিক্ষুকদের।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুল হক বলেন, আসলে ভিক্ষাবৃত্তি মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল নয়, একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে কর্মময় জীবনের মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে হবে, কর্মময় জীবনেই বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়ার জন্য দৃঢ় মনোবল গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কাউকে ব্যবসা করার জন্য ভ্যান গাড়ি দিয়েছি। মুজিববর্ষে সক্ষমতা অনুযায়ী সেভাবে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কারো ঘর না থাকলে ঘর করে দেয়া, জমি না থাকলে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।