তাকবিরে তাশরিক: যে তাকবিরে মুখরিত বিশ্ব, পড়ার নিয়ম ও উদ্ভাবক

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৯ ২০২১, ১৬:০১

বিশ্ব মুসলমানের সবচেয়ে বড় মিলনস্থল হজ্ব। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হজের মূল ও দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হয়েছে আজ থেকে। আরাফা থেকে মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হজের দৃশ্যমান কাজ। করোনাকালীন সময়ে সীমিত আকারে পালিত হলেও হজ নিয়ে বিশ্ব মুসলমানদের উচ্ছাসের শেষ নেই।

হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাকবিরে তাশরিক ও তালবিয়া। যে তাকবিরের মাধ্যমে হজের সাথে মিশে যায় পুরো বিশ্ব। সারা পৃথিবীর মুসলমানরা তাকবিরে তাশরিকের মাধ্যমে হাজীদের সাথে মিশে থাকে যেন।

তাকবিরে তাশরিকের আওয়াজে মুখরিত হজের স্থান মক্কা, মিনা, আরাফা, মুজদালিফাসহ পুরো দুনিয়া। আরব বিশ্বসহ অনেক দেশেই জিলহজ মাসের শুরু থেকেই বাড়ির সামনে কিংবা শফিংমলে তাকবিরে তাশরিকের সাউন্ড বাজছে অবিরাম।

মহান আল্লাহ তাআলা হজের মাসে মুমিন মুসলমানের জন্য তাকবিরে তাশরিক ও তালবিয়া পাঠকে আবশ্যক করেছেন। আইয়ামে তাশরিকে ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১ বার পড়া ওয়াজিব। আর হজে অংশগ্রহণকারীদের জন্য তালবিয়া ও তাকবির দুটিই পড়া আবশ্যক।

তাকবিরে তাশরিক 

اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَ اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر وَ للهِ الْحَمْد

উচ্চারণ : ’আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’

পড়ার সময় ও নিয়ম

১৪৪২ হিজরির তাকবিরে তাশরিক ৯ জিলহজ মোতাবেক ২০ জুলাই (মঙ্গলবার) ফজর থেকে ১৩ জিলহজ মোতাবেক ২৫ জুলাই (শনিবার) আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজে তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।

১৮ জুলাই সোমবার থেকে শুরু হয়েছে হজের মূল কার্যক্রম। হজপালনকারীরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের উদ্দেশ্যে মিনামুখী হয়ে আজ তারা মিনায় অবস্থান করছেন। তালবিয়ার লাব্বাইক ধ্বনি ও তাকবিরের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হবে পুরো মক্কা নগরী, মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফা।

বাংলা ভাষায়ও সম্প্রচারিত হবে এ বছরের হজের খুতবা সারা দুনিয়ার মানুষ হজের মাস জিলহজের ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ তাকবির ও তালবিয়ায় মুখরিত রাখবে পুরো দুনিয়া। ঘোষণা করবে আল্লাহর বড়ত্ব। আল্লাহকে জানাবেন তার স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার কথা।

তাকবিরে তাশরিকের উদ্ভাবক ও মহানবী (স.) এর তাকবিরে তাশরিকের আমল 

হজের সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তালবিয়া ও তাকবির দুটোই পড়েছেন। বদরুদ্দিন আইনী (রহ:) বলেন, যখন হযরত ইব্রাহিম (আ:) তাঁর স্বীয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানী করতে শুরু করলেন, তখন হযরত জিব্রাইল (আ:) আল্লাহর নির্দেশে বেহেস্ত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন। পরে সংশয় হচ্ছিল যে, তিনি পৃথিবীতে পৌঁছার পূর্বেই ইব্রাহিম (আ:) যবেহ কার্য সম্পন্ন করে ফেলবেন।

তখন জিব্রাইল (আ:) আকাশ থেকে উচ্চস্বরে ধ্বনী দিতে থাকেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, হযরত ইব্রাহিম (আ:) আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে, ইসমাইল (আ:) এর পরিবর্তে জিব্রাইল (আ:) একটি দুম্বা নিয়ে আসছেন, তাই তিনি স্বতঃস্ফুর্তভাবে বলে উঠলেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” পিতার বাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাইল (আ:) বলে উঠলেন “আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ” একজন ফেরেশতা আর দু’জন নবী এ তিন মহান ব্যক্তিত্বের উচ্চারিত এ আমলটুক আল্লাহর এত পছন্দ হল যে, সমগ্র মুসলমানদের জন্য তা ওয়াজিব করে দিলেন।

‘তাকবিরে তাশরিক’ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের স্বীকৃতি ও প্রশংসা ঘোষণা করা। প্রত্যেক হিজরি বছরের জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক এক বার পড়া ওয়াজিব।

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী, জামাআতে বা একাকি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর প্রত্যেকের ওপর একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। এ তাকবির প্রত্যেক ওয়াক্তে ১ বার পড়া ওয়াজিব। আর ৩ বার পড়া মোস্তাহাব। বিষয়টি খেয়াল করে যথাযথভাবে পালন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরী।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তথা মুসলিম উম্মাহকে উক্ত ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের তৌফিক আতা ফরমান। আল্লাহুম্মা আমিন।

তালবিয়া

পুরো তালবিয়াকে ৪ ভাগে (নিঃশ্বাসে) ৩ বার পাঠ করা। তালবিয়া ও তাকবির আরবিতেই পড়তে হবে-

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ

لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ

اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ

لاَ شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার উচ্চারণ

– লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক,

– লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,

– ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক,

– লা শারিকা লাকা।

তালবিয়ার অর্থ

— আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত!

— আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই।

— নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা ও সম্পদরাজি তথা নেয়ামত আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও আপনার।

— আপনার কোনো অংশীদার নেই।

হজের সব রোকনগুলোতেই উচ্চস্বরে হাজিগণ (নারীরা নিচু স্বরে) তালবিয়া পাঠ করবেন। যেসব দিন ও স্থানে তালবিয়া পাঠ করতে হবে তাহলো-

আরাফাতের ময়দানে।

মিনায়।

মুজদালিফায়।

হজ ও ওমরার এক রোকন থেকে অন্য রোকনের মধ্যবর্তী সময়ে তালবিয়া পড়া।

উঁচু স্থানে আরোহন কিংবা নিচে নামার সময় তালবিয়া পড়া।

এক কথায় হজের সফরে সার্বক্ষণিক ওঠা-বসা, ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম জেগে ওঠার পর কিংবা স্বাভাবিক চলাফেরাসহ প্রত্যেক ফরজ ও নফল নামাজের পর বেশি বেশি তালবিয়া ও তাকবির পড়া।

 

কাজী শহিদুল্লাহ ওয়াহেদ। নির্বাহি পরিচালক: দারুল ইসলাহ কারিমিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি