ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে গরীবের অক্সফোর্ড

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০১৯, ১৪:১২

মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা পায় তখন একে বলা হত “প্রাচ্যের অক্সফোর্ড”। কেন একথা বলা হত? একথার মানে কি? এর মানে কি এই ছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুনেমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ ছিল? আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। এর মানে আমি যতটা বুঝতে পেরেছি তা হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম থেকেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিশেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেসময়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না।

কালে কালে এদেশে অনেক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। যেমন রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিশেষত্ব আজ আর নেই। তাহলে আজকের বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব কি? এর উত্তরে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের “সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ” হিশেবে পরিগণিত হয়। এছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের জাতীয়তা ও রাষ্ট্র সত্তার উন্মেষ ও বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন — এইসব জাতীয় ঘটনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির মাধ্যমে ব্যায়বহুল উচ্চশিক্ষাকে মধ্যবিত্ত ও এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী তরুণ-তরুণীদের কাছে সুলভে পৌঁছে দিতে পারছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেলেমেয়েরা এখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ছুটে আসে। নাহলে এই ছেলেমেয়েদের জেলাভিত্তিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলোতে অনার্স বা মাস্টার্স পড়তে হত। একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহ ও আমেজ তারা এফর্ড করতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। কাজেই সে অর্থে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন “গরীবের অক্সফোর্ড”। অর্থাৎ গুনেমানে নয় অন্তত সুলভতার দিক থেকে।

এত কম খরচে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিতে যে উচ্চশিক্ষা দেয়া হচ্ছে সেটাই বা কম কিসে! পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষা এত সস্তা না। সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা কিনতে হয়। কাজে যোগ দিলে সেই ঋণ পাই পাই করে শোধ দিতে হয়। সব ঋণ তামাদি হলেও শিক্ষা ঋণ কখনো তামাদি হয় না। ঢাবিকে যে “প্রাচ্যের অক্সফোর্ড” ভাবতে চান, জানতে চাই ঢাবির বাজেট কত আর অক্সফোর্ডের বাজেট কত? আকাশ পাতাল তফাত। কাজেই মান এক হবে কি করে? আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রেংকিং অর্জন করতে হলে একদিকে ঢাবির বাজেট যেমন বৃদ্ধি করতে হবে, অন্যদিকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারও করতে হবে। তাহলে একটা ভাল ফল হয়তো পাওয়া যাবে।