ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
একুশে জার্নাল ডটকম
জানুয়ারি ২০ ২০২০, ২২:২৪
আজ (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমানের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা করা হয়। যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইযূম, দক্ষিণ নির্বাচন সমন্বয়কারী আব্দুল আউয়াল মজুমদার, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, শ্রমিকনেতা হারুন অর রশিদ, ছাত্রনেতা মুহা. আব্দুল জলিল, মুফতী মোস্তফা কামাল, আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম, মুহিব কাজেমী, মুফতী ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। ইশতেহার পাঠ করেন মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান। ২৯ দফা ইশতেহারে আছে-
১. সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্ষেত্রে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ
২. ভেজালমুক্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণ
৩. নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন
৪.‘ইউটিলিটি সার্ভিস’ তথা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ
৫. জনজীবনকে শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ
৬. শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা
৭. নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান
৮. গরীব-দুঃখী অসহায় ব্যক্তিদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদান
৯. যানজট নিরসনকরণ
১০. সংখ্যালঘুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণ
১১. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা
১২. সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ ও আমানত রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান
১৩. ব্যবসায়িক কর্মকা- গতিশীল ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ
১৪. মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ
১৫. ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশ
১৬. ‘ক্লিন ঢাকা গ্রীন ঢাকা’
১৭. নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ
১৮. রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ীর নিবন্ধন ফি- মওকুফ
১৯. হকারদের জন্য স্থায়ী বরাদ্দ ও ভ্রাম্যমান হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান
২০. বিশ্বের বৃহত্তম নর্দমা খ্যাত বুড়িগঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন নদীতে পরিনত করন
২১. পথিক এবং ভ্রাম্যমান মানুষের জন্য নতুন ১০০০ স্যানিটারী টয়লেট নির্মাণ করা
২২. সভা-সমাবেশ করার জন্য ২০টি মাঠ বরাদ্ধ
২৩. সু-স্বাস্থ্য রক্ষায় সুপেয় পানির প্রয়োজন পূরণে প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে
২৪. ৩০% হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো হবে
২৫. সি.এন.জি লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা
২৬. প্রতিটি থানায় ১টি করে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা
২৭. ধুলা-ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন
২৮. সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ছোট-বড় সকল রাস্তা-ঘাট, পানির লাইন, ক্যাবল লাইন, ইলেক্ট্রিক লাইন, সুয়ারেজ লাইন ও আইল্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্মত করা হবে
২৯. ক্ষুদে টোকাইদের পূনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ।
নির্বাচনী ইশতেহারে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকা আমাদের প্রিয় ও গর্বের শহর। দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর। ৪৯ বছরের মধ্যে ঢাকা সিটিতে অনেক চেয়ারম্যান, প্রশাসক ও মেয়রগণ আসীন ছিলেন। বিভিন্ন উন্নয়ন ও কাম্যমানের নাগরিক সুবিধা প্রদানের কথা বলে ঢাকা সিটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সরকার নিয়োগ দিয়েছিলেন জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে দু’জন সরকারী কর্মকর্তাকে। নাগরিকগণ একান্ত আশাবাদী ছিলেন সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাগণ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তিতে সিটি কর্পোরেশনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। কিন্তু সে আশা দূরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্বাচিত মেয়রগণ সিটির উন্নয়নের জন্য, সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য বারংবার সিটির জনগণের সাথে মুখরোচক বহু ওয়াদা দিয়েছেন। কেউ ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ওয়াদা করেছেন, কেউবা মেগাসিটিতে উন্নীত করার কথা বলেছেন। কেউ আবার বিশ্বমানের মহানগরী গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কেউ আধুনিক ডিজিটাল মহানগরী গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
বিগত মেয়রগণের দেয়া সকল ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি, দেখানো সকল স্বপ্ন ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বূলিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা আজ বসবাসের অনুপোযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বের নোংরা ও পরিবেশ দূষণ সিটিগুলোর ১নং তালিকায় ঢাকা সিটির নাম উঠেছে। পরিবেশ দূষণ, যানজট, ধুলা-বালু, বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সঙ্কট, অপ্রতুল পানি সরবরাহ, অনেক সময় সাপ্লাইকৃত পানি মুখে নেয়া যায় না, নিত্য ব্যবহার্য কাজ-কর্মে পানি ব্যবহার করা যায় না, পানি দিয়ে দূর্গন্ধ আসে, রোগ-ব্যাধির আধিক্য, ঠিকমত গ্যাস সরবরাহ থাকে না এছাড়া জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, খাবারে মারাত্মক ভেজাল, হাইজ্যাক-ছিনতাই, মাদকদ্রব্যের অবাধ ছড়াছড়ি, জান-মালের নিরাপত্তার মারাত্মক হুমকী, শিক্ষার পরিবেশ সঙ্কট, যানজটের কারণে কোন কাজই ঠিকভাবে করা যায় না, গন্তব্যে ঠিক মত পৌঁছা যায় না।
ঢাকা সিটির এ দূরাবস্থার জন্য মূল কারণ হল- দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, অপরিকল্পিত কর্মকান্ড ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ক্ষমতাসীন দলের অশুভ প্রভাব-প্রতিপত্তি। এ কারণে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড টেকসই হয় না। সিটি কর্পোরেশন আজ একটি অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠির সিন্ডিকেটে পরিনত হয়েছে। তা না হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সিটির এ করুন দশা হতে পারে না। এ সিন্ডিকেটের কারনেই ঢাকা সিটি আজ বিশ্বের অন্যতম মানব বসবাসের অনুপযোগী সিটিতে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য সিটির তুলনায় ঢাকা সিটির পরিবেশ দুষণের সূচক অনেক উর্ধে। ঐতিহ্যবাহী-গৌরবময় ঢাকা আজ অনেকটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব-দৌরাত্ম থেকে ঢাকা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসোপযোগী শান্তির নগরীতে পরিনত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের।
মেয়র ও কাউন্সিলরগনের সততা, যোগ্যতা ও তাঁদের গৃহীত নীতিসমূহ এবং সরকারের সহযোগীতা যত বেশী হবে জনগনের কল্যাণ ও নগরীর উন্নয়নও তত উন্নত হবে। পক্ষান্তরে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যদি সৎ ও যোগ্য না হন বরং তারা যদি দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের গডফাদার হন এবং সরকারের সহযোগীতা কাঙ্খিতমানের না থাকে, তাহলে প্রার্থীদের নির্বাচনী ওয়াদা ফাঁকাবুলি ও ধোকাবাজিতে পরিণত হবে। তাঁদের থেকে নাগরিকের প্রকৃত কোনো কল্যাণ ও নগর উন্নয়নের কোন আশাই করা যায় না। এ বাস্তবতা সামনে রেখেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষে আমি ২৯ দফা কর্মসূচী সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং সকলের সহযোগীতা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে জনদুর্ভোগ মুক্ত একটি উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শান্তির নগরী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করব, ইনশাআল্লাহ্।