ডেঙ্গুতে অর্ধশতাধিক মৃত্যু, অগণিত ধর্ষণ-হত্যা সরকারের অযোগ্যতার নগ্ন রূপ: মুফতী ফয়জুল করীম

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৩ ২০১৯, ১১:২৫

ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ পর্যন্ত সরকার কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি নিজেদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাও প্রকাশ করছে না তারা। বেসরকারি ও সরকারি তথ্যের মাঝে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশ যখন ডেঙ্গুর প্রকোপে ভুগছে, তখন কলকাতা শহরে ডেঙ্গু গত কয়েক বছর ধরেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা। ভারতের মেট্রোরেল দেখে বাংলাদেশের মানুষকেও সেই সেবা প্রদানের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারলে তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সরকার কেন মরণব্যাধি ডেঙ্গু দমনে উদ্যোগী হচ্ছে না তা আমাদের বুঝে আসে না।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ৫৩ জনের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না সরকার। দেশের বিচারব্যবস্থার বেহাল দশার সুযোগে গুজব ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডও বেড়ে চলেছে জ্যামিতিক হারে। নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে রূপ নিয়েছে। দেশব্যাপী নৃশংস হত্যাকান্ড, নারী-শিশু ধর্ষণের বিভৎস রূপ সরকারের অযোগ্যতারই নগ্ন প্রকাশ।

আজ ২ আগষ্ট’১৯ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়েখে চরমোনাই)।

তিনি আরও বলেন, চিরচেনা বাংলাদেশকে আজ অচেনা এক দেশ মনে হচ্ছে। দেশের এমন কোন সরকারি ক্ষেত্র নেই, যেখানে দূর্নীতি নেই। যার চরম মাশুল গুণতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকারের প্রতি জনগণের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। গত ২৫ জুলাই মধ্যরাতে কথিত ভি.আই.পি’র প্রটোকলের বলি হতে হলো স্কুলছাত্র তিতাশকে। নৈশভোটের মাধ্যমে গঠিত সরকারের আমলাদের থেকেই এ ধরণের জনবিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড আশা করা যায়।

তিনি বলেন, আমরা ইতিপূর্বে প্রত্যক্ষ করেছি বাংলাদেশকে নিয়ে চরম মিথ্যাচার করে বিশ্বের বুকে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেও প্রিয়া সাহারা বেঁচে যাচ্ছে। ইসকন নামের হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠন ঔদ্ধত্বতা দেখিয়েও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারের আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের হিন্দুপ্রীতি এদেশের মুসলমানদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হবে। ভারতে মুসলমানরা নির্মমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, আমরা তার প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই’১৯ তারিখ ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে গণমিছিল কর্মসূচি দিয়েছিলাম। সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার ভারতের দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা সরকারকে হুশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আপনারা লেন্দুপ দর্জির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বাংলাদেশকে সিকিম বানানোর কোন পায়তারা করবেন না। তাহলে বাংলাদেশের জনগণ দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে আবারো গণআন্দোলন গড়ে তুলবে ইনশা-আল্লাহ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেন, দেশে বেকারত্ব এখন এক গভীর ও জাতীয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। আইএলওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষিত বেকার শ্রমবাজারে আসছে। যার মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ চাকরি পেলেও প্রায় ৫৫ শতাংশ বেকার থাকছে অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো চাকরি পাচ্ছে না। যা দেশের সরকারের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। এমতাবস্থায় দেশের নতুন নেতৃত্ব গড়ার কারিগর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের আধিপত্ব বিস্তারের রাজনীতি সচেতন মহলকে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। এ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া একান্ত জরুরী। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্ব তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। “উন্নয়ন, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম-ই একমাত্র সমাধান” এই প্রতিপাদ্যকে বুকে ধারণ করে সংগঠনটি দেশের ত্রি-ধারার শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মুক্তিকামী সচেতন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা এমন একটি কাফেলা গড়ে তুলতে চাই, যারা নৈতিকতার প্রশ্নে ঘুমন্ত ছাত্রসমাজের বিবেক জাগ্রত করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করবে।

সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ মুস্তাকিম বিল্লাহ-এর সঞ্চালনায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক ও চরমোনাই ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম, কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা বরকত উল্লাহ লতিফ, মাওলানা নূরুল ইসলাম আল-আমিনসহ কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আরও বক্তব্য রাখেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল করীম আকরাম, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আব্দুজ্জাহের আরেফী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আল-আমিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল জলিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক শরিফুল প্রমুখ ৷