ডিসি অফিসের ডাকে মধ্যবিত্তের চক্ষুলজ্জা: ত্রাণ যাচ্ছে মেম্বার চেয়ারম্যানের পেটে
একুশে জার্নাল
মে ১৪ ২০২০, ২১:০৯

এম.এস আরমান, নোয়াখালী: করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অর্থনীতি ও মানুষের জীবন যাত্রা আজ থমকে গেছে। মনে পড়ে যায় সেই রোহিঙ্গা চেয়ারম্যানের কথা, মায়ানমার থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে চক্ষুলজ্জার কাছে হেরে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন ত্রাণের লাইনে। করোনার প্রাদূর্ভাবে বর্তমানেও বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের ঠিক সেই অবস্থা। সেই দু:খ বুঝতে পেরেছিলেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস।
২৮ এপ্রিল নোয়াখালী জেলা প্রশাসক জনাব তন্ময় দাসের ফেসবুক আইডিতে লিখা ম্যসেজে বলা হয়েছে মধ্যবিত্ত যারা লোক লজ্জায় সাহায্য চাইতে পারেননা তারা ঠিকানা sms করুন। অন্যদের জন্য ভাতা, সহায়তা কার্ড ও ত্রান ইউনিয়ন পরিষদে। অতএব sms করলে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হচ্ছেনা, লোক সমাগমে সিরিয়ালেও দাড়াতে হচ্ছেনা ভেবে অতি উৎসাহীত হয়ে ঠিকানা মেসেজ করেছেন অনেকেই।
কেউ কেউ বলছেন এসব ভূয়া, এসব আমাদের জন্যে নয় নেতাদের জন্যে। তার পরও মধ্যবিত্তরা দেয়ালে পিট ঠেকে যাওয়ায় ঠিকানা মেসেজ করেছেন জেলা প্রশাসকের ভরসায়, মেসেজ করে কিছুদিন যেতে না যেতেই অপেক্ষিত মধ্যবিত্তরা যখন ক্লান্ত ঠিক তখনি নতুন ঘোষনা।
৮ই মে, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঘোষনা দেওয়া হয় উপজেলা UNO’র নাম্বারে ঠিকানা মেসেজ করতে। মধ্যবিত্তরা সেখানেও মেসেজ করেছেন কিছু পাওয়ার আশায়। অবশেষে যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে UNO অফিস থেকে ফোন করে নিশ্চিত করা হলো আবেদন।
মধ্যবিত্ত মহা খুশি এবার কিছু পাবো! মনে মনে স্বপ্ন একেঁ নিলো পরিবারের সবাইকে হয়ত কিছুটা খুশি করার সুযোগ পাবো। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ছোট পরিশরে নয়, বড় কিছুই হবে মধ্যবিত্তের মনের আশা। ঠিক তার পর দিনই ফোনে ডাকা হলো ইউনিয়ন পরিষদে আবেদনকারী মধ্যবিত্তকে।
বলছিলাম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষকের কথা,যেকিনা এই প্রতিবেদকের কথায় সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন DC/UNO বরাবর,
রমযানের সেহরী খেয়ে মধ্যবিত্ত অন্যদিন ১০/১১ টায় ঘুম থেকে উঠলেও সেই দিন আর ঘুমায়নি সেহরীর পর। দেশের মহামারি এতটাই অভাবী করে তুলেছে সেই মধ্যবিত্তকে যা নিম্নবিত্তকেও হারমানায়। দুই সন্তানের পিতা হাজারো লজ্জাকে ডিঙ্গিয়ে উপস্থিত হলেন ইউনিয়ন পরিষদে। অবশেষে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন সামান্য চালের জন্য UNO অফিসে অভিযোগ করা লাগে?
ভূক্তভোগী বললেন, UNO নাম্বারে সহযোগিতার জন্য মেসেজ করতে বলেছেন তাই মেসেজ করেছি।চেয়ারম্যান সাহেব মেম্বারকে ডেকে মধ্যবিত্তকে কিছু দিয়ে দিতে বললেন। ভরা মজলিশেই মেম্বার বলে উঠলেন ঐমিয়া আমি বাড়িতে বাড়িতে চাউল পাঠাইছি আপনার বাড়ি পাঠাইছিনা? মধ্যবিত্ত বল্লেন জি না মেম্বার সাহেব আমার বাড়ি কিছুই যায়নি। প্রতিউত্তরে মেম্বার বললো আপনাদের মতো বাটপারদের কারনে দেশের এই অবস্থা।
ততক্ষনে মধ্যবিত্ত বুঝতে পারলেন করোনা ভাইরাস নিজেকে যতটা অভাবীকরে তুলেছে ঠিক কিছু মানুষকেও অমানুষ করে তুলেছে।
এমন ঘটনা শুধুযে একজনের সাথে ঘটেছে বিষয়টি এমন নয়,মধ্যবিত্তদের সাথে কেমন আচরণ হয় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার লক্ষে প্রত্যেক ইউনিয়নে আবেদনকারীদের সাথে আলোচনা করে জানা যায় সকলেই ভূক্তভোগী।
দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে প্রধানমন্ত্রীর এত কঠোর নির্দেশনার পরেও DC মহোদয়ের এমন সুন্দর উদ্যোগকে যারা কুলশিত করছে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণের আত্মসম্মানে যারা আঘাত করছে আমাদের বিশ্বাস তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হবে।