ডাকসুর সিদ্ধান্ত রাজনীতি সচেতন মুসলমানদের বিরাজনৈতিকীকরণের পদক্ষেপ
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ২৮ ২০১৯, ১৯:১৭
আরজু আহমাদ
পূর্ব-বাংলার মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অন্যতম ফসল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্ণধারদের হাত ধরেই এর গোড়াপত্তন। এই আত্মপরিচয় অস্বীকার করাটা হীনমন্যতা।
অবাধ রাজনৈতিক চর্চার অধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। ফলত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উদার গণতান্ত্রিক চরিত্র বিনষ্ট করারই নামান্তর।
প্রতিবেশি ভারতে ৩৭ টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সক্রিয়। খোদ ব্রিটেনের রাণী দেশটির সাংবিধানিক ভাষ্য মতে, ‘ Defender of the Faith’ লক্ষ্য করবেন ‘Faiths’ নয় কিন্তু। ফলে খ্রিস্ট ধর্মের কেবলমাত্র একটা ধারারই তিনি ডিফেন্ডার।
আগে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ নাগরিকদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিন্বা লক্ষ্যানুসারী ধর্মীয় নামযুক্ত কিম্বা ধর্মভিত্তিক কোনও সমিতি, সংঘ করার কিম্বা এর তৎপরতায় অংশ নেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিল।
১৯৭৬ এর মে মাসে প্রণীত সেকেন্ড প্রক্লেমেশন অর্ডার নং ৩ অনুযায়ী সংবিধানের এই ৩৮ ধারা বিলোপ করা হয়। ফলে এই নিষেধাজ্ঞার সমাপ্তি ঘটে। ধর্মীয় রাজনীতি চর্চার অবাধ সুযোগ তৈরি হয়।
পরে এপেক্স কোর্ট পঞ্চম সংশোধনী রহিত করলে প্রক্লেমেশন অর্ডারগুলো বাতিল হয়ে যায়। সেই প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের জুনে সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী আনে। আর তাতে ৩৮ অনুচ্ছেদ নতুন করে প্রণয়ন করা হয় যাতে ধর্মীয় রাজনীতির সুযোগও বহাল থাকে।
সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হওয়া স্বত্ত্বেও এই সংবিধানে নাগরিকের যে অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে এর বিরুদ্ধে গিয়ে ডাকসুতে যে অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো তা বিস্ময়কর।
গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, শুধু ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনই নয় বরং কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুও এর প্রস্তাবক ছিল এবং ছাত্রদলও এই পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্ম।
এই যে ডাকসুতে তোড়জোড় করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এটাকে তারা আবার ভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করছে, তারা বলছে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ রুখতে এই পদক্ষেপ।
অথচ সংবিধানের ৩৮ ধারাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী এবং জঙ্গিবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। নতুন করে ডাকসুর এতে মাতব্বরির দরকার পড়ে না।
ফলে এই মাতব্বরি সে সব রুখতে নয়, বরং এর মূল উদ্দেশ্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক যে সচেতনতা এর মূলোৎপাটন করা। এই পদক্ষেপ বাঙালি মুসলমান সমাজকে ধর্মীয় রাজনৈতিক চর্চা ও সচেতনতা হীন করার অপপ্রয়াস এবং সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ।
এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে খোদায়ী বিধান প্রতিষ্ঠার বৈধ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং রাজনীতি সচেতন মুসলমানদের বিরাজনৈতিকীকরণের পদক্ষেপ।