জুম’আ দিনের ফজিলত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ০৭ ২০১৮, ০৫:৩৮

হাবীব আনওয়ার: বছরের সব দিনের মধ্যে আরাফাতের দিন হলো সর্বোত্তম দিন।আর সপ্তাহের দিনগুলোর ভেতর জুমার দিন হলো শ্রেষ্ঠ দিন। আল্লাহতায়ালা পুরো পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এ ছয় দিনের শেষ দিনটি ছিল জুমার দিন। এ দিনেই হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে। এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, মানুষ যে দোয়া করে,আল্লাহ তা কবুল করেন।

তাফসীরে মাআরিফুল কোরআনে মুফতী শফী (রহ.) লিখেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়! ইহুদীরা ‘ ইয়াওমুস সাবত’ তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয়, খ্রীষ্টানরা রবিবারকে। মহান রাব্বুল আলামিন এই উম্মত তাওফিক দিয়েছেন যে, তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছেন।

মূর্খতার যুগে শুক্রবারকে ‘ইয়াওমে আরবা ‘বলা হতো।আরবে কা’ব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ‘ ইয়াওমুল জুমআ’ রাখেন।এই দিনে কোরাইশদের সমাবেশ হতো এবং কা’ব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। এটা রাসুল (সা.)- এর আবির্ভাবের পাঁচশত ষাট বছর পূর্বের ঘটনা। প্রবিত্র কোরানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তারা কর এবং ক্রয়বিক্রয় বন্ধ করে দাও।এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝো। (সূরা জুমুআ: ৯)

এছাড়া জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্যা হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
১. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিনই হল সর্বোত্তম দিন যাতে সূর্য উদিত হয়। এ দিনে হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি কার হয়েছে, এবং এ দিনেই তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে।এ দিনেই তাকে বেহেশত থেকে বের করা হয়েছে।আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।(মিশকাত: )
মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, জুমার দিনটিকে হজ্জে আকবার বলা হয়। যা জুমার দিন বিহীন সত্তরটি হজ্জের চেয়েও অধিক উত্তম।হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, আল্লহর কাছে জ’মা নফল হজ্জের চেয়েও অধিক মূল্যবান। হজরত ইবনে আব্বাস রা. মারফু হাদীসে বলেছেন, জুমা হলো দারিদ্র্যের হজ্জ। (মিরকাত)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন,হুজুর ছা. বলেন, নিশ্চয় জুমা’র দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে,যাতে কোন মুসলমান বান্দা আল্লাহর কাছে কোন মঙ্গল কামনা করলে আল্লাহ তা অবশ্যই দান করেন। (বুখারী,মিশকাত)
দুআ কবুল হওয়ার সময়টি অজানা।এর কারণ হলো, যাতে মানুষ এ মুহূর্তটি লাভের আশায় সারাদিন ইবাদতে মশগুল থাকে।

তবে দুআ কবুলের সময় নিয়ে উলামাদের বিভিন্ন মত রয়েছে।তার মধ্যে থেকে নিম্নে কিছু উল্লেখ করা হলো;
১. জুমা’র দিন মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দেওয়ার সময়।২. ফজরের শুরু থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।৩. আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।৪. ইমাম মিম্বার থেকে নেমে তাকবিরে তাহরিমা বলা পর্যন্ত।৫. মুয়াজ্জিন যখন জুমার আযান দেন।৬. ইমাম মেহরাবে আহরণ হওয়ার পর থেকে নামার পূর্ব পর্যন্ত।৭. আজানের পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।৮. ইমাম খুৎবা শুরু করা থেকে নিয়ে শেষ করা পর্যন্ত।৯. দুই খুৎবার মাঝ খানে বসার সময়।১০. আসরের নামাজের পর।
এছাড়াও আরো অনেকগুলো মত পাওয়া যায় ।আল্লামা সূয়ুতী রহ. পঁয়তাল্লিশটি মত প্রকাশ করেছেন।আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এর ৫০ টি মতামত আছে।মুহিব্বে তারাবী রহ. বলেন এ সব মতামতের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধটি হযরত আবু মুসা রা. এর হাদীস।অর্থাৎ ইমাম মিম্বারে আহরণ করা থেকে শুরু করে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত।আর সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. মত।অর্থাৎ আসরের পর শেষ মুহূর্তটি।এই দুই মতের মধ্যে বায়হাকী,ইবনে আরাবী এবং কুরতবী রহ. প্রমুখ বিজ্ঞজনেরা প্রথমোক্ত মতকেই প্রধান্য দিয়েছেন।(ফয়জুল কালম: )

জুম’আ দিনের  কিছু আমল:

হজরত সালমান রা. থেকে বর্ণিত,হুজুর (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, যতদূর সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে,তেল লাগাবে অথবা নিজের ঘরে রক্ষিত সুগন্ধি ব্যবহার করবে, অতঃপর মসজিদের দিকে বের হবে।কোন দু’ব্যক্তির মাঝে ফাঁক সৃষ্টি না করে তার জন্য নির্ধারিত নামায আদায় করবে অতঃপর ইমাম খুৎবা পড়ার সময় চুপ থাকবে আল্লাহ এই জুমা থেকে পূর্ববর্তী জুমা’র মধ্যবর্তী সময়ের কৃত তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন।(বুখারী,মিশকাত)
অন্য জাগায় আছে যে ব্যক্তি জুমার নামাযের পূর্বে এই বিষয়গুলোর উপর আমল করবে সে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বদলে এক বছর নফল রোযা ও নফল নামাযের ছওয়াব পাবে।(তিরমিযি)
১. গোসল করা।
২. উত্তম কাপড় পড়া।
৩. খুশবু লাগানো।
৪.সকালে সকালে মসজিদে যাওয়া।
৫. পায়ে হেটে যাওয়া।
৬. ইমামের কাছাকাছি বসা।
৭. মনোযোগ সহকারে খুৎবা শোনা।
৮.সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
৯. হুজুর ছা.এর উপর বেশি বেশি দরুদ পড়া।
১০. গোঁফ কাটা,নখ কাটা ইত্যাদি।

জুম’আর দিনে মৃত্যুর ফজিলত:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত হুজুর (সা.) বলেন, ‘কোন মুসলমান জুমা’র দিন অথবা জুমা’র রাতে মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ পাক তাকে কবরের ফিৎনা(অর্থাৎ,কবরের প্রশ্ন এবং আযাব) থেকে বাঁচান।’ (মিশকাত:১২১)
হাদীসে আছে হুজুর ছ বলেন, ‘কেউ জুমা’র দিন মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং সে কিয়ামতের দিন শহীদের মহর নিয়ে উপস্থিত হবে।হুজুর ছা. বলেন, যে ব্যক্তি জুমা’র দিন মৃত্যুবরণ করে তার জন্য শহীদের প্রতিদান লিপিবদ্ধ করা হয় এবংকবরের শাস্তি থেকে বাঁচানো হয়।’ (মিরকাত)

জুম’আ ত্যাগকারীর ব্যাপারে হুমকি:

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,হুজুর (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুমা পরিত্যাগ করবে তাকে এমন কিতাবে মুনাফিক হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে যা কখনো মিটানো হবে না।(মিশকাত)
অন্য হাদীসে হুজুর ছা. বলেন, যে ব্যক্তি তাচ্ছিল্যভরে অথবা অবহেলা করে তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে,আল্লাহ তার অন্তরে মোহর এটে দিবেন।(তিরমিযি)

জুম’আর দিনে দরূদ পাঠের ফজিলত:

হুজুর (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমা’র দিন আসর নামাযের পরে, কারো সাথে বাক্যালাপের আগে এই দরুদ ৮০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তার ৮০ বছরের গুনাহ মাপ করে দিবেন।এবং ৮০ বছরের ইবাদতের ছাওয়াব তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করবেন।