জীবন গড়ি সীরাতের আলোয়-০৩ : প্রসঙ্গ ফুড রিভিউ
একুশে জার্নাল
ডিসেম্বর ১৯ ২০১৯, ১১:১৩

।। আরজু আহমাদ ।।
ফুড রিভিউ ব্যাপারটা এখন তুঙ্গে। এই জিনিসটা বরাবরই আমার কাছে অপছন্দের। রিভিউয়ের মধ্যে ভালো মন্দ দুটোই আসে। যে রিজিক্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই রিজিক্ব প্রসঙ্গে মন্দ বলাটা অশোভন।
রব্বের প্রকৃত গোলামির সাথে তো এসব যায় না। তাসাউফের দৃষ্টিতে দেখলে এটা আত্মশুদ্ধির অন্তরায়। বরং দেখা গেছে, এসবের মধ্য দিয়ে ইবাদাতে অনাগ্রহ তৈরি হয়।
আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ইচ্ছে হলে খেতেন নতুবা খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
এরপরও কেউ সাধলে খেতে যে ইচ্ছে হচ্ছে না, সেটা স্রেফ মুখে বলতেন। (বুখারী, মুসলিম) এতটুকুনই সমগ্র জীবনে খাবার প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মন্তব্য ছিল।
বরং মাঝেমধ্যে খাবারের প্রশংসা করতে দেখা গেছে, সেটাও এমন সব নিতান্তই সাধারণ খাবারের ব্যাপারে যেসব সুস্বাদু বলে কারো বিবেচিত হয় না।
জাবের রা. বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে রুটির সঙ্গে খাওয়ার জন্য তরকারি চান। ঘরে তখন ভিনেগার ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমে কাছে তা নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। এরপর বলেন, ‘ ভিনেগার কতই না উত্তম তরকারি! কতই না উত্তম সালন!’
ভিনেগার উপকারী কিন্তু তা তো তরকারি নয়। তবুও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঝাঝালো জিনিসটারও প্রশংসা করেছেন।
তিনি উম্মতকে শিখিয়েছেন সবর এবং বিনয়। খাদ্য তো আদতে আল্লাহর নিয়ামত৷ সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস থেকে তা আরও স্পষ্ট হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, আল্লাহ তা‘আলা সেই বান্দার উপর অবশ্যই সন্তুষ্ট হন যে বান্দা কোনও খাবার বা পানীয় পান করে এবং এর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে। ( মুসলিম, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)
ফলত এটা সুস্পষ্ট যে, খাদ্যের দোষত্রুটি প্রকাশ না করাটা আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। বরং খেতে সুস্বাদু না হলেও এর জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করবে।
খাবার খেতে ভালো না লাগলে- কেউ যদি সেই দোষটুকুন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে তবে সুন্নাহ পালনের সওয়াব পাবে।
এই ব্যাপারটা তো কত অনায়াসে করা যায়, অথচ আমরা সেটাকে উপেক্ষা করি। বরং ব্যাপারটা ট্রেন্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। কত উন্নাসিকতা আমাদের! আফসোস।
তবে হ্যাঁ, ভেজাল, কারচুপি এসব থাকলে ভিন্ন কথা। সেরকম ত্রুটি পেলে মুমিন হিসেবে মন্দ কাজের বাঁধা দেওয়ার তাকিদে সে ব্যাপারে মালিককে সাবধান করবে। সেটা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্তৃপক্ষের নজরে আনবে।
আর যদি সেটাও সম্ভব না হয় তবে অপর মুসলমানকে ক্ষতির হাত থেকে হেফাজত করতে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইনসাফের ততখানিই প্রকাশ করবে যতখানি মন্দ।
কিন্তু স্বাদের ব্যাপার তো মানুষে মানুষে আলাদা হয়। এর ভিত্তিতে সমালোচনা করা যাবে না। যে ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত তাও প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবে।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।