জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন: রাষ্ট্রপতি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১৫ ২০২০, ১৭:৪৬

রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদকে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর  তৎকালীন  শাসক জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেওয়া রেকর্ডকৃত এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি যদি প্রস্তাবে রাজি না হই তাহলে একই সময়ে সে আমাকে ২৫ বছর জেলে বন্ধ রাখার হুমকিও দিয়েছিল।

জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আমি ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে কোনও স্বৈরাচারই টেকেনি, এদেশেও স্বৈরাচার টিকবে না । এসময় তিনি জেলখানায় দুর্বিসহ কষ্টের ইঙ্গিত দেন।

তৎকালীন ছাত্র নেতা ও তরুণ সংসদ সদস্য হামিদ আরো বলেন, এই অপরাধেই বোধহয় কিছুদিন পর আমি গ্রেফতার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শোকাহত চিত্তে আরও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁর তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ শহিদদের প্রতি যাঁরা ১৯৭৫ সালের এ দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তারা শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির পালা। ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘাতকচক্র কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি আইন’ পাশ করে।

আবদুল হামিদ বলেন, ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত ঘটনা কেবল বাঙালির ইতিহাসের নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পরাজিত হলেও দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত কখনও থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ঘাতকচক্রের চক্রান্তের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড।