জিকে শামীমের বিনিয়োগে পাহাড়ে জমি দখল করে রিসোর্ট!
একুশে জার্নাল
সেপ্টেম্বর ২৫ ২০১৯, ১৭:৫৮
পাঁচতারকা বিশিষ্ট রিসোর্টটি তৈরি হলে ২৫০ জন পর্যটকের আবাস হবে
বান্দরবান সদর উপজেলার পর্যটন স্থান হিসেবে খ্যাত মিলনছড়িতে পাহাড়ের জমি দখল করে নির্মানাধীন বিলাসবহুল সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’তে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীমের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের টার্গেট নিয়ে পাহাড়ের জমি দখল করে ১০০ একর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে বিলাসবহুল এই রিসোর্টটি তৈরি করা হচ্ছে। রিসোর্টটির মালিকানায় আটজন অংশীদারের মধ্যে জিকে শামীম একজন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সেখানে কমপক্ষে ১০০ একর জমি জবরদখল করেছে।
রিসোর্টটির সভার রেজুল্যশন কপির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল রিসোর্টটির একটি বোর্ড মিটিং জেলা সদরের ৩১৩ নম্বর রেজিস্ট্রেশন অফিসে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম ১৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মন্টু চেয়ারম্যান, ফজলুল করিম চৌধুরী (স্বপন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম), শামিল উদ্দিন শুভ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালক হিসাবে আছেন এস এইচ এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবির ও জাওয়াদ উদ্দিন আরবাব।
রিসোর্টটির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টু আলোচিত যুবলীগ নেতা জিকে শামীমের অংশিদারত্বের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, শামীম প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন রিসোর্টটিতে। তবে পাঁচতারকা মানের রিসোর্টটিতে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা।
রিসোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট রিসোর্টটির রাইড অ্যামিউজম্যান পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াটার রাইড ও গেম জোন স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন করে চায়না, ভারত ও দেশের বুয়েটের পরামর্শক দল। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্যাংককের বিদেশি প্রকৌশলিরা রিসোর্টের নকশা করছেন। মূল কাজের দায়িত্বে আছে বুয়েট।
দুটি ভাগে রিসোর্টটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাঁচতারকা বিশিষ্ট রিসোর্টটি তৈরি হলে ২৫০ জন পর্যটকের আবাস হবে এখানে। পাঁচ থেকে ছয়টি আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট থাকবে এর ভেতরে। নির্মাণ করা হবে আধুনিক মানের সুইমিং পুল। থাকবে জিম ও ছয়টি গলফ ক্লাব। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি রিসোর্টটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান অংশের সভাপতি জোয়াম লিয়ান আমলাই ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “প্রশাসনে সহযোগিতায় আদিবাসীদের ভূমি জিকে শামীমসহ অন্যরা দখল করেছে। আমরা এই ভূমি দখলমুক্ত চাই।”
তবে পাহাড়ের জায়গা দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন জসিম উদ্দিন মন্টু। তিনি বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে পাহাড়ি সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জায়গাগুলো কেনা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর সহকারী অং ঝায় খ্যায়াং ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিধান অনুসারে বান্দরবানের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে বহিরাগত কেউ জেলায় ভূমি কিনতে পারে না।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জমি “দখল করে” জিকে শামীমের অর্থে গড়ে উঠা রিসোর্টটির কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দাউদুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং তদন্তের পরই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার র্যাব রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, এফডিআর, মাদক, অস্ত্র এবং ছয় দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।