জাতীয় ঐক্য বিনষ্টে বামপন্থী মেননদের এ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে | সৈয়দ মবনু
একুশে জার্নাল ডটকম
মার্চ ০৬ ২০১৯, ১৪:৫৫

রাশেদ খান মেননের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নেই। তাঁর বেশ কিছু কলাম পড়েছি। পরিবার এবং বংশ পরিচয় সঠিকভাবে আমার জানা নেই। খান উপাধিযুক্ত নাম দিয়ে বলা যায় তিনি খান বংশের ছেলে। রাশেদ খান মেননের বাড়ি ফরিদপুর। তাঁর বাবা বিচারপতি আব্দুল জাব্বার খান ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পীকার। তাঁর আগে স্পীকার ছিলেন চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী। রাশেদ খান মেনন নিজেও একজন রাজনীতিবিদ। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ভাবশিষ্য হয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলেন। ছাত্র জীবনে করতেন ছাত্র ইউনিয়ন। বর্তমানে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। এই দলটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ এবং অন্য একটি গ্রুপ থেকে বেরিয়ে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের জন্য গঠিত সর্বদলীয় মন্ত্রী সভায় ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ঐ নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মুক্তি যুদ্ধেও অংশগ্রহন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট, পার্লামেন্ট সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী হিসাবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুধু বলতে চাই তিনি জাতীয় পার্লামেন্টের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে যে ভাষায় বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী আলেম আল্লামা আহমদ শফিকে ‘তেতুলহুজুর’ বলে ব্যাঙ্গাত্মক গালি দিয়েছেন তা কোন সভ্য মানুষের জন্য শুভা পায় না। আশা করি তাঁর মতো ব্যক্তির সংসদ আইন জানা থাকার কথা। সংসদ আইনে রয়েছে অনুপস্থিত ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলা যাবে না। যদি এমন কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে হয় যিনি সংসদ সদস্য নয়, তবে তাকে প্রথমে সংসদে উপস্থিত করতে হবে। আল্লামা আহমদ শাফি সেদিনের সংসদে উপস্থিত ছিলেন না, তাই জনাব রাশেদ খান মেনন তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলে বাংলাদেশের সংসদীয় বিধানকে ভঙ্গ করেছেন। তাই সংসদীয় নীতিতে তার এই বক্তব্য মাননীয় স্পীকার বাতিল করার কথা। জানিনা তা করা হয়েছে কি না। আমরা আশা করবো মাননীয় স্পীকার সেই কাজটি করে সংসদের রীতিকে বহাল রাখবেন।
শ্রদ্ধেয় রাশেদ খান মেননকে বলতে চাই, পাত্রের ঘ্রান দিয়ে ভেতরে রাখা মালের উৎকৃষ্টতা অনুমান করা যায়। মুখের ভাষা দিয়ে মানুষের পারিবারিক ও বংশের পরিচয় মিলে। আপনি যে ভাষায় জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে আল্লামা আহমদ শফির মতো ব্যক্তিকে ব্যাঙ্গাত্মক গালি দিয়েছেন তা আপনি এবং আপনার পরিবারের পরিচয়কে জাতীয়ভাবে ছোট করে দিয়েছে। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সংঘাত থাকতে পারে। একে অন্যের সাথে মতানৈক্যের জায়গা চিহ্নিত করে আলোচনা-সমালোচনাও করতে পারি। একের দৃষ্টিতে অন্যের যে ভুল তা চিহ্নিত করে শক্তভাবে প্রতিবাদও করার অধিকার আছে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট অভিযোগ থাকলে তাও উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কাউকে ব্যঙ্গাত্মক আক্রমন করে কথা বলা ভদ্রতার মধ্যে আসে না। বিশেষ করে জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন করে রাশেদ খান মেননের মতো লোকের পক্ষে কথা বলা আমাদের জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে স্থিতিশীল করতে আজ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী। শ্রদ্ধেয় মেনন সাহেব, এই ঐক্যটা জরুরী ছিলো একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা চেয়েছিলেনও। কিন্তু সম্ভব হলো না আপনাদের মতো কিছু বাম মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কারণে। আপনারা একদিকে শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুর সরকারকে ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়ে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা শুরু করলো বঙ্গবন্ধুকে ইসলাম বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করার অপপ্রচার। দুই গ্রুপের টানাটানিতে নতুন গঠিত রাষ্ট্রের সরকার প্রধান হয়েগেলেন কিংকর্তব্য বিমূঢ়। দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্ন কৌশলে দেশের বিপরীতমূখি চিন্তার মানুষকে একটা কমন প্লাটফরমে এনে দাঁড় করিয়ে চিন্তাগত জাতীয় ঐক্য তৈরির চেষ্টা করছেন কওমী মাদরাসার শিক্ষার স্বীকৃতি দানের মধ্যদিয়ে, আর আপনারা সেই ঐক্যকে ভাঙ্গার জন্য আবার মাঠে আসারা ঘোষণা দিয়ে বসলেন জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে। অথচ আপনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে নিজকে দাবী করেন।
সবশেষে সরকার এবং জনগণকে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্য রক্ষায় বামপন্থী মেননদের এ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হোক আমাদের স্বাধীনতার মাসের নতুন শপথ।