জসীমউদ্দীন ও আল মাহমুদঃ ভাটি বাংলার দুই তৃণমৌলিক কবি
একুশে জার্নাল
মে ২৭ ২০১৯, ১৫:১৮
মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত
জসীমউদ্দীনের ছিল বড় কাব্যপ্রতিভা। তাঁর কাব্যশক্তি ও শব্দশক্তি নিঃসন্দেহে প্রবল ছিল। আর তাঁর ভাবনার জায়গাটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও সিম্পল। তিরিশি আধুনিক কবিদের জটিলতাকে তিনি এড়িয়ে গেছেন। তাঁর কবিতায় পূর্ব বাংলার কৃষিভিত্তিক গ্রাম সভ্যতা ও সংস্কৃতির সহজ সরল একটি প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। একারণে তাঁকে ‘পল্লীকবি’ অভিধা দেয়া হয়েছে।
তিনি পল্লী জীবনের রূপকার যেমন ছিলেন তেমনি ছিলেন কৃষিজীবি তৃণমূল মুসলমান সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার ভাষ্যকার। বাংলা কবিতায় তাঁর এই কৃতির দিক থেকে তিনি অনন্য।
রবীন্দ্রনাথের আভিজাত্য তাঁকে এইভাবে শিকড়মূলে পৌঁছাতে দেয় নি; কাজী নজরুলের কাব্যভূগোলেও পূর্ব বাংলাকে আমরা এতটা পাই না যতটা জসীমউদ্দীনে পাই। পূর্ব বাংলার নদী বিধৌত ভাটি ভূগোলের বন্যাপ্রবণ শ্যামল সমতলের মানুষ ও তার আবহমান কৃষিভিত্তিক জীবনচর্যার এক কাব্যশিল্পী ছিলেন জসীমউদ্দীন। তিনি এদেশের শিকড়সন্ধানী কাব্যধারার একজন প্রধানতম প্রতিভূ। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
এই পূর্ব বাংলার ভাটি গাঙের ভূগোলের লোকজ কাব্যধারার ঐতিহ্যকে যদি কাব্যবিচারের কেন্দ্রে রাখি তাহলে কবি আল মাহমুদকে জসীমউদ্দীনের একজন যোগ্য উত্তরসূরি বলা যায়। আল মাহমুদ জসীমের পল্লীভাষাকে একটু নাগরিক রঙে রাঙিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঠিক ‘পল্লীকবি’ ছিলেন না; তাঁকে বরঞ্চ একজন গ্রামলগ্ন নাগরিক কবি বলা যায়। কবি জীবনানন্দের কিছু প্রভাব আল মাহমুদে আছে; তবে তা যতটা তাঁর ভাষায় ও বাকশিল্পে ততটা তাঁর কাব্য মেজাজে নয়। কাব্য মেজাজের দিক থেকে আল মাহমুদ অনেক বেশি ভাটি বাংলার একজন প্রথম প্রজন্মের গ্রামলগ্ন নাগরিক। যার মধ্যে ছেড়ে আসা গ্রাম আর সদ্য বরণ করা শহরের টানাপোড়েন বিভিন্ন মাত্রায় প্রোজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়েছে। এখানে আল মাহমুদের স্বকীয়তা ও ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আবার স্বতঃস্ফূর্ততা ও অকৃত্রিমতার দিক থেকে জসীমের অনেক কাছাকাছি।
লেখক: কবি, প্রবন্ধকার, অনুবাদক ও গ্রন্থলেখক


