ছাত্র আন্দোলনে কাঁপছে সরকারের মসনদ ; ছাত্ররা এবার ঘরে ফিরে যাও!
একুশে জার্নাল ডটকম
আগস্ট ০৩ ২০১৮, ০৯:৩০
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই, কোনো এক গোষ্ঠী একাদিককাল যুগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে। পতন এসছেই। তবে প্রত্যেক স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে করুনভাবে। সাদ্দাম হোসেন, মোয়াম্মার গাদ্দাফী, হুসনে মোবারক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদ পর্যন্ত, কেউই সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারেননি। এদের প্রায় প্রত্যেকেই গণমানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করলেও শেষফল হয়েছে অতিতিক্ত। সেখানে বর্তমান স্বৈরশাসকের পরিণতি কেমন হবে জানি না। তবে তার সরকার গণমানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে বারবার। তার দলীয় ক্যাডার থেকে শুরু করে সরকারী আমলা কিংবা পুলিশ প্রশাসন, কারো হাতেই দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। মানুষের মাঝে বোবা কান্না আর ধিক্কার জমা হতে হতে পেট ফুলে গেছে। একবার যদি গণমানুষের এ ফোলা পেট ব্রাস্ট হয়ে যায়, নিশ্চিত দেশে নতুন ইতিহাস রচিত হবে।
আমার ব্যক্তিগতভাবে সরকার পরিবর্তন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সরকার যদি গণমানুষের ইচ্ছাশক্তি ও অধিকারের পথ রুদ্ধ না করে, দেশে উন্নয়নমূলক কাজে মনোযোগী হয়, বামপন্থীদের আশ্রয় না দেয়, বিরোধী দল গুলির যৌক্তিক ও দাবী আদায়ের আন্দোলনে বাঁধা প্রদান না করে, তাহলে গনমানুষের ঘৃণা ও ধিক্কার থেকে কিছুটা হলেও বেঁচে যাবে। পাশাপাশি ইসলামের পক্ষেও কিছু করতে হবে না, শুধু ইসলামবিরোধী কিছু না হোক! সেদিকে লক্ষ্য রাখলে ঈমানী আন্দোলনেরও প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু সরকার সম্পূর্ণ জনগনকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সরকার সে দেশের জনগনকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। আবার কোনো গণতান্ত্রিক দেশকে রাজতন্ত্র বানানোও সম্ভব নয়।
দেশে একের পর এক ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তৈরী হচ্ছে ইস্যুর পর ইস্যু। দাবী আদায়ে নেমে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। কিন্তু সরকার পুলিশের গুলির মাধ্যমে সেগুলিকে স্তব্দ করে দিচ্ছে প্রতিবার। এভাবে জনরোষ তৈরী হচ্ছে দিনদিন। পুলিশ সবসময় সরকারের পক্ষে কাজ করবে বিষয়টি এমনও নয়। কখন যে পুলিশের বন্ধুকের নল সরকারের দিকে তাক হবে তা সরকার নিজেও জানে না। অনেকে মনে করে এই সরকারের আর পতন হবে না। বিএনপি বিলুপ্ত প্রায়। নির্বাচনগুলি হচ্ছে একতরফা। কোনো আন্দোলনই টিকছে না। প্রশাসনের সব বাহিনী ই এখন সরকারের হুকুম তামিল করে চলে। তাই এ সরকারকে হটানো অতো সম্ভব নয়। আসলে দেখা চোখে এমনটি আমারও মনে হচ্ছে। তবে, আমার এও মনে হচ্ছে, কখন কীভাবে যে হঠাৎ মসনদ ভেঙ্গে পড়বে, তা দেশের কেউই জানে না। কল্পনাতেও আসবে না আমাদের।
বর্তমানে ছাত্রদের আন্দোলনে সরকারের মসনদ কীভাবে কাঁপছে দেখতে পাচ্ছেন? সরকারের মন্ত্রী এমপিদের চেহারার দিকে তাকালেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। সরকার পুলিশের জোরে টিকে আছে সেটির ও প্রমাণ মিললো ছাত্রদের এ আন্দোলনে। পুলিশ অসহায়, তো সরকারও অসহায়। পুলিশের বন্ধুকের নল আপাতত লক। তাদেরও সন্তান আছে, তাই নূন্যতম বোধ থাকলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গুলি চালাবে না তারা। আর অবস্থা যদি এই-ই হয়, তাহলে সরকার নড়বড়ে। আর যদি সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের উপর চড়াও হবার নির্দেশ দেয়, তাহলেও সরকার বেকায়দায় পড়বে। সরকারের সবচেয়ে বুদ্ধির কাজ হবে ওদের দাবী গুলি মেনে নিয়ে দ্রুত কার্যকর করা। পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স ও কাগজ নেই, লাইসেন্স নেই মন্ত্রীর ড্রাইভারেরও! প্রধানমন্ত্রীর অফিসের গাড়ীর কাগজ নেই, পুলিশের গাড়িতে গাজা ও ইয়াবা, সবমিলিয়ে রাঘব-বোয়ালদের উলঙ্গ করে ছেড়েছে ছোট ছোট বাচ্চারা।
এমপি মন্ত্রীদের বক্তব্যে নিয়ন্ত্রণতা জরুরী। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ প্রথমে তাদের থেকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। বেফাঁস মন্তব্য করে পরিবেশ ঘোলাটে না করা। এক মন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে জামাত বিএনপি ঢুকে পড়েছে। কোটা আন্দোলনেও এমন অভিযোগ ছিলো। আমার কথা হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক দল ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানাতেই পারে, কেননা দাবীটি সবার! সরকারের লোকজনও দাবীর সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করতে পারে। প্রত্যেকের ঘরেই সন্তান রয়েছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবীটি প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও হওয়া উচিত। আমরা চাই আর কোনো মায়ের কোল সড়ক দুর্ঘটনায় খালি না হোক! হ্যাঁ, তবে ছাত্রদের রাজনৈতিকমুক্ত এ স্বচ্ছ আন্দোলন ঘিরে যদি কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়, তাহলে তাদেরকে চিহ্নিত করে তা শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
সবশেষে বলবো, এ সরকারকে বিশ্বাস নেই, ক্ষমতায় টিকে থাকতে যখন তখন যা কা করতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে যে পুলিশের বুলেট
ছুটে আসবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছ গেছে। অতএব, ছাত্রদের আপাতত ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত। লেখাপড়ায় মন দিক। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক হবার সময় এসেছে। ছাত্রদের জন্য রাজপথ নয়, ওদের জন্য পড়ার টেবিলই বেশী মানায়। যতোটুকু দরকার হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ্। এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফেরাই জ্ঞানীর কাজ হবে। স্মরণ রাখা উচিত, লেবু বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায়।