চামড়ার মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে -মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ২০ ২০১৮, ১২:১৬

হাবীব আনওয়ার: কওমী ফোরামের সমন্বয়ক মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেছেন, পোশাক শিল্পের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত চামড়াশিল্প। কোরবানির চামড়া নিয়ে অসাধু বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। না হয় মাদরাসা শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি খতিগ্রস্থ হবে চামড়া শিল্পও এবং সরকারকে যৌক্তিক জায়গা থেকে চামড়ার মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে অনতিবিলম্বে।

আজ ২০ আগষ্ট সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে চামড়ার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে মাদরাসা ও চামড়াশিল্প ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার দাবীতে কওমী ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতী সাখাওয়াত বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন কোরবানির অংশ ও গরিবের হক এই চামড়া নামমাত্র মূল্য দিয়ে কিভাবে লুটে নেয়ার চক্রান্ত দিনদিন বৈধতা পাচ্ছে এবং এই চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর কার্যত কোনো পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে না।

মুফতী সাখাওয়াত আরো বলেন, পোশাক শিল্পের পর আমাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত চামড়াশিল্প। সম্ভাবনাময় চামড়াশিল্পের দ্রুত বিকাশের স্বার্থে কোরবানির চামড়া নিয়ে অসাধু বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। না হয় মাদরাসা শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি খতিগ্রস্থ হবে চামড়া শিল্পও। এবং সরকারকে যৌক্তিক জায়গা থেকে চামড়ার মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে অনতিবিলম্বে। আর আমরা মনে করি, এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সময়ের দাবী।

তিনি বলেন, ছোট একটি পরিসংখ্যান সামনে রাখলেই বিষয়টি আমাদের সামনে আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২০১৩ সালে সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে কেনা হয়। মাত্র ৬ বছরের ব্যাবধানে ২০১৮ সালে এসে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর খাসির দর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ ৬ বছরে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম কমানো হয়েছে ৪০থেকে ৪৫ টাকা। ভাবা যায়?

তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা এর অনেক কারণের কথা বলেছেন।এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম সম্পর্কে ‘ইনডেক্সমুডি’ নামের একটি ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে, ‘২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে গরুর চামড়ার প্রতি পাউন্ডের দাম ছিল ৮৬ সেন্ট। ২০১৪ সালে তা বেড়ে ১ ডলার ১৫ সেন্ট পর্যন্ত উঠেছিল। ২০১৫ সালে দাম কমতে শুরু করে। এখন চামড়ার দাম প্রতি পাউন্ড ৭০ সেন্ট। এই পরিসংখ্যান থেকে আমরা জানতে পেরেছি ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল তখনও কিন্তু আমাদের দেশে চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি। তার পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য কিছুটা কমলেও বাংলাদেশ কমে গেছে প্রায় অর্ধেক।

সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, আরেকটা বিষয় অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের প্রায় সকলের জানা যে, সরকার কর্তৃক ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বাংলাদেশের মার্কেটে সবসময়ই একটু বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়; কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত সরকার ঘোষিত মুল্যেও চামড়া বিক্রয় করা যাচ্ছে না। এর মানে সিন্ডিকেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি দখলে চলে গেছে চামড়া বাজার।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা একদিকে বলছে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য কম, অন্যদিকে আবার তারা চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলছে। আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখছি বাংলাদেশ থেকে যেন চামড়া পাচার না হতে পারে সেজন্য বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য কম হলে বাংলাদেশ থেকে চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে কেন?

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরাম সদস্য মাওলানা হাসান জামীল, মাওলানা রুহুল আমীন সাদী, মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান, মুফতী এনায়েতুল্লাহ, মাওলানা গাজী ইয়াকুব, শায়খ উসমান গনি, মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, মুফতী রিজওয়ান রফিকী, মুফতী তোফায়েল গাজালী, মুফতী জাকারিয়া সিদ্দিকী প্রমুখ।