ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না শরীয়তপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ১০ ২০২০, ১৩:৫৮

ইয়ামিন কাদের নিলয়। শরীয়তপুর জেলা

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শরীয়তপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা‌দের বিরুদ্ধে ঘুষ ছাড়া গ্রাহক‌ সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড়া সেবার বদ‌লে হয়রানির শিকার হতে হয় গ্রাহকদের। আঞ্চ‌লিক এ অ‌ফিস‌টি‌র জনবল সংকট ও অ‌তি‌রিক্ত দায়িত্বের অযুহা‌তে কর্মকর্তারা বে‌শির ভাগ ফাইল দে‌খেন মাদারীপুর (সা‌র্কেল) শাখায় ব‌সে। ফ‌লে অ‌ফি‌স সহকা‌রী ও দালালদের সু‌বিধা ম‌তো চল‌ছে বিআরটিএ কার্যালয়‌টি।

সংশ্লিষ্ট‌দের সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচ তলায় বিআরটিএ কার্যালয়টি অবস্থিত। ওই কার্যালয় থেকে গ্রাহকরা যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিবন্ধন, রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল সেবা নি‌য়ে থা‌কেন। সড়ক প‌রিবহন নতুন আইন কার্যক‌রের পর থে‌কে ভিড় পড়ে‌ছে এ কার্যালয়‌টি‌তে।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া মূল কর বা ফি জমা দিয়ে খেলাপি মালিকদের যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদ করার সুযোগ দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু ভোগা‌ন্তি ছাড়া সু‌বিধা মিল‌ছে না ড্রাই‌ভিং লাই‌সেন্স কর‌তে আসা গ্রাহকদের। কাগজপত্র জমার প্রথম ধাপ থে‌কে শুরু হয় ভোগান্তি। এরপর ধা‌পে ধা‌পে আলাদা আলাদা অর্থ গুন‌তে হয় ব‌লে অ‌ভি‌যোগ’ও দীর্ঘ‌দি‌নের। তা‌দের এ হয়রা‌নির থে‌কে বাদ প‌রে না সরকা‌রি চাকরিজী‌বীরাও।

নাম প্রকাশ না কর‌া শর্তে ক‌য়েকজন সরকা‌রি চাক‌রিজীবী প্র‌তি‌বেদ‌কে জানি‌য়ে‌ছেন তা‌দের অ‌ভিজ্ঞতার কথা। তা‌দের অ‌ভি‌যোগ, ড্রা‌ইভিং কর‌তে গি‌য়ে প্রথ‌মে কাগজপত্র জমা দেওয়ার একসপ্তাহ প‌রে লানার হা‌তে পান। যা শিক্ষান‌বিশ ড্রাইভার হি‌সে‌বে ৩ মাসের সময় দেওয়া থা‌কে। মেয়াদ শেষ হওয়া আগে নির্ধা‌রিত তা‌রি‌খে গি‌য়ে লি‌খিত, মৈ‌খিক ও ড্রাই‌ভিং ক‌রে পরীক্ষা দি‌তে হয়। এ‌তে পাশ কর‌লেই মি‌লে ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু পাশ না ক‌রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নি‌য়ে‌ছেন তারা।

কিন্তু কিভা‌বে জান‌তে চাই‌লে জানায়, পরীক্ষা পাশ করা‌নোর না‌মে দি‌তে হয় ৩ হাজার, আর কাগজপত্র নি‌য়ে ঝা‌মেলা না কর‌তে ৫ হাজার, মোট ৮ হাজার টাকা দি‌য়ে বু‌ঝে পে‌য়ে‌ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স।

এদি‌কে, গত বছর শরীয়তপুর বিআরটিএ’র সিল মেকানিক ও সিল কন্ট্রাক্টর প‌দের দুই স্টাফ‌কে ঘুষ গ্রহণের দা‌য়ে ব‌হিষ্কার করে বিআরটিএ। ত‌বে সিল কন্ট্রাক্টর (ব‌হিষ্কৃত) রা‌জিব অ‌ফিস ছে‌ড়ে‌ছে ঠিকই, কিন্তু তার কাছে রয়ে গেছে অ‌নেক গ্রাহ‌কের টাকাসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন পেপার এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।

এম‌ন একজন ভুক্তভোগী ন‌ড়িয়া উপ‌জেলার নশাসন ইউ‌নিয়‌নের বা‌সিন্দা লোকমান হো‌সেন। ২০১৭ সা‌লে রা‌জি‌বের মাধ্য‌মে কাগজপত্র জমা দি‌য়ে পরীক্ষাও ‌দেন তি‌নি। এরপর অ‌তি‌রিক্ত টাকা দি‌তে না পারায় একপর্যা‌য়ে চালক হি‌সে‌বে অযোগ্য হয় সে। ড্রাইভার হ‌তে নির্ধা‌রিত বয়স হয়‌নি, অযুহা‌তে দুই বছর ধ‌রে দুই কার্যাল‌য়ে ঘুর‌তে হ‌য়ে‌ছে তা‌কে। আট‌কে রা‌খা হ‌য় তার কাগজপ‌ত্রের ফাইল‌টিও। অব‌শে‌ষে ক‌য়েক‌দিন আগে অ‌নেক খোঁজাখু‌জি ক‌রে রা‌জি‌বের মাধ্য‌মে মাদারীপুর শাখা থে‌কে উদ্ধার ক‌রে সেই ফাইল‌। এখন এ‌সে‌ছে নতুন ক‌রে জমা দি‌তে, ত‌বে এখনও না‌কি ‌ভোগা‌ন্তি‌তে তি‌নি।

গতকাল বিআর‌টিএ কার্যালয়ে সাংবা‌দিক‌দের দে‌খে দৌঁড়ে এ‌সে ক্ষোভ প্রকাশ ক‌রে এসব কথা ব‌লে‌ছেন লোকমান। শুধু লোকমান নয় গ্রাহক হয়রা‌নি ব‌ন্ধে দ্রুত জ‌ড়িত‌দের বিরু‌দ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জা‌নি‌য়ে‌ছেন এই অঞ্চ‌লের চালক ও মা‌লিকরা।

এছাড়াও, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফি ৫১৮ টাকা, লাইসেন্স ফি দুই হাজার ৬০০ টাকা। আর মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি ১২ হাজার হতে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৮ হাজার থেকে শুরু ক‌রে ২০ হাজার, আর মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত হা‌তি‌য়ে নিচ্ছেন শরীয়তপুর বিআরটিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। য‌দিও দালা‌লের মাধ্যম ছাড়া ফাইল জমা প‌রে না অফিসে।

এ বিষয়ে সত্যতা খুঁজ‌তে রোববার (৮ মার্চ) ওই কার্যালয়ে যায় স্থানীয় সাংবা‌দিকরা। অ‌ফিসক‌ক্ষে ঢুক‌তেই প্রথ‌ম বাঁধার মু‌খে পড়‌তে হয় অ‌ফি‌সের হেল্প‌ডেক্সে দা‌য়ি‌ত্বে থাকা সৈয়দ আতাউর রহমানের। একপর্যা‌য়ে গ্রাহ‌কদের কিছু তথ্য চাওয়া হ‌লে আরও উ‌ত্তে‌জিত হ‌য়ে ও‌ঠেন তিনি।

এ সময় ওই ক‌ক্ষে উপ‌স্থিত ছি‌লেন মটরযান প‌রিদর্শক মো.মাহাবুবুর রহমার। কিন্তু তি‌নিও একই তা‌লে তা‌লি বা‌ঁজি‌য়ে সহ‌যো‌গিতা ক‌রে‌ হেল্প‌ ডেক্সের উ‌ত্তে‌জিত আতাউরকে।

ঘুষ ছাড়া গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক জিএম নাদির হোসেন বলেন, এমন অভিযোগ থাক‌লে সেটা তদন্ত করা হবে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রাহকরা যাতে হয়রানি না হয় সে ব্যবস্থা কর‌বো।

এ‌ নি‌য়ে শরীয়তপু‌রের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তা‌হের ব‌লেন, বিআরটিএ’র নি‌জেস্ব কোনও কার্যালয় না থাকায় এই কার্যাল‌য়ে জায়গা ক‌রে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। গ্রাহক‌দের হয়রা‌নি করা কোনও ভা‌বেই বিআর‌টিএ’র কাজ না। তারা সকল গ্রাহক‌দের সঠিক সেবা দেওয়া দা‌য়িত্ব। হয়রা‌নি ব‌ন্ধে অ‌ভি‌যো‌গের বিষয়গু‌লো তি‌নি গুরুত্বসহ তদন্ত ক‌রে দেখ‌বেন ব‌লে আশ্বাস দিয়ে‌ছেন।