গোটা কাশ্মীরজুড়ে ‘মানবতার দেয়াল’
একুশে জার্নাল
জানুয়ারি ০১ ২০১৯, ১০:৩৭

দেয়ালে ঝোলানো সুয়েটারগুলো পথ থামিয়ে দিলো বৃদ্ধ আলি মুহাম্মদের। পাশে দাঁড়ানো যুবকের কাছে তার জিজ্ঞাসা, বাবা! সুয়েটারের দাম কতো? যুবক বললেন, এগুলো বিক্রির জন্য নয়। এগুলো অভাবী মানুষের জন্য। যারা শীতের পোশাক কিনতে পারে না তাদের জন্য। বৃদ্ধ বললেন, আমার চেয়ে অভাবী কে আছে? আমার তিনটি মেয়ে। আয়ের কোনো উৎস নেই।
যুবক বৃদ্ধ আলি মুহাম্মদের হাতে একটি জ্যাকেট, কয়েকটি সুয়েটার ও জুতো তুলে দিলেন। বৃদ্ধ খুশি হলেন, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন এবং প্রাণভরে দোয়া করলেন যারা এভাবে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বললেন, এটা খুবই মহৎ একটি উদ্যোগ। আমার মতো অভাবী মানুষকে আর শীতের পোশাক কিনতে হবে না। যারা মানুষের কল্যাণ করছে, আল্লাহ তাদের কল্যাণ করুন।
দেয়ালে কাপড় ঝোলানো একটি নতুন সংস্কৃতি। যাকে বলা হয় ‘মানবতার দেয়াল’। কাশ্মীরের একদল যুবক যার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইরান ও তুরস্কে এমন উদ্যোগ আগেও নিতে দেখা গেছে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরে ‘মানবতার দেয়াল’-এর একজন উদ্যোক্তা আবরার আলি। তিনি বলেন, ‘এখানের শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও অনেক মানুষের গরম কোনো কাপড় নেই। তারা তা কেনার সামর্থ্যও রাখে না।’
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই উদ্যোগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক মানুষ আন্তরিকভাবে সাড়া দিচ্ছে। আমরা চাই, কাশ্মীরের মানুষ; বিশেষত যুবকরা নিজ নিজ এলাকায় এমন আরও অনেক দেয়াল প্রতিষ্ঠা করুক। শীতার্ত মানুষের কষ্ট দূর করতে পারলে আমরা স্বার্থক হবো।’
উল্লেখ্য, কাশ্মীরে এখন প্রচণ্ড শীত পড়ছে। তাপমাত্রা নেমে গেছে শূন্য ডিগ্রির নিচে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কাশ্মীরের তাপমাত্র মাইনাস আট ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় এবং প্রচণ্ড তুষারপাত হয় তখন।
জম্মু-কাশ্মীর সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪-২০১৫ অনুযায়ী কাশ্মীরের ২১.৬ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এসব মানুষ সাধারণ শীতের পোশাক কেনারও সামর্থ্য রাখে না।