গুম-খুনের ‘আয়নাঘর’ চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার: ডা. জাফরুল্লাহ
একুশে জার্নাল ডটকম
আগস্ট ১৮ ২০২২, ২৩:৫৯
গুম হওয়া ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন স্থানে আটকে রাখাসংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে নেত্র নিউজ। এ প্রসঙ্গ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দেশে কত আয়নাঘর আছে, তা আমরা জানি না। দেশে যে একের পর এক গুমের কাহিনি, এটা শেষ হওয়ার নয়। এর পরিবর্তন দরকার।’
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গুম ও সাদাপোশাকে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণা ও ছাত্র-জনতার সমাবেশ’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন। ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি একবারও বলছেন না যে তারা ক্ষমতায় এলে সব আয়নাঘর ভেঙে চুরমার করে দেবেন। যারা গুম হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। তারা একটা ভুল করছে। সব বিরোধীদলকে সমবেত কণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে বলতে হবে, এটা বন্ধ না করলে প্রতিটি পুলিশের বিচার হবে। যারা গুম ও অত্যাচারিত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের শিক্ষা দেওয়া হবে, যাতে তারা বিদেশে যেতে পারে। এর জন্য দরকার সরকারের পরিবর্তন, আয়নাঘরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া দরকার।’
এ সময় নিজে গুম হয়েছেন বলে জানিয়ে সে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘শেখ সাহেবের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আমলে আমিও কয়েক দিনের জন্য গুম হয়েছিলাম। খুব বেশি সময় নয়, অল্প সময়। সাদাপোশাকে থাকা সেই কর্মকর্তা আমাকে তার পরিচয় দিয়েছিলেন। অত্যাচার করা হয়েছিল আধুনিক কায়দায়। দুই হাজার ওয়াটের বাতি আমার দুদিকে লাগিয়ে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল।’‘
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ভয় পাবেন না। আপনি হারতেও পারেন, জিততেও পারেন। তবে আপনার প্রতি অন্যায় হবে না। আপনি খালেদা জিয়াকে জামিন দিন।’
এই সরকারের পরিবর্তন হবেই বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এভাবে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার বেঁচে থাকতে পারে না।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়ার জামিন হলে তিন-চার মাসের মধ্যে পরিবর্তনের জোয়ার বইবে। তাকে দিয়েই প্রতিটি গুমের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলতে হবে।’
সমাবেশে ২০১৮ সালে নিজের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করে ভাষানটেক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতনের কারণে আমি হাঁটতে পর্যন্ত পারছিলাম না।’
গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা মিনা আল আমিন বলেন, ‘আয়নাঘরের বন্দী’তে যে চিত্র এসেছে তা গুমের প্রকৃত চিত্রের ৫ শতাংশের কম। প্রকৃত চিত্র আরও অনেক ভয়াবহ।
ছাত্র অধিকারের নেতা সালেহউদ্দিন সিফাত ও জাহিদ আহসানের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেনন গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান ও শাকিল উজ্জামান, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা,সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, সহসভাপতি তারেকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইন, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়া, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক আরমানুল হক প্রমুখ।