গীবত (পরনিন্দা) এবং বাক সংযমের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ১২ ২০২০, ১৯:৫৯
মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ>
গীবত (পরনিন্দা) এবং বোহতান বা মিথ্যা অপবাদ এগুলো মারাত্মক দোষণীয় কাজ। সামাজিক শান্তি বিধ্বংসী একটি ঘৃণ্য অপরাধ। তা মুসলমানদের জন্য বলা এবং শ্রবণ করা হারাম ও কবিরা গুনাহ ।
গীবত এমন একটি গুণাহ হাদিসে বর্ণনা এসেছে, মানুষ তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন । কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করেন না,যতক্ষণ যার গীবত করা হয়েছে সে ক্ষমা না করে ।
আল-কুরআনে গীবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে । আর হাদীসে একে ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে ।
মানুষ তার বাক শক্তিকে সংযম না রাখতে পারায় উক্ত গর্হিতকাজ করতে থাকে । আমরা নিজেদের জিহ্বাকে সংযত রাখতে পারিনি বলেই একে অন্যের দোষচর্চা করতে থাকি।
নিজেদের অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বার ফলেই আমরা অপরের প্রতি তোহমত তথা অপবাদের স্টিকার লাগিয়ে দেই ।
অথচ কোন ব্যক্তি যদি সে তার বাক শক্তিকে সংযম ও নিজের যৌনাঙ্গকে সকল পাপকর্ম থেকে হেফাজত করতে পারে, তার জন্য রয়েছে’জান্নাত লাভের নিশ্চিত সম্ভাবনা ।
♢ হযরত সাহাল ইবনে সায়াদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,যে ব্যক্তি সে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অঙ্গ জিহ্বা ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। (বুখারী: ৬৪৭৪,তিরমিযী: ২৪০৮)
ইসলামধর্ম যেভাবে গীবত আর অপবাদ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছে,তেমনি তাদের বাকশক্তি সংযম রাখতেও নির্দেশ করেছে।এর সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা আপনাদের সামনে পেশ করছি ।
♢ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না (সুরা হুজরাত আয়াত :১২)
♢ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে নয়তো বা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি : ৬০১৮)
♢ হযরত আবু মুসা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা:) সর্বোত্তম মুসলিম কে ? তিনি বললেন, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। (বুখারী হাদীস:১১,মুসলিম হাদিস: ৪২)
গীবত আর বোহতান বা মিথ্যা অপবাদের পরিচয় ?
♢ হযরত আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, একদা রাসূল (সা:) বললেন, তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? লোকেরা বলল,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন,তোমার ভাই যা অপছন্দ করে ,তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা । বলা হল, আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি ? (সেটাও কি গীবত হবে?)
তিনি বললেন,তুমি যা (সমালোচনা করে ) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তার গীবত করলে। আর তুমি যা(সমালোচনা করে) বললে,তা যদি তার মধ্যে না থাকে,তাহলে তাকে অপবাদ দিলে। (মুসলিম ২৫৮৯)
(অর্থাৎ; কারো কোনো ত্রুটি সম্পর্কে তার অগোচরে কারো সাথে সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া শরয়ী দৃষ্টিতে গীবত বলা হয় । আর যার ত্রুটি বাস্তবতায় নেই,কিন্তু অন্যের কাছে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়,তাকে(بهتان-বোহতান) মিথ্যা অপবাদ বলে।)
গীবত বা পরচর্চা ও অপবাদের শাস্তি কত কঠিন
♢ আল্লাহ পাক বলেন,তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী,পরম দয়ালু।
অর্থাৎ গীবত করা মানি মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল। (সুরা হুজরাত আয়াত :১২)
♢ নবীজী (সা:) বলেন, মে‘রাজের সময় আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের ছিল তামার নখ।সেই নখ দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা এবং বুক ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি বললাম, জিবরীল! এরা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যারা (দুনিয়াতে) মানুষের গোশত খেত (গীবত করত) এবং মানুষের সম্মান হানি করত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৩৪০)
♢ আবু হুরাইরা(রা:)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,নবী করিম (সা:) কে বলতে শুনেছি, মানুষ চিন্তা ভাবনা না করেই এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দুরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়। (বুখারী: ৬৪৭৭, মুসলিম: ২৯৮৮)
♢ আল্লাহ পাক কুরআনে পরনিন্দাকারী সম্পর্কে বলেন, দুর্ভোগ প্রত্যেকঐব্যক্তির,যে পেছনেও সামনে মানুষের নিন্দা করে বা দোষ বলে বেড়ায়। (সূরা হুমাযাহ: আয়াত ১)
♢ নবীজী (সা:) বলেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম,হাদীস ১০৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১০৫৯০)
♢ যে ব্যক্তি মুমিন পুরুষ-মহিলার উপর এমন কাজের তোহমত লাগায় যা তারা করেনি এবং বিনা অপরাধে তাদেরকে কষ্ট দেয়, তারা নিজেদের মাথায় অতি বড় মিথ্যা দোষ ও সুস্পষ্ট গোনাহের বোঝা তুলে নেয়। (সুরা হুজরাত: আয়াত ৫৮)
গীবত (পরনিন্দা) অপবাদ এসবের মূলে হচ্ছে যবানের সংযম না থাকা। যবানের দ্বারা সংঘটিত গুনাহের মধ্যে গীবতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি লিপ্ত হয়। কম মানুষই এ থেকে বাঁচতে পারে । এ ব্যাপারে অবহেলার অন্ত নেই।
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়,জেনে না জেনে,বুঝে না বুঝে,সঠিক তত্ত্ব না নিয়ে অহেতুক কথাবার্তা আর মিথ্যাচারে লিপ্ত রাখি স্বীয় বাকশক্তিকে।)
ফলে মানুষ সকালে গীবত করে, বিকালে গীবত করে, রাতে গীবত করে,গীবত যেন কারো কারো সারাদিনের একমাত্র কাজ । ক’জন একত্র হলেই প্রথম কাজ যেন গীবত । এটা মানুষের সমাজে শত ফ্যাসাদের কারণও বটে । অথচ কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে এব্যাপাারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে ।
♢ আল্লাহপাক এরশাদ করেন,যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা তুমি পরিচালিত হইয়োনা । নিশ্চয় কর্ণ , চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে । (সুরা বনী ইসরাইল আয়াত ৩৬)
♢ হযরত আবু দারদা(রা:)থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অসম্মান করা থেকে দূরে থাকল, কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার চেহারাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দুরে রাখবেন । (তিরমিযী )
♢ যা বলছি লিপিবদ্ধ হচ্ছে:
আমাকে ভাবতে হবে-কী বলছি,কী বলা উচিত। কারণ, আমার গুরুত্বহীনভাবে বলা কথাও আমার/ যে কারো কত বড় ক্ষতি সাধন করতে পারে-উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম। তাছাড়া আমার সব কথা তো লিপিবদ্ধ হচ্ছে। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
♢ স্মরণ রেখ,দুই গ্রহণকারী ফিরিশতা তার ডানে এবং বামে বসে তার কর্ম লিপিবদ্ধ করে; মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। (সূরা কফ: ১৭-১৮)
এসব নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তির কথা জানা সত্বেও আজ আমরা কেন সমালোচনা করি ?
আমরা এও জানি যে, কারো সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা রাখতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য যা রাসুলের আদর্শ থেকে গৃহীত । তাই বলে কি গীবত আর মিথ্যা অপবাদের মত মারাত্মক গর্হিত কাজ করতে হবে ?
আজ সমালোচনা করা নিজেদের উপর একটি অর্পিত দায়িত্ব মনে করা হয়, যা শরিয়ত কখনো সমর্থন করে না।
ইসলাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কখন কিভাবে কার দোষ ত্রুটিগুলোকে সমাজে প্রকাশ করতে হবে।
যে সব কারণে গীবত করা বৈধ:
♢ অত্যাচার ও নির্যাতন :
নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তি সে শাসক ও বিচারক প্রমুখ (প্রভাবশালী) ব্যক্তি যারা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন, তাদের নিকট নালিশ করতে গিয়ে বলবে যে, অমুক ব্যক্তি আমার উপর এই অত্যাচার করেছে ।
♢ মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপী ব্যক্তিকে সঠিক পথ ধরানোর কাজে সাহায্য কামনা ।
অর্থাৎ মন্দ ও অন্যায় কাজ বন্ধ করার জন্য বা অন্যায় কারী ব্যক্তিকে তার গর্হিত কাজে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যিনি তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখেন ।
উনার কাছে গিয়ে এভাবে বলবে যে, অমুক ব্যক্তি মন্দ কাজে লিপ্ত।আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন ইত্যাদি।
♢ ফতোয়া জানার উদ্দেশ্যে মুফতি বা আলেমের নিকট গিয়ে কারো ব্যাপারে বলতে পারে যে, অমুক ব্যক্তি এই অন্যায় অত্যাচার আমার প্রতি করেছে । আপনি এর ন্যায় সঙ্গত সমাধান দিন ।
এক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে অভিযোগ দেয়া যেতে পারে। তবে নাম নির্দিষ্ট করেও ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ আছে ।
♢ মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক এবং তাদের মঙ্গল কামনা করার ব্যাপারে কারো গীবত করা যাবে। অর্থাৎ সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ ।
(যেমন: হাদীসের দোষযুক্ত রাবী ও বিচারকর্যে সাক্ষীর দোষ ত্রুটি প্রকাশ করা । সর্বসম্মতিক্রমে এরূপ করা বৈধ । বরং প্রয়োজন বশত ঐরূপ করা অত্যাবশ্যক ।
♢ কোন ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জোড়ার জন্য,
ব্যবসায় অংশীদারি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বা কারো কাছে আমানত রাখা ও কারো সাথে আদান প্রদান করার মানসে অথবা কারো প্রতিবেশী হবার জন্য কোন ব্যক্তি যখন পরামর্শ চাইবে, তখন পরামর্শ প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা খুলে বলবে।
বরং তিনি হিতাকাঙ্ক্ষী মনোভাব নিয়ে যত দোষ ত্রুটি থাকবে সব ব্যক্ত করে দেয়া উচিত । এতে তা গীবত বলে গণ্য হবে না। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল এক্ষেত্রে পরামর্শকের উদ্দেশ্য যেন, ব্যক্তির প্রতি হিংসা অথবা শত্রুতা পোষণ করা না হয় । কেননা তা হারাম ।
♢অনুরূপভাবে যখন কোন দ্বীনী জ্ঞান পিপাসুকে দেখা
যাবে যে,সে কোন বিদআতী,মহাপাপী ফাসেক লোকের নিকট জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছে আর আশঙ্কা করবে যে,
ঐ বিদআতী ও ফাসেক ব্যক্তি দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,
তাহলে সে আবশ্যিকভাবে তাকে তার অবস্থা ব্যক্তকরে তার মঙ্গল সাধন করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হল যে,
এর পিছনে তার উদ্দেশ্য যেন হিতাকাঙ্ক্ষী হয় । ব্যক্তি হিংসা থেকে যেন না হয় ।
উদাহরণ:মতিউর রহমান মাদানী সহ আরো এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ ।
♢ প্রকাশ্যে কেউ পাপচারণ অথবা বিদআতে লিপ্ত হলে তার এসব গর্হিত কাজের বিরুদ্ধে কথা বলা ।
যেমন: কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে মদ্য পান,অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ বা অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে,তার কেবল সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথাগুলো উল্লেখ করা বৈধ ।
যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে। এবং তার অপ-নোদন সম্ভব হয় ।
পক্ষান্তরে তার অন্যান্য গোপন দোষ ত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ হবেনা । তবে যদি উল্লেখিত কারণ সমূহের মধ্যে অন্য কোন কারণ থাকে যা আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তাহলে তাও ব্যক্ত করা বৈধ হবে ।
♢ কারো পরিচয় প্রকাশ করতে । যেমন: কেউ কানা । তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না।
(তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২,সূরা হুজরাত-১২)
বর্ণিত এসব কারণে গীবত করা বৈধ । এর অনেকটাই বিভিন্ন সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত ।
বর্ণিত একারণগুলো ব্যতীত কারো গীবত করা নিষেধ।
বরং ইসলাম অনুমতির বদলে এর বিরুদ্ধে কঠিন নিষেধাজ্ঞা ও শাস্তির বিধান রেখেছে । অথচ আমরা এর প্রতি একটুও ভ্রুক্ষেপ করিনা।
আসুন গীবত ও অপবাদ থেকে নিজেকে বিরত রাখি এবং অন্যকে বিরত থাকতে বলি ।
♢ এক্ষেত্রে করণীয় হলো, যবানের নিয়ন্ত্রণ।
উকবা ‘ইবনে আমের রা. একবার নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! নাযাত কীসে? নবীজী (সা:)
উত্তরে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি উল্লেখ করলেন তা হল-
তুমি তোমার যবানের নিয়ন্ত্রণ কর।
( তিরমিযী, হাদীস ২৪০৬)
♢ সদা সত্য কথা বলা,সত্যের ঠিকানা জান্নাত।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ(সা:)এরশাদ করেন, সদা-সর্বদা সত্য কথা বল,কেননা সত্য ভালো কাজের পথে পরিচালিত করে। আর ভালো কাজ জান্নাতে নিয়ে যায়।
যে ব্যক্তি সত্য বলতে থাকে এবং সত্যবাদীতার চেষ্টায় থাকে এক পর্যায়ে আল্লাহর খাতায় ‘ছিদ্দীক’(চির সত্যবাদী) নামে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬০৭)
♢ অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা : যা সফল মুমিনের গুণ ।
কুরআনে মুমিনের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। (সূরা মুমিনূন ৩)
♢হাদিসে এসেছে, ব্যক্তি ভালো মুসলিম হওয়ার একটি বৈশিষ্ট্য হল, অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩১৭)
♢ আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কথা না বলা ।
নবীজীর সন্তান ইবরাহীম ইন্তেকাল করলে নবীজী কাঁদছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, আল্লাহর রাসূল! আপনিও…? (আপনিও কাঁদছেন) তখন নবীজী বললেন, হে ইবনে আউফ!…
চোখ থেকে অশ্রু ঝরবেই, হৃদয় ব্যাথিত হবেই। কিন্তু আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কথা আমরা বলব না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩০৩;ফতহুুল বারী ৩/২০৬)
আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবাইকে গীবত-অপবাদ সহ সকল প্রকার গর্হিত অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখেন । সমাজে সুশাসন ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দেন । হিংসা বিদ্বেষ হানাহানি থেকে হেফাজত করেন । আমীন