গাদ্দাফির শেষ ভাষণ : কিছু অমর সত্য কথন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুলাই ০২ ২০১৯, ১৩:৩৮

পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শুরু করছি…

গত ৪০ বছর…হয়তো আরো বেশি সময়…আমি সঠিক মনে করতে পারি না…লিবিয়ার জন্য আমার সম্ভাব্য সকল কিছুই করেছি। বাড়ি, হাসপাতাল,স্কুল করেছি। যখন তারা ক্ষুধার্ত ছিল মুখে খাবার তুলে দিয়েছি।এমনকি মরুময় বেনগাজীকে (একটি যায়গা) সবুজ ফার্মল্যান্ড বানিয়েছি।আমি দেশকে রক্ষা করেছি কাউবয় রোনাল্ড রিগ্যানের হাত থেকে।যখন আমার দত্তক নেওয়া এতীম কন্যাকে সে হত্যা করেছিল তখন আমাকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছিল। ব্যর্থ হয়ে অনাথ মেয়েটিকে হত্যা করল…

এরপর আমি আফ্রিকান ইউনিয়নে ব্যাপক পরিমান অর্থ সাহায্য করলাম আফ্রিকান দরিদ্র ভাই-বোনদের সাহায্যের জন্য। আমি সারাজীবন খেটে গেছি মানুষকে গনতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য বোঝাতে এবং আমাদের দেশে গনকমিটি গঠন করা হয়েছিল সুশাসন নিশ্চিত করতে।

হয়তো এটা যথেষ্ট ছিল না…কারন আমি দেখতে পারছি একদল জনতা যাদের কিনা ১০ তলা বাড়ি আছে,ঘরভরা জিনিসপত্র আছে,রয়্যাল স্যুট আছে তারা সন্তুষ্ট নয়।তারা স্বার্থপর এবং আরো চায়…

তারা আমেরিকাকে বলেছে তারা এই দেশে গনতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতা চায়। তারা কখনও বুঝতে চায় না,এই “গনতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতা” একটা গলাকাটা ব্যাবস্থা যেখানে সবচেয়ে বড় ইঁদুরটা বেশি খায় আর বাকীরা অভুক্ত থাকে।

তারা বুঝতে চায় না আমেরিকায় ওষুধ ফ্রি নয়,হাসপাতাল ফ্রি নয়,শিক্ষা ফ্রি নয়, খাদ্য ফ্রি নয়,তেলের দাম কম নয়,বেকারত্বের হারও কম নয়। (লিবিয়াতে এসব ফ্রী ছিল) ! আমি কি করেছি তা নিয়ে অনুতপ্ত নই।হয়তোবা কারো কারো জন্যে খুব বেশি কিছু করতে পারিনি।কিন্তু বাকীদেরকে আমি ঠিকই সেবা করে গেছি।তারা তো জানে আমি গামাল আবদেল নাসেরের পুত্র,যিনি সালাহ-আল-দীন আইয়ুবীর পরের ইসলাম ও আধুনিক আরবের একমাত্র সত্যিকারের নেতা।

তিনি সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণভার নিয়েছিলেন তার জনগনের জন্যে।আমি লিবিয়ার নিয়ন্ত্রন নিয়েছিলাম আমার জনগনের জন্যে।আমি কেবল তার পদাঙ্কই অনুসরন করেছিলাম আমার জনগনকে ঔপনিবেশিক চোরদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে যে চোরেরা আমাদের সম্পদ চুরি করতে মুখিয়ে আছে।

আজ আমি আর্মি ইতিহাসের সর্বসেরা আক্রমনের মুখে।আফ্রিকার ক্ষুদে শিশু ওবামা আজ আমাকে হত্যা করতে চায় আমার দেশের স্বাধীনতা হরন করতে,আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করতে,আমাদের ফ্রি হাউজিং,ফ্রি মেডিসিন,ফ্রি এডুকেশন, ফ্রি ফুড কর্মসূচি বাতিল করতে এবং রিপ্লেস করতে চায় চুরির আমেরিকান ফর্মুলা যেটাকে তারা “পুঁজিবাদ” নামে ডেকে থাকে কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এর সম্বন্ধে ভালোই জানে।পুঁজিবাদ হচ্ছে সেই জিনিস যেখানে কর্পোরেশন জনগনের উপর চলে,রাষ্ট্রের উপর চলে শেষে জনতার শক্তি দুর্বল করে দেয়।

সুতরাং আমার সামনে কোনো বিকল্প নেই।আমি আপস করবো না এবং আল্লাহ চাইলে আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করব যে পথ আমার দেশকে ধনী বানিয়েছে,কৃষিতে সমৃদ্ধ করেছে,খাদ্য-স্বাস্থ্য উন্নত করেছে আর আমাদের আরব-আফ্রিকার অসহায় ভাই-বোনদের সাহায্য করার সুযোগ দিয়েছে সেই পথ ত্যাগ করে আপস করার কোনো মানে হয় না।

আমি মরতে চাই না।কিন্তু সত্যিই যদি সেদিন আসে,তাহলে আমার কথাগুলু ছড়িয়ে দাও সারাবিশ্বে।আমার আজকের বক্তৃতাকেই আমার উইল হিসেবে ধরে নাও। জানিয়ে দাও সারাবিশ্বকে যে আমি ন্যাটোর ক্রুসেডার হামলার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম,অমানবিকতা,বিশ্বাসঘাকতা,পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলাম।

আর ছিলাম আফ্রিকান,আরবদের পাশে আলোর রেখা হয়ে। কখনো বোকার মতো সম্পদ ব্যাবহার করিনি। আর আমাদের মহান মুসলিম নেতা সালাহউদ্দিনের মতো আমিও জেরুজালেমের দিকে নজর দিয়েছিলাম। পারিনি মুক্ত করতে,কিন্তু সব ধরনের সাহায্য করে গেছি এই নগর মুক্ত করতে।

পশ্চিমারা আমাকে উন্মাদ-পাগল বলে অভিহিত করে।কিন্তু তারা ঠিকই জানে,সত্যি কোনোদিন চাপা থাকে না।তারা এটাও জানে,আমরা স্বাধীন জাতি।আমি এই স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার শপথ করলাম।আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে স্বাধীনতা আর দেশ রক্ষা করে যাবো। ভাই ও বোনেরা,একে অপরকে ভালোবাসতে শিখুন।রক্তপাত বন্ধ করুন।কারন আমেরিকা,ইউরোপ আর তাদের মিত্ররা কখনো আফ্রিকার বুকে সুর্যের আলো দেখতে চায় না।

(বি.দ্র. এই ভাষনটি লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল।)