গঙ্গাচড়ায় গৃহবধু অন্তঃস্বত্তা: বিয়ের স্বীকৃতি দিচ্ছে না স্বামী ও শ্বশুর

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জুন ০৭ ২০২০, ২৩:০৩

মোঃ আফ্ফান হোসাইন আজমীর, রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের সাথে প্রভাবশালী পরিবারের ছেলের প্রেমের বিয়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তোলার ৫দিন পর যৌতুকের দাবিকৃত টাকা না পেয়ে বিয়েকে অস্বীকার করে নববধুকে ঘরে তুলছে না শশুর, শাশুড়ি ও লম্পট বর। নিরুপায় হয়ে ওই নববধুর বাব-মা মেয়ের জীবনে কলঙ্ক নেমে আসার আগেই জামাইয়ের ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও মেয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের বকশিগঞ্জ এলাকার বকশি পাড়ার দরিদ্র মাহিদ আলীর মেয়ে শারমিন জাহানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে বকশিগঞ্জ বসুনিয়াপাড়ার প্রভাবশালী জয়নাল আবেদীন ওরফে জয়নাল ভুরিয়ার ছেলে আবু সাঈদ। তারা দুজনে দীর্ঘদিন লুকিয়ে প্রেম করার পর গোপনে এ বছরের ৯ মার্চ নীলফামারী জেলায় পালিয়ে গিয়ে সেখানে মৌলভীর মাধ্যমে ৭ লক্ষ ১’শ ১ টাকা দেনমোহর ধার্য করে নগদ ১ হাজার ১’শ ১ টাকা প্রদান সাপেক্ষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং পরের দিন ১০ মার্চ নীলফামীর জেলার নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে এফিডেভিট এর মাধ্যমে বিবাহের ঘোষণা দেয়। সেখান থেকে তারা বাড়িতে ফিরে আসলে বিষয়টি জানাজানি হলে সাঈমের প্রভাবশালী বাবা শারমিনকে ছেলের স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে।

পরে বিষয়টি স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ ও ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ছেলের স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে নিতে রাজি হন সাঈমের বাবা জয়নাল আবেদীন।

সে অনুযায়ী উভয় পরিবারের সম্মতিতে ১৭ মার্চ আবু সাঈম তার ভগ্নিপতি ফুয়াদ, সুরুজ, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বাকিসহ আত্বীয়স্বজনকে সাথে নিয়ে নতুন করে বর সেজে ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক রাজু, সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাফিজার রহমান, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শারমিনকে নববধূ হিসাবে শশুর মাহিদ আলীর বাড়ি থেকে আনুষ্ঠানিকের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।

স্বামীর বাড়িতে ৫ দিনের মাথায় গ্রামের প্রচলন অনুযায়ী মাহিদ আলী তার আত্বীয়-স্বজনের মাধ্যমে মাছ, দুধ, মিষ্টিসহ অন্যান্য জিনিস পাঠিয়ে মেয়ে-জামাইকে নিজ বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসেন। জামাই শশুর বাড়িতে দু-একদিন কাটার পর শারমিনকে রেখে নিজ বাড়িতে যায়। কয়েকদিন পর সাঈমের বাবা জানিয়ে দেয় তার ছেলের শারমিনকে দিয়ে কোন বিয়ে হয় নাই। শারমিনকে ছেলের স্ত্রী হতে হলে মোটা অংকের টাকা তার বাবাকে দিতে হবে।

শারমিন জানায়, সাঈম আমার সাথে প্রেম করে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে ৫ দিন পর এখন সেসহ তার বাবা-মা মোটা অংকের যৌতুকের দাবিতে আমার সাথে প্রতারণা করছে। বর্তমানে সে দু-মাসের অন্তঃসত্ত্বার কথাও জানায়।

আবু সাঈম সাংবাদিক তার সাথে কথা বলবে জানতে পেরে পালিয়ে গেলে তার বাবা জয়নাল আবেদীন এফিডেভিট ও মৌলভীর মাধ্যমে গোপনে বিয়েকে অস্বীকার করে বলেন, তার ছেলের কোন বিয়ে হয় নাই। তাই শারমিনকে তার ছেলের স্ত্রী হিসোবে বাড়িতে আনা ও যৌতুক চাওয়ার কোন প্রশ্ন আসে না।

গ্রামবাসী আমেনা, তপুরসহ অনেকে জানান, জয়নাল ভুরিয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শারমিনকে বাবার বাড়ি থেকে ছেলে স্ত্রী হিসাবে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এটাতো অস্বীকার বা লুকানোর কিছু নাই। গ্রামের সবাই বিষয়টি জানে। মাহিদ আলী ও তার স্ত্রী রেজিয়া বেগম জানান, তাদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে আবু সাঈম মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ে করে। বিষয়টি তার প্রভাবশালী বাবা প্রথমে মেনে না নিলেও পরে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সমঝোতার মাধ্যমে উভয় পরিবারের আত্বীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাঈম বর সেজে আমাদের মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। ৫ দিনের মাথায় নতুন আত্বীয়ের বাড়িতে মাছ, মিষ্টি, দুধসহ অন্যান্য জিনিস পাঠিয়ে মেয়ে ও জামাইকে বাড়িতে বেড়াতে আনি। জামাই দুদিন থাকার পর বাড়িতে গেলে তার বাবা বিভিন্ন মাধ্যমে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে। আমরা দরিদ্র তার দাবির টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করিলে জয়নাল বিয়ে অস্বীকার করে মেয়ে শারমিনকে ছেলের স্ত্রী হিসাবে মেনে নিবেনা বলে জানিয়ে দেয়। তখন থেকে মেয়ে তাদের কাছেই রয়েছে। তাদের মেয়ের জীবনে আর কোন কলঙ্কের দাগ না লাগে সেজন্য বিভিন্ন জনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছেন। কিন্তু জয়নাল প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কথায় কর্ণপাত করছে না। তারা মানবাধিকার সংগঠনসহ আইনি সহযোগিতা দেওয়া বিভিন্ন এনজিও ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক রাজু বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জয়নাল প্রথমে মেনে না দিলে মেয়ের বাবা-মা ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আপোষের জন্য তার সহযোগিতা চায়। আপোষের মাধ্যমে শারমিনকে নববধু হিসাবে সাঈম ও তার পরিবারের লোকজন এবং আত্বীয়রা মাহিদের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। বলা যায় অন্যান্য বিয়ের মতই ধুম-ধাম করে নিয়ে যায়। এখন আবার শারমিনকে মেনে নিচ্ছেনা। বিষয়টি লিখিতভাবে শারমিন আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু আবু সাঈমের বাবা সাড়া না দেওয়ায় পুনরায় সমঝোতা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হচ্ছি।