খেলাফত মজলিস : শিকড় থেকে শিখর

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ১১ ২০১৯, ০০:৩৬

হুসাইন আহমদ মিসবাহ

প্রাগুক্তি : খেলাফত মজলিস পার করেছে তিন দশক। ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় এই সংগঠনের। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পরও সংগঠনের প্রতিষ্ঠা প্রেক্ষাপট, প্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠাতা, ভাঙ্গন, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কিছু ভাই না জেনে বা অল্প জেনে ভুল তথ্য পরিবেশন করছেন। তাই জাতীর কাছে, বিশেষত খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে যারা বিভোর, তাদের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট করতেই আমাদের জানা ইতিহাস নিয়েই আজকের এই উপস্থাপনা। কারো তাথ্যিক বা তাত্ত্বিক দ্বীমত থাকলে কমেন্টে উল্লেখ করার অনুরুধ রইল।

প্রতিষ্ঠা প্রেক্ষাপট :

আশিক দশকের শেষের দিক। দেশজ ত্রিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের সামাজিকতা ত্রি-ধারায় বিভক্ত ছিল। কওমী, আলিয়া ও জেনারেল, এই ত্রিধারার লোককে কোন রাজনৈতিক দলই সমন্বয় করতে পারছিল না।

বিশেষত ইসলামী রাজনৈতিক দল। তখন দেশে অনেক ইসলামী দলের কর্ম তৎপরতা বিদ্ধমান থাকলেও, এই ত্রি-ধারারর মিলন ঘটাতে কোন ইসলামী সফল হয়নি। কিছু ইসলামী দল ছিল কওমীর চার দেয়ালে আবদ্ধ। তারা নারাজ ছিলেন এর বাইরে বেরুতে। কিছু ইসলামী দল ছিল আলিয়া ও জেনারেল শিক্ষা কেন্দ্রীক। কওমীতে ছিলনা এদের প্রবেশাধিকার।

ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কওমী থেকে, নির্দিষ্ট একটি ইসলামী দল করার কারণে বহিস্কার করা হত, তার দৃষ্টান্তও প্রচুর। যে ধারা এখনো চলমান। কওমীরা কিছু ইসলামী দলকে সমর্থন দূরে থাক, ইসলামী দলই মনে করেনা।

অপর দিকে আলিয়া ও জেনারেল ধারায় কওমী ঘরানার ইসলামী দলকে এলাউ করতো না। তাদের মতে কওমীরা কুরআন-হাদীস ছাড়া আর কিছুই বুঝেনা। তারা আবার রাজনীতি কি বুঝবে! ইসলামী বিষয়াবলীতে তাদের দিক নির্দেশনা গ্রহণ করা গেলেও এদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই।

আলিয়া ধারার ব্যপারে অনেক জেনারেল ধারার লোকের ধারণা ছিল, ওরা পুরোপুরি ভাবে না বুঝে কুরআন-হাদীস, না আছে পুরোপুরী জাগতিক জ্ঞান। কিছু ইসলাম আর কিছু জাগতিক জ্ঞান নিয়েই তাদের ঝুলি সমৃদ্ধ।

জেনারেলদের ব্যাপারে কওমী আলিয়ার অনেকের ধারণা ছিল, এরা শুধু দুনিয়াদারী নিয়েই ব্যস্থ। এদের দ্বীনদারী নেই। এদেরকে কোন ইসলামী দলে সম্পৃক্ত করা যাবেনা। ইসলামী দলে সম্পৃক্ত হবার কোন যোগ্যতাই তাদের নেই। আজও কিছু কওমী ঘরানার রাজনীতিবিদ মনে করেন, জেনারেল শিক্ষার কাউকে ইসলামী দলে সভাপতি বা সেক্রেটারি বানানো উচিৎ নয়।

অথচ বাস্তবতা হল, এই ত্রিধারাকে এক প্লাটফ্রমে নিয়ে আশা সম্ভব না হলে, বাংলাদেরশে খেলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাটাও অজ্ঞতার পরিচায়ক। এই বোধ থেকেই দেশের কিছু আলেম-উলামা, দ্বীনদার-বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ এই ত্রিধারাকে সম্পৃক্ত করে ইসলামী রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীতা উপলব্ধি করেন।

খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা :

এক : ৯০ বৎসর বয়সে এসে মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রাহ. অনুভব করেন, “একটি কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে”। সারা জীবন- তা’লিম-তায়াল্লুম, দাওয়াত-তাবলিগ ও পীর-মুরিদীর মাধ্যমে তাজকিয়ায়ে নাফস এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দিলেও খেলাফত প্রতিষ্ঠা কাজে তিনি সম্পৃক্ত হননি। কিয়ামত দিবসে যদি আল্লাহ পাক প্রশ্ন করেন, হে মুহাম্মদুল্লাহ! জীবনে সবই করলে, আমার জমিনে আমার দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কি করেছো? আমি কি জবাব দেব?

এই বোধ থেকেই হাফিজ্জী হুজুর শেষ বয়সে এসে “খেলাফত আন্দোলন” নামে একটি ইসলামী দল গঠন করেন। মানুষকে তাওবার রাজনীতির দিকে আহবান করেন। “বটগাছ” প্রতীক নিয়ে জেনারেল এরশাদের সাথে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। ইসলামপ্রিয় জনতা দেখতে পায় আশার আলো।

দুই : হাফিজ্জী হুজুর রাহ. এর খেলাফত প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বেশিদূর আগাতে পারেনি। তিনি শেষ বয়সে এসে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। আস্তে আস্তে বয়স আরো বাড়তে থাকে। অনিবার্য্য ফল হিশেবে স্মৃতিশক্তি, বোধশক্তি ও কমান্ডিং ক্ষমতা কমতে থাকে। তারই সূযোগ নেয় হুজুরের কাছের একটি মহল। বিভ্রান্ত করে হুজুরকে প্রতিনিয়ত। হুজুরের বয়সিক দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। শুরায়ী পদ্ধতি বা পরামর্শ ব্যবস্থার পরিবর্তে ব্যক্তিমতকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।

তখন হুজুরের শিষ্য, খেলাফত আন্দোলনের সিনিয়র নেতা, চৌকস রাজনীতিবিদ, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ. হুজুরকে বাস্তবতা বুঝানোর চেষ্টা করে, সফল না হয়ে, এক ঝাক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে নিয়ে হুজুরের অধিন ‘খেলাফত আন্দোলন’ থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প “খেলাফত আন্দোলন” এর ঘোষণা দেন। দল থেকে বেরিয়ে আসায় তিনি কারো কাছে নন্দিত হলে কারো কাছে হন নিন্দিত।

তিন : তখন অধ্যাপক ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের নেতৃত্বে “যুব শিবির” নামে একটি ইসলামী দল ময়দানে সক্রিয় ছিল। এই যুব শিবিরের অন্য কোন রাজনৈতিক গণ সংগঠন বা ছাত্র সংগঠনের সাথে লিয়াজো ছিলনা। অর্থাৎ যুব শিবির ছিল আপলাইন বা ডাউনলাইন শুন্য। ছিলনা যুব শিবিরে প্রোডাক্ট হিশেবে আসার মত অধিন কোন ছাত্র সংগঠন, না ছিল যুব শিবির থেকে সাপ্লাই দেওয়ার মত কোন গণ সংগঠন।

একটি কথা প্রাসঙ্গিক বলে রাখি, একমাত্র যুব শিবির কথা শুনেই এক শ্রেণী বুদ্ধিজীবী প্রচার করেন, অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের আগে জামাত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, যা ১০০% মিথ্যা। কাদের ভাই যুব শিবিরের সভাপতি ছিলেন ঠিক, কিন্তু সেই যুব শিবিরের জামাত শিবিরের রাজনীতি বা আদর্শের সাথে কোন সম্পর্ক ছিলনা। যুব শিবির ছিল, জামাত শিবিরের সম্পূর্ণ প্রতিপক্ষ একটি সংগঠন।

চার : খেলাফত আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসা শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ. এর ‘খেলাফত আন্দোলন’ এবং অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদেরের ‘যুব শিবির’ এর মধ্যে আদর্শ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মিল থাকায়, উভয় সংগঠন একত্রিত হয়ে ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারস ইনিস্টিটিউট থেকে “খেলাফত মজলিস” নামে এই দলের যাত্রা শুরু করেন।

অনুপম দৃষ্টান্ত :

খেলাফত প্রতিষ্ঠায় অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শায়খুল হাদীস ও আহমদ আব্দুল কাদের। খেলাফত মজলিসে অন্যতম এই দুই স্বপ্নদ্রষ্টা, খেলাফত গঠনের মূল উপাদান, শীর্ষ দুলের প্রধান হয়েও তারা কেউই খেলাফত মজলিসের মূল নেতৃত্বে আসেন নি। শায়খুল হাদীস হন প্রতিষ্ঠা কমিটির উপদেষ্টা আর কাদের ভাই হন যুগ্ন মহাসচিব। অথচ যুক্তি ছিল, শায়খুল হাদীস হবেন আমীর আর কাদের ভাই মহাসচিব। সেদিনই তারা প্রমাণ করেছিলেন যে, নেতৃত্বের প্রতি তাদের কোন মোহ নেই। প্রতিষ্ঠা কালীন কেন্দ্রীয় কমিটির আমীর হন মাওলানা আব্দুল গাফফার রাহ., নায়বে আমীর হন অধ্যক্ষ মাওলানা ইছহাক ও মহাসচিব হন ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসুদ খান। প্রাসঙ্গিক বলে রাখি, অনেক মাথামোটা বুদ্ধিজীবী বলেন, নেতা হয়ার জন্য শায়খুল হাদীস ও কাদের ভাই নিজ নিজ দল বাদ দিয়ে খেলাফত মজলিস গঠন করেছিন। তাদের কথা যে একেবারেই মিথ্যা, খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠা কমিটি তারই প্রমাণ।

সার্বজনীন দল :

আগেই বলেছি, আশির দশকে বাংলাদেশে সার্বজনীন কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল ছিলনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব প্রথম এবং একমাত্র সার্বজনীন ইসলামী রাজনৈতিক দলই হল ‘খেলাফত মজলিস’। আলেম-উলামা, দ্বীনদার-বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী চিন্তাবীদদের সমন্বয়ে গঠিত এই দল। খেলাফত মজলিসে আছেন, কওমী ঘরানার শীর্ষ আলেম, মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস ও আল্লামাগণ। এই দলে আছেন আলিয়ার আলেম, সুপার, প্রিন্সিপাল, অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, আল্লামাগণ। এভাবেই এই দলে আছেন, জেনারেল শিক্ষিত মাস্টার, অধ্যাপক, প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রকোশলীগণ। কলেবর বৃদ্ধি না করতে আমি কারো নাম নেইনি। কারো বুঝতে বা মানতে সমস্যা হলে কমেন্ট করবেন, আপনি চিনেন এমন নামই বলার চেষ্টা করবো।

ভাঙ্গন :

১৯৮৯’র ৮ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা লাভ করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছিল। পৌছে ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। চিরাচরিত নিয়মে এক শ্রেণীর সজাতীয় দুশমন, বন্ধুবেশী শত্রু সেটা মেনে নিতে পারেনি। শুরু করে দূরভিসন্ধি, ভাঙ্গনের ষড়যন্ত্র। এক সময় তারা সফল হয়।

সংগঠন ভাঙ্গনের পূর্ব থেকেই আমি ছিলাম উপজেলা সেক্রেটারি, জেলার শুরা সবস্য। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৪। যখন মহাসচিবকে কেন্দ্র করে ৬ মাসের জন্য কেন্দ্রীয় শুরা মুলতবী করা হয়। আমরা বিপর্যয়ের আভাস পাই। ব্যক্তিগত ভাবে আমি একাধিক কেন্দ্রীয় শুরা সদস্যের সাথে কথা বলি। সম্মানিত কেন্দ্রীয় শুরা সদস্যদের কাছ থেকে যা জানতে পারি তার সারাংশ হল-

শুরায় শায়খুল হাদীসকে আমীর নির্বাচনের পর অধিকাংশ শুরা সদস্যরা চেয়েছিলেন, অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদেরকে মহাসচিব হিশেবে। কিন্তু মাত্র ২/৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা সেটা মানতে পারেন নি। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। সাব কমিটি আলাদা বৈঠক করে এসে, তাদের প্রস্তাবনা পেশ করতে যায়, তখন সাব কমিটির অপর সদস্য চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এই পেশকৃত তালিকা তাদের নয়। এভাবে পর পর কয়েকটি তালিকা বদলানোর পরও সাব কমিটি থেকে তালিকা বদলানোর কথা উঠলে শুরা সদস্যদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে নির্বাচিত আমীর শায়খুল হাদীস ৬ মাসের জন্য শুরা মুলতবী করেন। সিদ্ধান্ত হয় ৬ মাস পর ২২ মে ২০০৫ পরবর্তী শুরা অনুষ্টিত হবে।

তার পর আসে ২২ মে ২০০৫। শুরা অধিবেশনে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে শুরা সদস্যরা ২১ মে ঢাকায় উপস্থিত হন। ২১ মে রাত ৯ টায় আকষ্মিক ভাবে পূর্ব নির্ধারিত স্থান “ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন” পরিবর্তন করে নতুন স্থান ঘোষণা করা হয়, শায়খুল হাদীসের প্রতিষ্ঠান “জামেয়া রাহমানিয়ায়”। শুরা সদস্যদের মনে আশংকার উদ্রেক হয়। অধিকাংশ শুরা সদস্য জড়ো হন কেন্দ্রীয় অফিসে। ভাবতে থাকেন ব্যাপারটি নিয়ে। কেন প্রোগ্রামের স্থান আগের রাতে চেঞ্জ করা হল? কি হচ্ছে আগামী কাল? এরই মাঝে রাত ৩টায় সাবেক মহাসচিব পুলিশ নিয়ে এসে সকল শুরা সদস্যকে জোরপূর্বক অফিস থেকে বের করে দেন। একক ভাবে দখল নেন অফিসের। শুরা সদস্যদের অশুভ আশংকা বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। কিছু পদস্থ সিনিয়ার দায়িত্বশীল কি হতে চলেছে, জানার চেষ্টা করেন। যোগাযোগ করতে চান নির্বাচিত আমীর শায়খুল হাদীসের সাথে। কিন্তু নায়েবে আমীর হয়েও আমিরের সাথে সেদিন সাক্ষাত করতে পারেননি।(কোন মাধ্যম নয়, তথ্যটি ঐ নায়বে আমীরের জবান থেকে নিজে শুনেছি) এই সিনিয়ার দায়িত্বশীলরা খোজ নিয়ে ভংয়কর তথ্য আবিস্কার করেন। তারা জানতে পারেন-

যে রোগের কারণে শায়খুল হাদীস হাফিজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলন ত্যাগ করেছিলেন, আজ তিনি নিজেই সে রোগে আক্রান্ত। তখন তিনিও অতিশয় বয়োবৃদ্ধ। হাফিজ্জী হুজুরের মত স্মৃতিশক্তি, বোধশক্তি, দূর্বল হয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে উনার কাছের, খেলাফতের গুটিকয়েক সিনিয়ার নেতা, সাদা মনের শায়খুল হাদীসকে বাকী সম্ভাবনাময় নেতাদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করেছেন। বিশ্বস্থসূত্রে জানা যায়, সকালে অধিকাংশ শুরা সদস্যকে বাইরে রেখে যখন রাহমানিয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদীসের খেলাফতের কমিটি ঘোষণা করা হয়, তখনো নাকি শায়খুল হাদীস প্রশ্ন করেছিলেন, “কমিটি ঘোষণা করছো! ইসহাক সাহেব, আড়াইহাজারী, কাদের কোথায়? ওরা আসেনি কেন?” জবাবে ঐ সব……..(বলতে পারছিনা) নেতারা শায়খুল হাদীসকে বলেছিল, “হুজুর! ইছহাক, আড়াইহাজারী, কাদের, ওরা আর আপনার নেতৃত্বে দল করবে না”। যা ছিল ঢাহা মিথ্যা। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ শায়খুল হাদীস সেটা বুঝতে পারেননি।

ঐ দিন ২২ মে বিকেলে, রাহমানিয়ায় কমিটি গঠনের পর, খেলাফত মজলিসের প্রায় ৭০ শতাংশ শুরা সদস্য চোখে পানি মুছে মুছে, অস্থিত্ব রক্ষার্থে, “হোটেল রূপসী বাংলা”য় অধ্যক্ষ মাওলানা ইছহাককে আমীর ও অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদেরকে মহাসচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০% প্লাস দায়িত্বশীল ছিলেন এই কমিটিতে। কারো মনে খটকা লাগলে, ভাঙ্গার পূর্ব সেশন ও এই কমিটির তালিকা মিলিয়ে দেখার পরামর্শ রইল।

প্রাসঙ্গিক ভাবে বলে রাখি! দল ভাঙ্গতে যারা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা কেউ আজ খেলাফতের কোন দলে নেই। ভাঙ্গা থেকে নিয়ে কিছু দিন তারা একটি খেলাফতের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পরে তারা অন্য দলে চলে যান। বর্তমানে তাদের যাওয়া সে দলেও ভাঙ্গন হচ্ছে। আল্লাহ এসব নেতা থেকে ইসলামী দলকে হিফাজত করুণ।

(আমি ইচ্ছে করে ভাঙ্গার প্রেক্ষাপটের কারো নাম আনিনি। তবে সব নাম আমার জানা আছে। কারো জানতে ইচ্ছে করলে জানাবেন)

পরিশেষে এটাই বলবো, খেলাফত গঠনে শায়খুল হাদীস ও কাদের ভাইয়ের অবদান সব’চে বেশি। কারণ-

১. শায়খুল হাদীসের খেলাফত আন্দোলন ও কাদের ভাইয়ের যুব শিবির এক না হলে হয়তো খেলাফত মজলিস নামক দলটি আলোরমুখ দেখতো না।

২. শায়খুল হাদীসের মত নন্দিত মাদরাসা শিক্ষিত আলেম ও কাদের ভাইয়ের মত জেনারে শিক্ষিত নন্দিত অধ্যাপকের মিলনে দলটি সার্বজনীনতার স্বাক্ষর রেখেছে, ফলে সল্প দিনে গণ মানুষের আস্তা কূড়াতে সক্ষম হয়েছে। একসাথে ইসলামী ও জেনারেল ধারার লোক দলটির প্রতি ঝুকে।

৩. বোখারী শরীফের বাংলা অনুবাদক শায়খুল হাদীসের ইলমী মিহারত ও লেখক গবেষক ভাষাবিদ কাদের ভাইয়ের জাগতিক জ্ঞান, ইসলাম ও রাজনীতির মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে রাজনীতি বিমুখ লোকেরাও খেলাফতের ছায়া তলে আসে।

৪. শায়খুল হাদীসের জ্ঞানগর্ভ দ্বীনী আলোচনা ও কাদের ভাইয়ের ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক বক্তব্য, লিখনী ও প্রকাশিত বই সমুহ দক্ষ কর্মী গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

তাই খেলাফত গঠন ও অগ্রগতিতে শায়খুল হাদীস এবং কাদের ভাই, কারোর অবদানকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

পাশাপাশি অন্যান্য যে সব নেতারা শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে, অর্থ দিয়ে, জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন এই সংগঠনকে, তাদের অবদান কি কোন অংশে কম? এই সংঠনের কাজ করে ইতিমধ্যে যারা মাওলার ডাকে সাড়া দিয়েছেন, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। যারা এখন কাজ করছেন, তাদের নেক হায়াত দান করুণ এবং ইখলাসের সাথে কাজ করার তাওফিক দিন। আমাদেরকেও তাদের কাতারে শামীল করুণ। আমীন।