‘খালেদা জিয়ার হাঁটার দরকার কি? তিনি কারাগারে বিশ্রামে রয়েছেন’- অ্যাটর্নি জেনারেল
একুশে জার্নাল
মে ০৮ ২০১৮, ২৩:১৫
একুশে জার্নাল ডেস্ক:
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন যে, তিনি অসুস্থ। তার হাঁটুতে অপারেশন হয়েছে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, খালেদা জিয়ার হাটার দরকার কি? তার বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন। তিনি তো কারাগারে বিশ্রামে রয়েছেন।
গতকাল মঙলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্যে সরকারপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা আদালত কক্ষে হেসে ফেটে পড়েন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির এখতিয়ারই নেই। আইন অনুযায়ী দুদকের মামলা শুনানির জন্য নিজস্ব আইনজীবী টিম থাকবে।
এই টিম নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল আইনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক উদ্দেশে শুনানি করছেন। দুদকের আইনজীবী বলেন, বয়স ও সামাজিক বিবেচনায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাজা কম দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। একই বিবেচনায় হাইকোর্টের জামিন মঞ্জুর করাও ঠিক হয়নি।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যাতে নির্বাচন করতে না পারেন সেজন্য আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুদক জামিন বাতিলের জন্য ১৯৯৪ সালের একটি মামলা উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু আমি এই বছরের একটি উদাহরণ দিচ্ছি যেখানে দুদকের মামলায় ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। আর আপনারা ফুলকোর্ট সে জামিন বহাল রেখেছেন। এ সময় আদালত ওই মামলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝিনাইদহের সাবেক এমপি মশিউর রহমান। তিনি আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল করেন। মোহাম্মদ আলী ভারতের আদালতের আদেশের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের জবাবে বলেন, ভারতের হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, সেই দেশের সুপ্রিমকোর্ট সেই আদেশ বহাল রেখেছে। তিনি বলেন, মামলায় কিছু থাকুক আর নাই থাকুক যেনতেনভাবে খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে হবে এটাই মূল উদ্দেশ্য। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্যই এটা করা হচ্ছে
এর মধ্যে এদিন অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের আইনজীবী বক্তব্য শেষ করেছেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী বক্তব্য শুরু করলে আদালত শুনানি মুলতবি করেন। আজ অবশিষ্ট বক্তব্য শুনবেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি চলছে।
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য বাইরের কোনো হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো যাবে না। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এরপর বেলা একটার দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জামিন বহাল রাখার ব্যাপারে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। বেলা সোয়া একটার দিকে শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, যদি দেখা যায় মূল আপিলের শুনানি শুরু করতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারে। তাও এত অল্প সময়ে নয়। এমন যদি হতো খালেদা জিয়া দুই বা আড়াই বছর কারাগারে রয়েছে সেক্ষেত্রে জামিন বিবেচনা করলে আপত্তি থাকত না।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম, মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়িয়ে বলেন, এটা জামিন আবেদনের শুনানি। এখানে মামলার বিষয়বস্তু আসতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন।
এ পর্যায়ে আদালত শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেন। শুনানির সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খানসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।