খানকায়ে মাদানী:ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় ভেসে আসে জিকিরের সুমধুর ধ্বনি
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ১১ ২০১৯, ০০:২১
জুনাইদ আহমদ
ভোরের আলো এখনো ফুটেনি।খানিকক্ষণ পর পূর্বাকাশে সুবহে সাদিকের শুভ্র আভা দেখা যাবে।সাহরী শেষে ওজু করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোরের সিগ্ধ হাওয়ায় গা শীতল করছিলাম।
নীরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে পুরো জামিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী ক্যাম্পাস।হঠাৎ মৃদু বাতাসের সাথে ভেসে আসলো জিকিরের সুমধুর আওয়াজ।প্রথমে ঠিক বুঝতে পারিনি আওয়াজটা কিসের,কোত্থেকে আসছে?
কান লাগিয়ে রইলাম।শুনতে পেলাম দারুল উলুম হাটহাজারীর খানকায়ে মাদানী থেকে সমস্বরে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু,লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু। ইল্লাল্লাহু ইল্লাল্লাহু ইল্লাল্লাহু।আল্লাহু আল্লাহ,আল্লাহু আল্লাহ’র আওয়াজ ভেসে আসছে।
খানকায়ে মাদানী;আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট,শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহু কর্তৃক পরিচালিত ইসলাহী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
স্বীয় পীর ও মুর্শিদ,শায়খুল আরব ওয়াল আজম শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদনী রহ.এর নমুনা ও তরিকায় এ খানকা পরিচালনা করেন শায়েখ।
শায়খের খলিফা মুফতী আহমাদ মোস্তফা ভাই থেকে জেনেছি,বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শায়খের মুরিদগণ খানকায়ে মাদানীতে এসে তাযাকিয়ায়ে নফস তথা আত্নপরিশুদ্ধ করেন।এছাড়াও হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্রদের জন্যও খানকাহে আত্মশুদ্ধির লাইনে মেহনতের আম অনুমতি রয়েছে।
ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া, মৃদু বাতাসের সাথে ভেসে আসা জিকিরের আওয়াজটা কি অসাধারণ,মনোমুগ্ধকর ও সুমধুর ছিল তা আমার ভাষা শৈলীতে প্রকাশ সম্ভব নয়।কলিজা শীতল কারী আওয়াজ।
খানাকায়ে মাদানীতে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা.এর মুরিদগণ ছাড়াও হাটহাজারীর ছাত্ররা শরীক হয়।সেখানে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়া’লার দরবারে দুআ মোনাজাত ও কান্নাকাটির পর বারো তাসবীহের আমাল করা হয়।
খানকাহে মাদানীতে জিকির বিল জেহের বা অতি উচ্চ আওয়াজে জিকির করা হয় না।ভোর রাত্রে চতুরদিক নীরব থাকায় ও জিকির কারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় খানকার চার দেয়াল বেরিয়ে হালকা হালকা আওয়াজ বাহিরে আসছিল।
আত্মশুদ্ধি বড় একটি বিষয়।এর দ্বারা অন্তরের যাবতীয় রোগ ব্যধি দূর হয়।অন্তর হয় নুরানী-আলোকিত।গুনাহমুক্ত জীবন ফিরে পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে। এ-কারণে আল্লাহ তাআলা দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
يا ايهاالذين امنوا اذكرواالله ذكرا كثيرا وسبحوه بكرة واصيلا…
“মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর।” [সূরা আহযাব ৪১,৪২]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না।” [সূরা আরাফ ২০৫]
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :-জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)।“[তিরমিজি:৩২৯৯]
মানুষ পাপাচারের মাধ্যমে আত্মাকে কলুষিত করে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মাকে কলুষমুক্ত করা যায়। আল্লাহর প্রতি ভয় তথা তাকওয়ার গুণ অর্জন করার মাধ্যমে আমরা আত্মশুদ্ধির কাঙ্ক্ষিত পথে যেতে পারি।
মানুষের মনুষ্যত্ব নির্ণীত হয় চরিত্র দিয়ে। আর চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে তার আত্মা। কাজেই জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে আত্মার শুদ্ধতার ওপর। কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا- وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
‘নিঃসন্দেহে সে সফল হয়েছে, যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর ব্যর্থ হয়েছে সে, যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে।’ (সূরা শামস : ৯-১০)।
এহসান ও তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন করার নামই হলো ত্বরীকত।
আমাদের আকাবিরীন(পূর্বসূরিগণ)ইলমে জাহের তথা বাহ্যিক ইলম অর্জনের পাশাপাশি ইলমে বাতেন তথা আত্মশুদ্ধির
জ্ঞান লাভ করতেন।আমাদের জন্যও জরুরী ফারেগ হওয়ার পর একজন খাটি পীরে কামেলের হাতে বাইয়াত হয়ে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করা।
আল্লাহ তায়া’লা শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহুকে কবুল করুন।এবং আমাদেরকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের তাওফীক দান করুন, আমিন।