ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শোভন-রব্বানীর চিঠি
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ১৩ ২০১৯, ১৭:৩৫
সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে। এরপরই এই দুই ছাত্রনেতার গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়। তারা কয়েক দফা গণভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এসব অভিযোগে প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সংগঠনের প্যাডে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণসহ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার একজনের কাছে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ সম্বোধন করে বলা হয়েছে-
আপনি বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত কিছু ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের ব্যর্থতা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বাইরেও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে আপনি নিজে পছন্দ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে আমরা একটি বিশেষ মহলের চক্ষুশূল। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে ও প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সুকৌশলে আপনার এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কান ভারী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আপনার সন্তানরা এতটা খারাপ না। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি বারবার। অনেক অব্যক্ত কথা রয়েছে, যা আপনাকে বলার কখনও সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রুত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৃত সত্যটুকু উপস্থাপনের সুযোগ চাই।
অভিযোগ-১ :২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নতুন পার্টি অফিসে আপনার আবেগের ঠিকানায় আমাদের ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আপনার আমানতকে সযত্নে রেখেছি। অফিস অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করা নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দায়িত্বপ্রাপ্ত শাহজাহান ভাই চায় না ছাত্রলীগ এখানে থাকুক। লোক দিয়ে বাইরে থেকে ময়লা ফেলে, বাথরুম ও দেয়াল অপরিচ্ছন্ন করে সেগুলোর ছবি তুলে আপনাকে দেখানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মিন্টু ভাই, লোকমান ভাই এবং ক্লিনার জাবেদ ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।
অভিযোগ-২ :২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনের দেরি প্রসঙ্গে- ১৮ জুলাই আপনি দেশের বাইরে যাবার আগে অনুমতি নিয়ে ১৯ তারিখ আম্মুর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এবং সভাপতি মাদারীপুর গিয়েছিলাম। ওই দিন সারারাত নির্ঘুম জার্নি আর বেশ কয়েকটি পথসভা (সর্বশেষ সকাল ৮টায় সাভারে) করে সকাল ৯টায় ঢাকা ফিরি। রেস্ট নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১২টার সম্মেলনে পৌঁছাতে আমাদের ৪০ মিনিট দেরি হয়, যা অনিচ্ছাকৃত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই অবগত। সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার বিষয়টিও অতিরঞ্জিত। গত ১ বছরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচিতে (সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত) আমরা উপস্থিত থেকেছি এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ডাকসুর জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে কম উপস্থিতি নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা অতিরঞ্জিত।
অভিযোগ-৩ :জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার কাছে ভিন্নভাবে উত্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
সবকিছুর পরেও আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মানবতার মা। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেওয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই।