ক্ষমা করে দিও প্রিয় বন্ধু শাহাদত
একুশে জার্নাল
মে ০৬ ২০১৯, ১০:৩৬

হাবীব আনওয়ার
৫ ই মে’র রাতের ভয়াবহ নারকীয় হামলার খবরে মর্মহত সারা দেশসহ হাটহাজারীবাসী।শোকে কাতর সবাই।রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা।রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশি পাহাড়া।সবার মাঝে আতংক।বিভিন্ন জনকে নাজেহাল করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।নিরাপদ বলতে কোন কিছু আছে বল মনে হচ্ছে না! ৬ই মে ২০১৩ ইংরেজী তারিখে আমরা যারা মাদরাসায় ছিলাম তারা ক্লাসে বসে বিভিন্ন দুআ দরুদ পড়ছিলাম। চিন্তা আর উৎকন্ঠায় সকলের মাঝে আতংক। প্রতিশোধের আগুনে সবাই দগ্ধ হচ্ছে। সকাল থেকে আমাদের সাথেই পড়া লেখায় ব্যস্ত ছিলেন শাহাদাত। কতগল্প আর ইতিহাসের কথা বললো। ৫ মের রাতের শেই নৃশংসতার কথা স্মরণ করে কেঁদে উঠেছিল। দুপুরের বিরতিতে বাড়িতে গিয়েছিল খাবার খেতে। কিন্তু এটাই যে শেষ যাওয়া এটা জানাছিল না! দুপুরের খাবার খেয়ে মাদ্রাসার পথও ধরেছিলো বন্ধু “শাহাদত হোসেন”। হাটহাজারী বাসস্ট্যান পৌঁছাতেই খবর পেলো আল্লামা শাহ আহমাদ শফী’কে গ্রেফতার করেছে জালিম বাহিনী।থমকে দাঁড়ায় শাহাদত।এমন দুঃসংবাদ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে! কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না! এমন সময় দেখতে পান হাজার- হাজার তৌহিদী জনতা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে।নারায়ে তাকবিরের আওয়াজে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলছে।শাহাদত চৈতন্য ফিরে পেল।সারা শরীরে তারুণ্যের আবাহ বয়ে গেল।প্রতিশোধের দিপ্ত শপথ নিল।আল্লাহ, রাসূল ও দ্বীনের ধারক-বাহক উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধাচারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরবে না।প্রয়োজনে শহিদ হবে, তবুও পিছু হাটবে না।যেমন ভাবনা তেমন কাজ। মুষ্টিবদ্ধ হাত। হৃদয়ে শাহাদতের তামান্না। দু’চোখে জান্নাতের দৃশ্য। হুরদের হাতছানি আর দু’কানে ভেসে আসছে হুরে গেলমানের অভ্যর্থনা। মুখে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে শ্লোগান। ছুটে গিয়ে শরীক হলো মোবারকময় মিছিলে। মিসে গেলো শহিদী তামান্নায় উজ্জবিত হাজারো মানুষ ভিরে। মনের একটাই আশা, হয়তো শাহাদত, না হয় রাসূলের দুশমনের ফাঁসি।চলছে প্রতিবাদ মিছিল। চলছে প্রতিবাদ।মিছিলকারীরা তখন হাটহাজারী মাদ্রাসার সমনে, এমন সময় একদল হায়োনার বুলেটের আঘাতে ঝরে পড়ে ৬টি তরুতাজা প্রাণ। জীবনের তরে পঙ্গু হয়ে যায় বেশ কিছু রাসূল প্রমিক। মুহুর্মুহু গুলিতে ভাড়ি হয়ে উঠে ইলমের নগরী হাটহাজারীর আকাশ-বাতাশ। ডুকরে কেঁদে উঠেন হাজারো পরিবার। সেদিন শহীদ হোন প্রিয় বন্ধু শাহাদত।সেই স্মৃতি আজো আমায় কাঁদায়। আজো বাতাসের সাথে ভেসে আসে টিয়ার সেল আর বারুদের গন্ধ। যখনি প্রিয় বন্ধুর গুলিবৃদ্ধ জিসিমটা চোখের সামনে ভেসে উঠে তখনি ডুকরে কেঁদে উঠি। অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হই। লজ্জায় দু’চোখের কোনা বয়ে নেমে আছে অশ্রুর জোয়ার। ক্ষমা করে দিয়ো হে শহিদ বন্ধু,হে প্রিয় বন্ধু শাহাদত।তোমার জন্য আমরা কিছু করতে পারিনি। তবে বিচারের আশায় আজ অপেক্ষায় করছি।
প্রিয় বন্ধু, হাশরের ময়দানে ভুলে যেয়ো না। আল্লাহ তোমাকেসহ সকল শহীদদের কবুল করুন।
লেখক: শিক্ষার্থী, মেখল মাদরাসা হাটহাজারী চট্টগ্রাম।