ক্বলবের খোরাক জোগানোর মজলিসে রাজনৈতিক গুরুগম্ভীর আলাপ বেমানান

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ০১ ২০১৯, ১৭:৩৬

মুফতী আবদুল্লাহ তালহা:: চরমোনাই পীর সাহেব ও তরিকা নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু বলতে চাই। নিজের ভালোলাগা মন্দলাগার অনুভূতি শেয়ার করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি, উগ্র মুরিদান ভুল বুঝবে। হামলে পড়বে। এজন্য আর কিছু লেখা হয় না। এক ইতাআতি ফিতনা নিয়েই চাপের মধ্যে আছি। হুমকি-ধামকি সহ্য করে যেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চরমোনাই নিয়ে কিছু বললে তো দুদিকের চাপ সৃষ্টি হবে। কী দরকার! তবে বিবদমান বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু না বললেই নয়, তাই বলছি।

আমি যদ্দুর জানি, চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব হুজুরকে সবাই সম্মান করতো। কিছু রাজনৈতিক দর্শনের বিরোধ থাকলেও, তার থেকে দ্বীনের বিষয়ে মারাত্মক ধরণের কোনো বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হলে শুনতাম। অবশ্য তাঁর রচিত কোনো বই পড়ারও সুযোগ হয়নি।

অনেক ছোট বেলায়, যখন হিফজখানায় পড়ি, তখন একবার হযরতকে খুব নিকট থেকে দেখেছিলাম। সে সময় হযরতের প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধাবোধ হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। এরপর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করার পর যারাই চরমোনাই সম্পর্কে জানতে চেয়েছে, বলেছি হক্কানী দল।

শুনেছি, হাটহাজারীর হযরত যেখানেই তাঁর একজন খলিফা আছে, তাকে বাইয়াতের আমল শুরু করতে বলেছেন। কারণ, গাঁও-গ্রামে যে হারে ফকির-ভণ্ডের প্রাদুর্ভাব হয়েছে, তাতে হকপন্থী কেউ যদি পীর হয়ে যান, তাহলে অন্তত সেসব ভণ্ডদের হাত থেকে মানুষ নিস্তার পাবে।
দৃষ্টিভঙ্গিটা সুন্দর ও যথাযথ। এজন্য অনেক হক্কানী পীরের অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলেও, আমরা ঢালাওভাবে কিছু বলি না।
বলা মুনাসিবও মনে করি না আমি।

এসব কারণে বরাবরই আমার নিয়ম হলো, হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের সাথে সুসম্পর্ক রাখে, এমন প্রত্যেক পীরকেই ভালো বলি। কেউ পরামর্শ চাইলে যাওয়ার জন্য তারগীব দিই।

কিন্তু, উসূলে দ্বীনের ক্ষেত্রে বিকৃতি সাধন ও বিচ্যুত চিন্তা-ভাবনা লালন করা মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক একটি বিষয়। যা এতাআত ইস্যূতে হযরত আব্দুল মালেক সাহেব হাফি. ‘র মাকালা পড়ে আরও স্পষ্ট হয়েছে আমার কাছে।

আমি জানি, আমার দ্বারা দ্বীনের বৃহৎ কেন, ছোটো কোন খেদমত হয়নি। হচ্ছে বলেও মনে হয় না। এটা আমার অত্যন্ত সাফ অনুভূতি। কিন্তু আমার দ্বারা দ্বীনের বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য প্রত্যাখ্যাত কোনো বিষয় ছড়িয়ে যাবে, এটা আমার ধ্বংসের কারণ হবে নিশ্চিত। এক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে আমাকে- সবসময় ভাবি।

অনেক কথা। সংক্ষেপে শেষ করছি। একথা হয়তো অনেকেই মনে করেন, বিশেষ করে দলীয় যারা আছেন তারা ভাবেন- ‘আমাদের যত হাজার/লক্ষ কর্মী আছে। এসব দু‘পাঁচজন কর্মী না হলে বা সাপোর্টার না হলে কী আর ক্ষতি হবে!’
সেসব ভাইদের একটি বিষয় স্মরণ রাখা জরুরি, এই দু‘চারজন ব্যক্তি, যারা সঙ্গত কারণে আপনার নেতার বা পীর সাহেবের ভুল তুলে ধরেছেন, তাদের না আসাতে আপনাদের বাহ্যত কোনো ক্ষতি হয়তো হবে না। কিন্তু পরকালে আল্লাহর দরবারে দ্বীন বিকৃতির ও এতোগুলো মানুষের মাঝে বিচ্যুত চিন্তা-চেতনা ছড়ানোর কী হিসেব দিবেন?

এখন হয়তো বলবেন, আমাদের হযরত তো প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন!
বেশ ভালো, অত্যন্ত জরুরি কাজ করেছেন। সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আমিও অত্যন্ত খুশী হয়েছি।
তবে, একটা প্রশ্ন করি-
আল্লাহ কি কোথাও বলেছেন যে, তিনি তাঁর রাসূলকে সত্যবাদিতার গুণের কারণে রিসালাত দান করেছেন? কোনো তাফসীর বা তারিখের কিতাবে কেউ কি এমন কোনো মন্তব্য করেছে?

শেষ কথা- যে তাত্বিক বিষয় নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হতে পারে তা বলার কী দরকার এতো সহস্র মানুষের মজমায়। প্রত্যেক পীর সাহেবই যদি তাদের সিলসিলার বড়দের বক্তব্যগুলো ভালো করে পড়েন আর সে বিষয়ে কোরআন-হাদীসের কয়েকটি নস উল্লেখ করেন, তাহলেও তো মুরিদগণ ঈমান-আমলে সঞ্জীবিত হয়ে ওঠবেন। আর যেখানে ক্বলবের খোরাক দরকার, সেখানে রাজনাীতির গুরু-গম্ভীর আলাপ আমার কাছে একেবারে বেমানান মনে হয়।

আল্লাহ হেফাজত করুন। আমাদের সবাইকে এক ও নেক হয়ে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।