কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
একুশে জার্নাল ডটকম
জুন ১৯ ২০২২, ১৫:২৪
রোকন সরকার, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ জেলার ১৬ টি নদনদীর পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের তীব্র সংকট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে,রোববার (১৯ জুন) বিকাল টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদ-নদী বিধৌত এ জেলাটিতে বন্যায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোর মানুষজন।বিশেষ করে শতাধিক দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাঁচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে অনেকেই ঘর-বাড়ি ভেঙে নিয়ে উঁচু স্থানে তুলে রাখছেন।
অনেকের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করে খেতে পারছেন না তারা। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পনি ও স্যানিটেশনের সংকট দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। পানি বৃদ্ধির ফলে এসব এলাকার অনেক পরিবারই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বন্যা কবলিত এসব এলাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, এক হাজার দুইশ বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন এবং পানির তোড়ে আরাজিপাড়া, রলাকাটা ও চর যাত্রাপুরের ৬০ পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নের মশালের চর ও পূর্বমশালেরসহ সবমিলে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এরমধ্যে কিছু পরিবার ফকিরের চরে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, তার ইউনিয়নের পাচঁ ভাটিয়া পাড়া, কাঁচকোল বাজার, দফাদার পাড়া, কয়ার পাড়, ফকিরের হাট এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, রৌমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বানভাসী এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্যে ও জ্বালানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বানভাসী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।এই পরিস্থিতিতে উপাজেলা প্রশাসন থেকে রৌমারীতে ৬ হাজার এবং সদর উপজেলায় প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১ হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত শুরু হবে।