কুরবানীর তাৎপর্য ও আহকাম
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ২৩ ২০২০, ০০:২০

মাওলানা হাফিজ আবদুর রহমান: “কুরব” বা কুরবান শব্দ থেকে কুরবানির উৎপত্তি।যার অর্থ নৈকট্য। দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য আত্মোৎসর্গ করাই হলো কুরবানী।
আর শরয়ী পরিভাষায় কুরবানি বলা হয়,একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট জানোয়ার যবেহ করা। সুতরাং কেউ যদি গোশত খাওয়া বা অন্য কোন নিয়তে কিংবা রুসম-রেওয়াজের ভিত্তিতে, বা না দিলে লোকে কি বলবে ইত্যাদি কোনো ইচ্ছায় কোরবানি দেয়, তবে তার কোরবানি কবুল হবে না। বরং আজাবের কারণ হবে।
কোরবানির সূচনা: পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকে কুরবানি চলে আসছে। প্রত্যেক নবীর উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কুরবানী প্রথা চালু ছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে কারীমে বলেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর বিধান নির্ধারণ করেছি, যাতে করে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময় তার নাম নেয়। (সূরা হজ্জ আয়াত 34)
কুরবানির এধারা পৃথিবীর প্রথম মানব আমাদের সবার আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর সময় হতে শুরু হয়, তার সন্তান হাবিল ও কাবিলের মধ্যে নিকাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে পিতা আদম (আঃ) আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে আন্তরিক ভাবে কুরবানী করার আদেশ দেন, পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আপনি তাদেরকে পাঠ করে শুনিয়ে দিন আদমের পুত্রদ্বয়ের ঘটনা, যখন তারা উপস্থিত করল এবং তন্মধ্য হতে একজনের (হাবিলের) কুরবানী কবুল হল এবং অপরজনের কবুল হলোনা। অপরজন (কাবিল) বলতে লাগল-আমি তোমাকে নিশ্চয়ই হত্যা করব; প্রথমজন বলল, আল্লাহ আল্লাহ ভীরুদের আমল কবুল করে থাকেন (সূরা মায়েদা- আয়াত ২৪)
সেই থেকে কুরবানি শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ইসলাম ধর্ম ছাড়া বাকি ইয়াহুদ খ্রিস্টান হিন্দু ইত্যাদি ধর্মেও যার যার নিয়মে কোরবানি রয়েছে। তবে একমাত্র ইসলাম ধর্মে এর সার্বজনীন গুরুত্ব রয়েছে। কুরবানী ইসলামের একটি অন্যতম ইবাদত নিদর্শন ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
(এখানে আয়াতের প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলতে হয়, কাবিল হাবিল কে সম্পূর্ণ অনৈতিক দুনিয়া লোভে আপন ভাই হাবিলকে হত্যা করেছিল। আর সেই পৃথিবীর সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটানোর প্রতিষ্ঠাতা। তাই বিস্তর ব্যাখ্যায় তাফসীর কারকগণ বলেন, কেয়ামতের আগ পর্যন্ত দুনিয়ার মাঝে যত অনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটবে, প্রত্যেক হত্যাকাণ্ডের এক অংশ পাপ কাবিলের কবরে পৌঁছতে থাকবে। আর কুরআনের ফরমান, ইচ্ছাকৃত হত্যাকারী জাহান্নামী (সূরা নিসা)
এবার আসি ধারাবাহিক কথায়, আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ইসলাম ধর্মে কুরবানী কোন রূপকথা নয়, এটা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাই নামাজ-রোজা সাদাকা ইত্যাদি এবাদাত যেমন আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে হয় না। তেমনি কুরবানী ও আল্লাহর উদ্দেশ্য ছাড়া হলে আদায় হবে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আপনার রবের জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী করুন (সূরা কাউসার-২)
অন্যত্র বলেন,তিনি বললেন নিশ্চয় আমার নামাজ আমার কুরবানী আমার জীবন এবং আমার মরণ সবই সারা জাহানের পালনকর্তার জন্য (সূরা আনআম)
কোরবানির জন্য অন্তরের ইখলাসিয়্যাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা যে কুরবানী করি, তার রক্ত গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু নিয়ত এবং তার মহান আনুগত্যের আবেগ ও স্পৃহা।
যেমন আল্লাহ তা’আলার ফরমান, আল্লাহ তাআলার নিকট কোরবানির পশুর গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।
আমরা কার অনুসরণে কুরবানী করি
আমাদের কুরবানী ও হজ্জ প্রবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে আল্লাহর খলীল হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর চিরন্তন স্মৃতি। ইবরাহীম (আঃ) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্রকে ৮০ বছর বয়সে পাওয়া ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, এবং পুত্রও একই উদ্দেশ্যে নিজের গলা পেতে দিয়ে এক মহান আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যা দুনিয়ার ইতিহাসে কেয়ামত তক এমন হবে না।আল্লাহর কোরআনের বিস্তারিত বিবরণ সুরা ( সাফফাত ১০০-১০৫) আয়াত সমূহে রয়েছে।
বর্ণিত আছে, লাগাতার দিন রাত্রে ইব্রাহিম (আঃ)কে তার প্রিয় জিনিস আল্লাহর রাহে কুরবানী করার জন্য স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে প্রতিদিন ১০০টি করে উট কোরবানি করেন, কিন্তু পরবর্তী আবার দেখানো হয়, আপনার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি আল্লাহর রাহে কোরবানি করার জন্য। পরে আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, আর তো কোন জিনিস এত প্রিয় নয় একমাত্র আমার সন্তান। আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন সেটাই চেয়ে ছিলেন, তাই একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার জন্য তিনি উদ্যোগী হয়ে গেলেন। পিতা-পুত্রের এই মহান ত্যাগ রাব্বুল আলামিনের যারপরনাই পছন্দ হয়।
যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহতালার হুকুমে ইসমাইল (আঃ) কে জবাই করতে শুরু করলেন,তখন হযরত জিবরীল (আঃ) জান্নাত থেকে একটি দুম্বা নিয়ে এলেন। ইব্রাহিম (আঃ) নিজ পুত্রকে জবাই করে ফেলেন কি-না এ আশঙ্কায় তিনি বলে উঠলেন “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার”
ইব্রাহিম (আঃ) তাকে দেখে বলে উঠলেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার” আর ইসমাইল (আঃ) ফিদিয়া সম্পর্কে যখন জানতে পারলেন তখন খুশিতে বলে উঠলেন “আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ” (দূররে মুখতার)
তাদের উচ্চারিত কালিমাটির সমষ্টিই সুন্নতে ইব্রাহিমী হয়ে আজও ঈদুল আজহায় বার পঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার পড়তে হয় । পুরুষ মহিলা সবার জন্য পড়া ওয়াজিব।সেই অনুসরণে আমাদের ধর্ম ইসলামে আল্লাহ তা’আলা তা জুড়ে দিয়েছেন। সেই হিসেবে জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ কারণবশতঃ কুরবানী করতে না পারলে ১১, বা ১২ তারিখে যে কুরবানী করি, সেই স্মৃতিচারণে করা হয়।
আসুন এবার জিলহজ্ব মাসের সংক্ষিপ্ত মর্যাদা নিয়ে কিছু আলোচনা করি
জিলহজ্বের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী দেয়ার আগ পর্যন্ত কুরবানি দাতার জন্য হাত পায়ের নখ ও শরীরের কোন পশম না কাটা উত্তম। হাদীসে আছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তোমাদের মধ্য থেকে যে কুরবানি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত আপন চুল নখ ইত্যাদি কর্তন করা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম শরীফ- ৫০৯১)
উল্লেখ্য যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব না হওয়ায় কুরবানী করবে না, তারাও যদি তা মানে তাহলে তাদেরও কুরবানি দেয়ার মত ছাওয়াব হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের নেক আমলের চেয়ে অন্য যেকোনো দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, জিহাদও নয় কি? তিনি বললেন জিহাদও নয়। তবে ওই ব্যক্তি যে, নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়েছে আর ফিরে আসেনি, তথা শহীদ হয়ে গেছে। (বোখারী শরীফ)
তাছাড়া কুরআনে কারীমে আল্লাহ এ ১০ দিনের কসম খেয়েছেন আর কসম খাওয়া হয় তার অত্যন্ত গুরুত্ব বোঝানোর জন্য। এ দশ দিনের মধ্যেই ফরজ বিধান হজ্জের বিশেষ কাজগুলা পালন করা হয়। ৯ জিলহজ আরাফার দিন, ঈদুল আযহার আগের দিন। এ দিনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতূ ওয়া সালাম বলেন, যে আরাফার দিন রোজা রাখে এর এক বছরের আগের পরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (মুসলিম শরীফ- ২৭৩৯)
উভয় ঈদের রাতের ইবাদতের ফজিলত ও অনেক বেশি। হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়া সালাম বলেন,যে ব্যক্তি সাওয়াবের প্রত্যাশায় দুই ঈদের রাতে ইবাদত করবে, তার অন্তর কঠিন দিনেও মরবে না, যেদিন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কারণে সব অন্তর মৃত্যুবরণ করবে। (তারগীব ও তারহীব ২/৩৮৪)
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন বালেগ মুকিম যার মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সমপরিমাণ যেকোনো সম্পদ রয়েছে, তার উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। সম্পদ ব্যবসায়িক মাল বা এক বৎসর মালিকানাধীন থাকাও শর্ত নয়। তবে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, ইচ্ছা করলে সেও দিতে পারবে। বরং তা সাওয়াবের কাজ হবে। কিন্তু ঋণ করে বা খুব কষ্ট স্বীকার করে কোরবানি এমন লোকের জন্য কোন ভাবে দেওয়া ঠিক নয়। কারণ ইসলাম এভাবে নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলা সমর্থন করে না।
কুরবানি দেয়ার ফজিলত ও না দেয়ার ভয়াবহতা
ইসলামে কুরবানি অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। সহীহ নিয়তে সঠিকভাবে কুরবানী দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হওয়া যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কুরবানীর দিন আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আর কোন আমল প্রিয় নয়। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং পশম ও খুর নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে যায় ।সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! মনের আনন্দে কুরবানী কর। (তিরমিজী-১৪৯৩)
ঈদের নামাজের পরে কোরবানি করতে হবে। আগে করলে আদায় হবে না। কুরবানীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না দেয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম হাদিসে বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (ইবনে মাজাহ- ৩১২৩)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পর প্রতি বৎসর কুরবানি করতেন।
কোরবানির আহকাম ও মাসায়িল
কোরবানির পশু কেমন হওয়া চাই ছাগল বা বকরি হলে বয়স পূর্ণ এক বছর হতে হবে। কম হলে চলবে না। গরু বা মহিষ পূর্ণ দুই বছরের হতে হবে। উট হলে পাঁচ বছরের হতে হবে।
দুম্বা ও এক বছরের হতে হবে। তবে ছয় মাসের উপরের হলে আর দেখতে মোটাতাজা বড় দেখালে দেয়া জায়েজ আছে। তবে ছয় মাসের কম হলে কোন ভাবে কুরবানি দেয়া ঠিক হবে না।
যে ধরনের পশু কোরবানি দেয়া হোক, সেটা সুন্দর মসৃণ সুঠাম ও নিখুঁত হওয়া চাই। কানা, খোড়া, জীর্ণ-শীর্ণ, কান কাটা বা ছিদ্র, অর্ধেক শিং ভাঙ্গা, লেজকাটা এরকম ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। (মিশকাত শরীফ- ১৪৬৫)
একজন কমপক্ষে একটি পশুর কুরবানী দিতে হবে। আর বেশি দিলেও কোনো অসুবিধা নেই। বরং ভালো।
তবে শরিকানা কুরবানি ও অনেক শর্ত সাপেক্ষে দেয়া যায়। গরু বা মহিষের সর্ব মোট ৭ জন পর্যন্ত শরিক হওয়া যায়। তবে কোনো একজনের নিয়তে সমস্যা দেখা দিলে সকলের কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ভালো হয়, এরকম শরীকানা কোরবানি না দিয়ে একটি বকরী বা ছাগল কুরবানী দেয়াটা অধিকতর শ্রেয়।
তবে সাতজন শরিক কুরবানী প্রদান রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকেও ছাবিত আছে। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর সাথে সফরে ছিলাম, যখন কুরবানির সময় হল, তখন আমরা একটি গরু ও উটে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম। (মুসলিম শরীফ- ৩১৭২)
কুরবানি করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া তথা “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলা জরুরি। আর কুরবানীর পূর্ণ দোয়া পড়া মুস্তাহাব।
কোরবানি করার নিয়ম নীতি পরিপূর্ণ জানা থাকলে কুরবানী দাতা নিজ হাতে কুরবানি করাটা সবচেয়ে উত্তম।
কুরবানির গোশত ৩ ভাগ করা সবচেয়ে উত্তম। একভাগ নিজের ঘরের জন্য। একভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। অপরভাগ গরীব-দুঃখীদের জন্য।
কিন্তু আফসোস আমরা সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেই না।
কুরবানির পশুর গোশত, চর্বি, বা চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে কসাইকে দেওয়া কোনভাবে ঠিক নয়। বরং নিজের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হবে।
ঈদুল আযহার দিনে নামাজের পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া। ঈদের নামাজ পড়ে এসে কুরবানীর জবাইকৃত পশুর কলিজা গোশত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা। খুব সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। মেসওয়াক করা। গোসল করা। আতর ব্যবহার করা। নিজের উত্তম পোষাক পরিধান করা। জরুরী কোন অসুবিধা না থাকলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। তাকবীরে তাশরিক শব্দ করে পড়া। এক রাস্তায় যাওয়া অপর রাস্তায় প্রত্যাবর্তন করা। বৃষ্টি বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলে ঈদগাহে নামাজ পড়া। শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে সাজসজ্জা করলেও কোন অসুবিধা নেই।
ঈদুল আযহা নিয়ে কিছু কথা
ঈদুল আযহার সাথে কুরবানির সম্পর্ক প্রায় সমমান। তাই এটাকে কোরবানির ঈদ ও বলা হয়। ঈদ মানে খুশি-আনন্দ। আযহা অর্থ কুরবানি বা আত্মোৎসর্গ। ঈদুল আযহার একত্রে অর্থ দাঁড়ায় আত্মোৎসর্গের খুশি। আসলে মুসলমানদের কোনো আনন্দ ফুর্তি অনর্থক নয়। হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম বলেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সাথে হাসিখুশির সাথে সাক্ষাত করাটাও সোওয়াবের কাজ সাদাকা স্বরূপ।
এ ঈদের খুশি সাধারণ খুশি নয়। এটা হচ্ছে মহান ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় কর্তব্য সম্পাদনের খুশি,যার মাধ্যমে তাকওয়া হাসিল হয়। অন্তরের পশুত্বের কোরবানী হয়। এছাড়া শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে আনন্দ উল্লাস ও সাজসজ্জা করতেও ইসলামে বারণ করে নাই। তবে আমাদের এ অত্যাধুনিক সমাজে পর্দা লঙ্ঘন করে ঈদের দিনগুলোতে বা সব সময় ও যে সাজসজ্জা বা বেড়ানো হয়, অবস্থা দেখে শয়তানও অনেক দূরে পালায়। এ ব্যাপারে প্রত্যেক অভিভাবক তাদের ও সন্তানদের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে, না হলে আল্লাহর কঠিন আযাবে লিপ্ত হতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, পূর্বেও বলা হয়েছে, কুরবানীর মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর রেজামন্দি বা তাকওয়া হাসিল করা। আর যেখানে অহংকার বা লৌকিকতা বিদ্যমান থাকে সেখান থেকে ইখলাস বা তাকওয়া প্রস্থান করে। অধুনা সমাজের অনেককে দেখা যায়, তাদের প্রভাবশালীতা বা টাকার গরমে কুরবানীর পশু কিনতে ও প্রতিযোগিতা করে। যদি দুনিয়ার হীন উদ্দেশ্য বা লোক দেখানো নিয়তে বড় মোটা পশু কোরবানি বা অমুক দিয়েছে তিনটা আমি দিব পাঁচটা এরকম কোন অশুভ নিয়তে কেউ কুরবানি করে, তবে আদৌ তার কুরবানি কবুল হবে না। বরং এরকম কুরবানী তার আযাবের কারণ হতে পারে।
তাই আমাদের পণ হোক, একমাত্র আল্লাহর জন্য বাধ্যতামূলক গুনাহ থেকে বিরত থাকব, নেক কাজ করব,নেক কাজে প্রতিযোগিতা করবো, আমিত্ব আর লৌকিকতাকে না বলে পশু কোরবানির মাধ্যমে অন্তরের পশুত্বের কুরবানী করে আল্লাহর রাহে আমরন জীবন পরিচালনা করব।