কাশ্মীর জুড়ে খাদ্য সংকট
একুশে জার্নাল ডটকম
আগস্ট ০৮ ২০১৯, ১৯:০১
টানা তিনদিন ধরে কাশ্মীরে সবকিছু বন্ধ। বাজার খোলা নেই, এটিএম বুথও বন্ধ। কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না, কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। কার্যত বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই ভূস্বর্গ।
এভাবে সব কিছু বন্ধ থাকলে দরিদ্র লোকজন তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সোমবার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়। এর ফলে প্রায় সাত দশক ধরে কাশ্মীর যে বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছিল তা হারাতে হলো।
এর আগে রবিবার মধ্যরাত থেকে সেখানকার মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ফলে গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরের বাইরে থাকা লোকজন তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না। কাশ্মীরের ভেতরে যারা আছেন তারাও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের এমন পরিস্থিতির কারণে খাবার এবং অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছেন কাশ্মীরের মানুষ। অনেকের ঘরেই খাবার মজুদ নেই। আবার যাদের ব্যাংকে টাকা আছে তারাও এটিএম বুথগুলো বন্ধ থাকার কারণে টাকা তুলতে পারছেন না।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের আগে থেকেই শহরজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন তৈরি হতে না পারে তার জন্য আগে থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিপুল সেনা মোতায়েন করা হয় এবং তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে কে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে – সবকিছু দেখা হচ্ছে।
বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য এবং মানুষজনের চলাচলেও কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় যাদের কাছে অর্থ ছিল তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে শুরু করেন। কিন্তু এগুলোও প্রায় শেষের দিকে। আবার অনেকেই এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন সেগুলোও খরচ হয়ে গেছে। আর তুলনামূলক দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা তো খাবার বা টাকাও জমা রাখতে পারেননি। ফলে মৌলিক জিনিসপত্রের চরম সংকটে পড়েছেন তারা।
সানা নামে ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি কাশ্মীর থেকে চলে এসেছেন। তাদের কয়েকজনকে কাশ্মীর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানকার প্রায় পাঁচ-ছয়জনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা সবাই জানিয়েছেন যে, তাদের পরিবারের লোকজন না খেয়ে আছেন।
সানা বলেন, সবাই মুদি দোকান, কাঁচা বাজার এবং মশলার দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছিল। হাজার হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস স্টেশনগুলোতে গাড়ি রাখার জায়গা হচ্ছিল না এমনকি ব্যাংকগুলোতেও নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ একই সঙ্গে অনেক মানুষ এটিএম থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সহকারী সম্পাদক মুজামিল জালেল জানিয়েছেন, তিনি শ্রীনগরের আশেপাশের দশটি এলাকা ঘুরে দেখেছেন। সেখানকার কোন এটিএম বুথেই টাকা নেই। সবগুলোতেই টাকা শেষ।
এখন সেখানকার লোকজনের নিজেদের হাতে যা কিছু আছে তারা সেগুলো দিয়েই দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু অনেক দরিদ্র এলাকার লোকজনের হাতেই কোন মজুদ অর্থ নেই। ফলে তারা চরম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। কিন্তু ভারতের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এমন কথা প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, কাশ্মীর উপত্যকায় তিন মাসেরও বেশি খাবার মজুদ রয়েছে।