করোনা মহামারী থেকে বাচতে গণমোনাজাত থেকে বিরত থাকার অনুরোধ- মুফতি ওযায়ের আমীন

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৫ ২০২০, ১৪:৫৪

হাফেজ ইবনে হজর আসকালানি রহ. তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ ইন্বাউল গুমর إنباء الغمر بأبناء العمر নামক কিতাবে ৮৩৩ হিজরিতে ঘটে যাওয়া মহামারীর বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন।

মিসর জুড়ে তখন জীবননাশী মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল। জুমাদাল উখরার ঠিক মধ্যবর্তী কোন এক শুক্রবারে সাইয়্যেদ শিহাবুদ্দীন আহমদ নামের তদানিন্তন গভর্ণর মিসরসম্রাটের নির্দেশে খুঁজে খুঁজে সাইয়েদ বংশের ৪০জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে সমবেত করেন। এবং তাদেরকে পনেরো হাজার দিরহাম হাদিয়া প্রদান করে বলেন- আপনারা জামে‘ আযহারে বসে কুরআন তিলাওয়াত করুন। তারা জুমুআর নামাযের পর থেকে একযোগে তিলাওয়াত শুরু করে।

গোটা নগরীর জনগণ সেই মহামারী আক্রান্ত সময়ে জামে‘ আযহারে সমবেত হয়। চলে একযোগে তিলাওয়াত। এরপর শুরু হয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণমুনাজাত। এই গণমুনাজাত আসর পর্যন্ত সমবেত কণ্ঠে চলতে থাকে। আসরের সময় হলে সেই ৪০জন সাইয়্যেদ জামে‘ আযহারের ছাদের উপরে ওঠে। সবাই একসঙ্গে আযান দেয়। এরপর নিচে নেমে আসে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসরের নামায আদায় করে।

ইবনে হজর আসকালানি রহ. লিখেছেন, এই পুরো অনুষ্ঠানটি আয়োজিত ছিল কিছু অনারব পণ্ডিতের নির্দেশনায়। তারা পরামর্শ দিয়েছিল, ‘তাদের মাঝে যেই মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, তা এভাবে সম্মিলিত আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে দূর হয়ে যাবে। ইবনে হজর আসকালানি রহ. লিখেন,
ففعل ذلك، فما ازداد الطاعون إلا كثرة
“তাদের সেই সম্মিলিত আমলের পর মহামারীর প্রাদুর্ভাব পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছিল।”

ঐতিহাসিক জামালুদ্দিন ইবনে তাগরি বারদী রহ. (৮১৩-৮৭৪ হিজরী) তিনিও তাঁর সুবিশাল ইতিহাসগ্রন্থ
النجوم الزاهرة في ملوك مصر والقاهرة
এর মাঝে সেই দুঃখজনক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। বইটি লেবাননের دار الكتب العلمية থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনিও ইবনে হজর রহ. এর ভাষায় তাদের সেই আবেগি নির্বুদ্ধিতামূলক কর্মকাণ্ডের উপসংহার টেনে লিখেছেন,
وأنه عمل ذلك ببلاد الشرق في وباء حدث عندهم، فارتفع عقيب ذلك.
‘প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সংক্রমিত হওয়া মহামারী দূর করার জন্যে তারা যেই গণপ্রার্থনার আয়োজন করেছিল, তার পরপরই মহামারীর প্রকোপ বেড়ে যায়।’

বুদ্ধিমানের কাজ হলো, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া। হায় আমাদের আবেগ! মহান আল্লাহ আমাদেরকে হক বাতিল চেনার এবং বাস্তবানুগ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।