করোনা ভাইরাস ও মৃত্যু : প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
একুশে জার্নাল ডটকম
এপ্রিল ০৭ ২০২০, ২২:৫৬

•মুস্তাকিম আল মুনতাজ•
সাম্প্রতিকালে নোবেল করোনাভাইরাস বিশ্বময় এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের অনন্যা দেশগুলোর মত আমাদের বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিস্তার লাভ করছে। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বেশ কয়েজন মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক। যার ফলে জনমনে ভয় ও চরম আতঙ্ক কাজ করছে। তবে একজন মুসলিম হিসেবে অন্তরে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, করোনা মানেই মৃত্যু নয়! বরং মৃত্যু আমাদের নির্ধারিত সময়েই হবে। যে সময়টা একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। তার এক সেকেন্ড আগেও নয়, পরেও নয়। সেটা করোনায় আক্রান্ত হয়েও হতে পারে কিংবা করোনা ছাড়াও হতে পারে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ তায়ালা কাউকে অবকাশ দেবেন না।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১১) আল্লাহ তা’য়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের সেখানে এসেই পাকড়াও করবে। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো তবুও।’ (সূরা নিসা : ৭৮) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করেছ, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখোমুখি হবে।’ (সূরা জুম’আ : ৮)।
তাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সর্বদা মৃত্যুর কথা স্মরণ করা এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য। কেননা হাদিস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা পার্থিব সুখ-সম্পদ ও স্বাদ ধ্বংসকারী মৃত্যুকে খুব বেশি করে স্মরণ করো।’ (তিরমিজি শরিফ)। হযরত রাসূলুল্লাহ সা. আরো ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যে মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণ করে এবং সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।’ (ইবনে মাজাহ)।
করোনা ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিম্নোক্ত স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলুন। (১) করমর্দন ও কোলাকুলি থেকে বিরত থাকি। এতে অন্যের কাছ থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্বে থাকি। (২) হাঁচি-কাশি দেওয়ার আগে টিস্যু, রুমাল বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকি এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধুই। (৩) কিছুক্ষণ পরপর অন্তত ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করি। (৪) ব্যবহারের পর টিস্যু ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলি। ফেলার পর আবার হাত ধুয়ে নিই। (৫) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। জনবহুল স্থান, সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক অনুষ্ঠান পরিহার করি। (৬) চোখ, নাক ও মুখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকি। (৭) নিজের জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকি। (৮) বিদেশ থেকে ফিরলে ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে (সবার থেকে আলাদা) থাকি।
করোনা হলেই মৃত্যু হয়ে যাবে এমন বিশ্বাস পরিহার করে সবর্দা মৃত্যুর কথা স্মরণ করা প্রত্যেক ঈমানদার নর-নারীর জন্য জরুরি। জন্ম-মৃত্যুর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। তবে করোনা সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সচেতনতার পাশাপাশি
আল্লাহর নিকট সাহায্য, প্রার্থনা, তাওবা-ইস্তেগফার, ফরজ নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদসহ বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষক, সাইটুলা ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা, শ্রীমঙ্গল।