করোনা: প্রথম দেড় লাখ শনাক্ত ১১৭ দিনে, শেষ দেড় লাখ ৫৪ দিনে
একুশে জার্নাল
আগস্ট ২৭ ২০২০, ০১:১৭
করোনাদেশে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়াল। বিশ্বে ১৫তম দেশ হিসেবে তিন লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্তের তালিকায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম দেড় লাখ শনাক্ত হয়েছে ১১৭ দিনে। আর শেষ দেড় লাখ শনাক্ত হয়েছে ৫৪ দিনে। তবে কিছুদিন ধরে দেশে সংক্রমণের হার কিছুটা কমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ হাজার ৫১৯ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সব মিলে দেশে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে প্রথম এক লাখ শনাক্ত করতে সময় লাগে ১০৩ দিন। পরের এক লাখ পার হয় ৩০ দিনে। আর শেষ এক লাখ শনাক্ত হয়েছে ৩৯ দিনে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সংক্রমণের শুরুতে মার্চে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এপ্রিলে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৪ জনে। মে মাসে এটি হাজার পেরিয়ে যায়। ওই মাসে দিনে গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৭৩ জনের। জুনে এটি প্রায় ৩ গুণ বেড়ে যায়। দিনে গড়ে শনাক্ত হতে থাকে ৩ হাজার ২৭৭ জন করে। জুলাইয়ে কিছুটা কমে ২ হাজার ৯৭৩ জনে দাঁড়ায়। আর আগস্টে এখন পর্যন্ত দিনে গড়ে শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৮০ জন করে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহের হার দেখে এখনই বলা ঠিক হবে না যে সংক্রমণ কমছে। সংক্রমণের হার কমা যদি তিন সপ্তাহ ধরে অব্যাহত থাকে, তাহলে কমার কথা বলা যাবে।
তবে আগের চেয়ে করোনা পরীক্ষা কমে গেছে। তাই মাঝে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা কমে এলেও শনাক্তের হার বেড়ে যায়। জুনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হলেও জুলাইয়ে শনাক্তের হার বেশি ছিল। জুনে শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জুলাইয়ে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশে। তবে আগস্টে এটি কমে এখন পর্যন্ত ২০ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন ধরে ১৮ শতাংশ হারে শনাক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ আজ বুধবার শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত ২০ মের পরে এটি সর্বনিম্ন শতাংশের হার। যদিও শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয় গত ৮ মার্চ। এরপর প্রথম শতক পূর্ণ করতেই লেগে যায় ৩০ দিন। তারপর গতি কিছুটা বাড়তে থাকে। ৩৮ দিনের মাথায় এক হাজার এবং ৫৮ দিনের মাথায় ১০ হাজার পার করে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ১০ হাজার পূর্ণ করতে ৫৮ দিন লাগলেও পরের ১০ হাজার শনাক্ত হয় মাত্র ১১ দিনেই। তারপর সময় আরও কমিয়ে আনা হয়। ৭ দিন, ৬ দিন ও ৫ দিনে ১০ হাজার করে শনাক্ত হতে থাকে। ৩ দিনেও ১০ হাজার পার হয়েছে জুনে।
প্রথম এক লাখ রোগী শনাক্তে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে কম সময় নিলেও দ্বিতীয় এক লাখে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ১১০ দিনে প্রথম এক লাখ শনাক্তের পর দ্বিতীয় এক লাখে ভারতের সময় লাগে মাত্র ১৫ দিন। আর ১০৫ দিনে লাখ পার করা পাকিস্তান পরের এক লাখে সময় নেয় ২০ দিন। ভারত এখন শীর্ষ সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে। আর পাকিস্তানে সংক্রমণের হার অনেক কমে গেছে। তাই দেশটিতে শনাক্ত রোগী এখন পর্যন্ত ৩ লাখ পার হয়নি।
সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব দেশে নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও কমছে বাংলাদেশে। নমুনা পরীক্ষার হারে ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও অনেক পিছিয়ে আছে দেশ। এতে অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তাঁরা বলছেন, যত পরীক্ষা হবে, তত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। রোগী শনাক্ত করা না গেলে করোনার সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হবে।
ভারতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের গড় হার ৮ শতাংশ। পাকিস্তানে এটি ১২ শতাংশ। তবে পাকিস্তানে এখন শনাক্ত হচ্ছে ৩ শতাংশের কম। দেশেও করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ৯১টি ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারি ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে কিছুদিন ধরে পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ জুলাই। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। সর্বোচ্চ শনাক্তের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৬২টি নমুনা। এরপর দিনে নমুনা পরীক্ষা আর কখনো ১৬ হাজার পার হয়নি। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্তের প্রায় অর্ধেক ঢাকা শহরে। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে সংক্রমণের উচ্চ হার ছিল শুরু থেকেই। তবে দেশে করোনা শনাক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সুস্থ হয়ে গেছেন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ জন। আর এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ৮২ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা নিয়ে ব্রিফিং বন্ধ করায় ভুল বার্তা গেছে সবার কাছে। সাধারণ মানুষ ভাবছে, করোনা চলে গেছে। এটা ঠিক হয়নি। এমন ঢিলেমির সুযোগ নেই। মাঝে কমলেও এখন আবার ঢাকা শহরে সংক্রমণ বাড়ার কথা জানা যাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। সূত্র: প্রথম আলো