করোনা গুজবে সাংবাদিক’কে গ্রামবাসীর হয়রানি
একুশে জার্নাল ডটকম
মে ০৬ ২০২০, ১৫:৩৫

সাকিব আহমেদ রবি, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
করোনা গুজবে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সচিবালয় বিটের সাংবাদিক ও জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল “বাংলাদেশের সময়” এর সম্পাদক ও প্রকাশক মিনারুল ইসলামকে হয়রানি করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। সোমবার (৪ মে) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে এই ঘটনাটি শেয়ার করেন সাংবাদিক মিনারুল ইসলাম।
“একুশে জানার্ল “এর পাঠকদের জন্য সাংবাদিক মিনারুল ইসলামের সেই স্ট্যাটাসটি দেওয়া হল;
‘অনেক কষ্ট নিয়ে লিখতে বাধ্য হলাম। হায়রে আমার গ্রামবাসী! যে গ্রামবাসীর বিভিন্ন বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। শত সমস্যায় পড়লে আমার কাছে এসেছে, বিনা স্বার্থে সকলের উপকার করেছি তারাই আজ আমার বাড়িতে সদলবলে এভাবে নগ্ন হামলা করল?’ বাংলাদেশের সময়ের প্রকাশক ও সাংবাদিক মিনারুল ইসলাম ‘তাৎক্ষণিক এই কঠিন পরিস্থিতিতে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায় এসপি কুষ্টিয়া তানভীর আরাফাত ও ওসি কুমারখালী মজিবুর রহমান কে।’ ‘আমার মেঝো আপার বাসা ঝিনাইদহ শহরে। আপার তিনটি মেয়ে, বড় মেয়ে এবার ঝিনাইদহ সরকারি গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। অন্য দুই ভাগ্নি ৬ষ্ঠ শ্রেণী ও নার্সারীতে পড়ে। আমার দুলাভাই প্রবাসী। আমার আপুই একমাত্র অভিভাবক ঝিনাইদহ শহরে এই ৩ টি মেয়ের।’ ‘গত ২৭ এপ্রিল থেকে আমার বড় ভাগ্নির জ্বর-সর্দি, শ্বাসকষ্ট (সর্দির কারণে) ও গলা ব্যাথা নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঐ দিন থেকেই আমার আপু ও বড় ভাগ্নি সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিল ভাগ্নির করোনা পরীক্ষার নমুনা নেওয়া হয়। যার রিপোর্ট রবিবার (৩ মে) পাওয়া যায়। করোনা নেগেটিভ এসেছে। চিকিৎসকেরা টাইফয়েড হয়েছে মর্মে জানায় এবং আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেয়।’ গত ২৭ এপ্রিল থেকে আমার ছোট দুই ভাগ্নি (১১ বছর ও ৪ বছর) ঝিনাইদহ শহরের তাদের বাসায় অবস্থান করে। উক্ত ৪ দিনে ছোট দুইটি ভাগ্নি যে কতটা আতংক, ভয় ও কষ্টের মধ্যে তাদের বাসায় একাকি রাত কাটিয়েছে সেটা বলতেও চোখে পানি এসে যায়।
ওখানে নিকটাত্মীয় যারা ছিলেন তারাও ভয় ও আতঙ্কে বাচ্চাদের কাছে যায়নি। ওরা নিজেরাই রান্না করেছে, রাত কাটিয়েছে।’ পরে করোনা নেগেটিভ জেনে আমি গাড়িযোগে বাচ্চা দুটিকে আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় কুমারখালীতে আমার নিজ গ্রামের বাড়িতে এনেছি। ওরা আসার পর ইফতার শেষ করে বাসায় নামায পড়া শেষ করেছি মাত্র। এর মধ্যে প্রচুর মানুষের চিৎকার শুনে বাসার জানালায় চোখ রাখতেই দেখি অন্তত ৫০০ লোকের বিশাল এক জমায়েত, পরিস্থিতি বোঝার আগেই কয়েকজন চিৎকার দিয়ে ডাকছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে বাসায় ঢুকিয়ে জানতে চাইলাম কি বিষয়? তারা জানাল এখনি আপনার ভাগ্নিদের বাসা থেকে বের করে দিতে হবে।
না হলে এই উপস্থিত জনতা প্রয়োজনে বাড়িঘর উচ্ছেদ করে দিবে।’ ‘উপস্থিত গ্রামপুলিশকে বললাম প্লিজ আমাকে একটা ঘণ্টা সময় দিন। কিন্তু আমাকে কোনো সময় দেওয়া হবেনা, পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হতে দেখে আমি অনুরোধ করলাম তাহলে আমার বাসা লকডাউন করে দেন, আমরা কেউ বাইরে বের হব না।মারা গেলে পরিবার সমেত এই বাড়ির মধ্যেই মরব।কিন্তু কারো মন গলল না,তারা জানালেন দেরি করলে তারা আমার ভাগ্নিদের এই রাতেই বের করে দিবে। আমি সকলকে যে পরিমাণ অনুরোধ করেছি, সেটা ভাবতেও কষ্ট লাগছে, যাদের বিভিন্ন সময় পাশে দাঁড়িয়েছি, তারাই আজ আমার বাড়িতে সদলবলে আক্রমণ করতে এসেছে! কয়েকজন জোরপূর্বক বাসার মধ্যে ঢুকে পড়তে যাচ্ছে।
বাসায় আমার স্ত্রী, দুই ভাগ্নি ও আমার আম্মা গেট বন্ধ করে ভয় ও আতংকে কান্নাকাটি শুরু করেছে।’ ‘এ রকম পরিস্থিতিতে আমি একপ্রকার দিশেহারা, কোনো উপায় না পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া তানভীর আরাফাত মহোদয়কে জানায়। এসপি মহোদয় তাৎক্ষণিক আমাকে আস্বস্ত করেন ও ওসি কুমারখালী মহোদয়কে নির্দেশ দেন।’
‘পরে ওসি কুমারখালী তাৎক্ষণিক আইসি বাঁশগ্রামকে নির্দেশনা দেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। পুলিশের তাৎক্ষণিক সহযোগিতায় উদ্ভট এই পরিস্থিতি থেকে আমি ও আমার পরিবার রক্ষা পাই।’ ‘করোনার এই পরিস্থিতিতে এ রকম অমানবিক ঘটনা যারা ঘটাল এবং সমাজের যে মোড়লেরা উস্কানি দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিচার কি পাব আমি?’ পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় কুশলীবাসা গ্রামবাসীকে মুলত ২ টি পরিবার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। গুজব ছড়িয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় উক্ত ঘটনায় উস্কানিদাতা ও গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান সাংবাদিক মিনারুল ইসলাম। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানেই এমন হয়রানি শিকার হতে হচ্ছে স্বাভাবিক রোগীদের পরিবারকেও। আর জ্বর-ঠাণ্ডা হলে তো কোনো কথায় নেই। এমন গুজব রোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাংবাদিক মিনারুল ইসলাম।