করোনা মহামারিতে মুসলিম সমাজে সালাতের ভূমিকা
একুশে জার্নাল ডটকম
জুলাই ১২ ২০২০, ১৯:৪১
হাফেজ ডা. ইব্রাহীম মাসুম বিল্লাহ>
সালাত ইসলামে আনুগত্যশীল তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ইবাদত। সালাত বা নামায ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ। মুসলমানরা শারীরিক সুস্থতার চেয়ে প্রভুর আদেশ পালনের গুরুত্ব নিয়ে এই ইবাদাত করেন। তবে এটি সত্য যে নিয়মিত নামায আদায়ের মাঝে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারও আছে। এই করোনা মহামারীতে যেগুলো যে কোন ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। করোনােকালে সুস্থতাই সবার কাছে পরম প্রার্থনা। বিশেষত সালাতের মাঝে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার উভয় উপকার আছে।
আসুন এবার আমরা দেখি সালাত কীভাবে মানসিক ও দৈহিকভাবে কোন ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে পারে।
করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরামর্শটি বিশেষজ্ঞ দিয়েছেন সেটি হলো বারবার সাবান পানিতে হাত ধোঁয়া। করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন সারফেসে লেগে থাকে আর হাতের সংস্পর্শে ভাইরাস মুখ বা চোখ দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। তাই বারবার হাত ধোঁয়ার কারণে ভাইরাস মরে যায় আর মানব শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। আর সালাত আদায় করার পূর্বে অবশ্যই সালাত আদায়কারীকে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে বা অযু করতে হয়। অযুর চারটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে উভয় হাতের কনুই, পায়ের টাকনু পর্যন্ত ধৌত করা এবং কুলি ও মাথা মাসেহ করা। এ চারটি কাজের মাধ্যমে ধর্মীয় বিধি যেমন প্রতিপালন হয় তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়।
কুলির ফলে oral cavity পরিস্কার হয়। ফলে মুখের হাউজিন যেমন মেইনটেইন হয় তেমনি বিভিন্ন ভাইরাস ব্যকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে মুখ গহ্বর নিরাপদ থাকে। মুখ ধোঁয়ার ফলে মুখের মধ্যে লেগে থাকা ধুলোবালি সহ ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া washed out হয়। ফলে চোখ , নাক সহ করোনার প্রবেশ মুখ সমূহ নিরাপদ থাকে। উভয় হাতের কনুইসহ ধোঁয়ার মাধ্যমে হাতে লেগে থাকা organism washed out হয়ে যায়। যা হাতকে নিরাপদ (sterile)করে দেয়। ফলে এই হাতের স্পর্শ নাক- মুখ-চোখ যেখানেই যাক আর বিপদের কারণ হয় না। উভয় পায়ের টাকনুসহ ধোঁয়ার মাধ্যমে পায়ে লেগে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র organism washed out হয়।যাতে করে পা আর কোন ধরণের ভাইরাসের বাহক হয়ে ঘরে প্রবেশ করে না। তবে এসব বিষয় তখনই কাজ করবে যখন অযুর পানি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এ ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনাও স্বাস্থ্যবিধির পক্ষেই। অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পানিতে অযু যেমন হবে না তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও মিলবে না।
সালাত বা নামায আদায়ের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন ও পদ্ধতি আছে। সালাত যেমন দৈহিক ইবাদত তেমনি মানসিকও। সালাত আদায়ে নির্দিষ্ট কিছু দৈহিক কসরতও আছে যা আদায়কারীকে প্রভুর নির্দেশনা পালনের পাশাপাশি আ্যরোবিক জেন্টাল এক্সারসাইজেরও সুবিধা দেয়। সালাতে নির্দিষ্ট সময় ধরে শরীরকে ব্যবহার করে রুকু,সিজদা করতে হয়। যার মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর করোনাকালে অক্সিজেনেরই প্রয়োজনীয়তা কত যে বেশি তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্দিষ্ট মুভমেন্টের ফলে যে ব্যায়াম হয়। যেসবের মাধ্যমে bodyর bones এ calcium deposition বেড়ে bones strong হয়। গিরায় ব্যাথা কমে (joint pain relief)। সুগার কন্ট্রোল সহজ হয় (sugar control)। প্রদাহ রোধে সাহায্য করে (act as an anti inflammatory substance)। মানসিক বিষন্নতা(mental stress) কমে। যার মাধ্যমে শরীর রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠে অর্থাৎ immune system boost করে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের খুবই প্রয়োজন। আর এসব শারীরিক ব্যায়াম বর্তমান করোনা মহামারীতে অত্যাধিক প্রয়োজন। এ করোনাতে সুস্থতাই যেখানে পরম আরাধ্য হয়ে দেখা দিয়েছে সেখানে সালাত আদায়ের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্ঠি যেমন অর্জন করা যাবে তেমনি সুস্থও থাকা যাবে। তাই আসুন না, সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলি!