“কবর” কবিতার করোনা সংস্করণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৩ ২০২০, ২০:২৭

।। মাহবুবুর রহমান ।।


এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে
তিরিশটা দিন হাত ধোঁয়নি সাবান মেশানো জলে।

এতোটুকু তারে ঘরে এনেছিনু গোবর ভর্তি মাথা
ভোর রাতে উঠে চুপচাপ খেতো তিন থানকুনি পাতা।

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিয়া ভেবে হইতাম সারা
সারা বাড়ি ভরি এতো ভাইরাস ছড়াইয়া দিল কারা!

এমনি করিয়া জানি না কখন হাত থেকে মুখে মিশে
করোনা তাহার বাসা বেধেছিলো সরাসরি ফুসফুসে।

আইসোলেশনে যাইবার কালে কহিল ধরিয়া পা
এই ভাইরাসে দেখে নিও মোর কিচ্ছুই হবে না।

হেসো না হেসো না, শোনো দাদু সেই থানকুনি পাতা খেয়ে
ভরসা তাহার কতো হয়েছিলো দেখতিস যদি চেয়ে।

নথ নেড়ে নেড়ে কহিল হাসিয়া, এতো ভয় পেলে চলে
মুসলমানের করোনা হয় না, অমুক হুজুরে বলে।

গুজবে যাহার এতো বিশ্বাস কেমন করিয়া হায়
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা দয়াময়
থানকুনি পাতা না খেয়ে লোকে, হাতখানা যেন ধোয়!


তারপর এই শূন্য জীবনে যতো দেখিয়াছি পাশে
সচেতন হওয়া বাদ দিয়ে লোকে রোগব্যাধি নিয়ে হাসে।

শতো করোনায় শত মৃত্যুর অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি
লোক সমাগম বাদ দিয়ে তাই সারাদিন ঘরে থাকি।

সাবানরে আমি বড় ভালোবাসি, সাবানের সাথে বাস
আয় আয় দাদু হাত দুটো ধুই, যদি মরে ভাইরাস!
.
এইখানে তোর বন্ধু ঘুমায়, এইখানে তার ভাই
কি করবি দাদু, আইইডিসিআরের নিয়ম যে মানে নাই।

সেই ফাল্গুনে ফ্রেন্ড তোর আসি কহিল ডাকিয়া মোরে
দাদু, আমাদের স্কুল ছুটি যাচ্ছি সাজেক ট্যুরে।

হতাশ হইয়া কি আর বলিব, কহিলাম বাছা যাও
সেই ট্যুর তার শেষ ট্যুর হবে, তাহা কি জানিত কেউ।

সাজেক থেকে ফিরিয়া তাহার সেই যে ধরিল জ্বরে
সাথে হাঁচি কাশি, পুরো পরিবার একসাথে গেল মরে।

তোর বন্ধুর জামা জুতো ব্যাগ দুহাতে জড়ায়ে ধরি
তার প্রেমিকা যে কতই কাঁদিত সারা দিনরাত ভরি।

কান্নার পরে জামা-ধরা সেই হাত দিয়েছিলো মুখে
দুইদিন বাদে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলো তারও বুকে।

গলাটি তাহার জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিলো তাহার মা
পরদিন রাতে করোনা অসুখ, তারেও ছাড়িল না।

হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা আয়
আইসোলেশনে সুস্থ হউক, মেয়েটা ও তার মায়!


এইখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে
বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের বাড়ি ইতালির ছেলে পেয়ে

করোনা ছড়ালে ইতালি হইতে ফিরিল বুজির বর
সেই ছেলে মোটে নয় সচেতন, থাকেনাই একা ঘর।

খবরের পর খবর পাঠাতো, দাদু যেন কাল আসে
আমরা সবাই ঘুরতে যাচ্ছি, যায় আমাদের সাথে!

শ্বশুর তাহার বেশি বোঝা লোক, ধারে কি এসব ধার?
করোনার ভয়ে ঘরে থাকা ভুল, বলছিলো বারবার।

যাইনি আমি তাই বেঁচে গেছি, বাঁচেনাই ওরা কেহ
ইতালির থেকে আসা ভাইরাস ছুয়েছে সবার দেহ।

তোর বুজিও জ্বরেতে পড়িলো আর উঠিলো না ফিরে
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু ধীরে!

আয় আয় দাদু মোনাজাত ধরি, মহান খোদাকে ডেকে
বিদেশ ফেরত সকলেই যেন কোয়ারেন্টাইনে থাকে।


হেথায় ঘুমায় তোর বড় খালা, ষাট বছরের বুড়ি
হার্টের অসুখে চিনি খেতনা, গুড় দিয়ে খেত মুড়ি।

সারাবছরই ডায়াবেটিস আর হাই প্রেশারে ভোগে
ঘরে থেকেও কী করে শেষে ধরিলো করোনা রোগে!

তার ছোটছেলে একদিন গেল ঘুরতে শপিং মলে
ফেরার সময় বন্ধুরা মিলে আড্ডাও দিলো দলে।

বাসায় ফিরে মায়ের সাথে একসাথে খেলো ভাত
অসুস্থ তোর বড় খালার সেইদিনই শেষ রাত।

জ্বর কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নিলো না কেউ
সবার ঘরেই মৃত্যুর ছায়া, চোখে কান্নার ঢেউ।

সেই চোখমুখ গোলগাল হাত, সকলি তেমনি আছে
কি জানি মরণ ভাইরাসে ধরে খালা তোর চলে গেছে।


ঐ রাজপথে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে
মৃত্যু মিছিলে বেঁচে থাকিবার স্বাদ নাহি আজ জাগে।

খবর পাঠিকা খবর পড়িছে বড় সূ-করুণ সুর
সোনার বাংলা করোনাতে আজ ভয়াল মৃত্যুপুর!

জোড়হাত তুলে দোয়া মাঙ দাদু আয় খোদা রহমান
করোনা হইতে রক্ষা করিও দেশের সকল প্রাণ!

করোনা করোনা বলে দাদু ভাবিওনা সারাক্ষণ!
তোমার দুখ দেখে হচ্ছে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!


সম্পাদনায়: ইলিয়াস সারোয়ার