ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে আদালতে আরও দুটি হত্যার এজাহার
একুশে জার্নাল ডটকম
সেপ্টেম্বর ০২ ২০২০, ২০:০৬
কায়সার হামিদ মানিক,স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, অন্যান্য পুলিশ সদস্য, পুলিশের সোর্সসহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুটি হত্যার অভিযোগে কক্সবাজার আদালতে আরও দুটি পৃথক এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত আমলী আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক মোহা. হেলাল উদ্দীন এজাহার দুটি আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
প্রথম এজাহারটি দায়ের করেন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গাখালী গ্রামের শাহেনা আকতার। তিনি এজাহারে বলেন, তার স্বামীর নাম মো. মুসা আকবর। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা স্বামীর বড়ভাই আলী আকবরের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের নানারকম ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শ্বশুর আবুল বশর এবং ভাবি আরেফা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বৃদ্ধ আবুল বশরকে দুই হাজার ইয়াবা এবং আরেফাকে একটি মিথ্যা মামলায় আসামি করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ৫ মার্চ স্বামী মুসা আকবর কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৮ মার্চ বিনা কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া তাকে আটক করে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায়। এরপর হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান তাদের সোর্সের মাধ্যমে বাদীকে খবর দেয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয় স্বামী মুসা আকবরকে জীবিত ফেরত নিতে চাইলে ২০ লাখ টাকা পুলিশকে দিতে হবে বলে জানায়। দাবীর ২০ লাখের মধ্যে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা দিতে না পারায় ২৮ মার্চ আনুমানিক রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে গুলি করে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। পরের দিন মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আসামিরা পরস্পর সহযোগিতা ও যোগসাজশে মুসা আকবরের খারাইঙ্গাঘোণা গ্রামের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট চালায়।
এই মামলার বাদীর আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, ‘আদালত এই এজাহারটি আমলে নিয়ে এই হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা হয়ে থাকলে তার বিবরণ ও অগ্রগতিসহ ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে টেকনাফ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।
একই আদালতে আজ দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজরপাড়ার আবদুর রহমানের পুত্র হাফেজ আহমদ। এই মামলায় ওসি প্রদীপসহ মোট ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৫জন পুলিশ সদস্য।
বাদীর পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীন বলেন, ‘আদালত এজাহারটি গ্রহণ করে এই হত্যার ঘটনায় ইতোপূর্বে মামলা হয়ে থাকলে তার অগ্রগতি এবং ময়না তদন্তের রিপোর্টসহ ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য টেকনাফ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।’
এই মামলায় আসামী করা হয়েছে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান, এসআই দীপক বিশ্বাস, মশিউর রহমান, রাসেল আহমদ, বোরহান উদ্দীন ভুইঁয়া, মোহাম্মদ বাবুল, এএসআই সুব্রত রায়, দিদার হোসেন, মিশকাত উদ্দীন, ফকরহজ্জামান, মাইন উদ্দীন, সনজীব দে ও অহিদ উল্লাহ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা সাগর দেব, মো. সালমান, মো. খোকন, রাশেদুল মো. আতিকুল ইসলাম, সৈকত বড়ুয়া ও নাজমুল আলম এবং পুলিশের সোর্স আমিনুল হক।
বাদী তার এজাহারে বলেন, তার ছোট ভাই সাহাব উদ্দীনকে পুলিশ গত ১৭ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ পরিবারের কাছে খবর পাঠায় দ্রুত পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে থানায় আসতে। অন্যথায় সাহাব উদ্দীনের মরদেহ দাফন করতে তৈরি থাকতে বলে। এরপর ধারদেনা করে পুলিশের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। দাবীকৃত অবশিষ্ট সাড়ে চার লাখ টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় কানজরপাড়ার তারাবুনিয়াছড়াস্থ ধানখেতে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে সাহাব উদ্দীনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আজকের দুইটিসহ গত দুই সপ্তাহে ওসি প্রদীপসহ টেকনাফ থানায় ওইসময় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি হত্যা মামলার এজাহার দায়ের করা হয়েছে আদালতে।