ওসমানীনগরে মানা হচ্ছে না নিরাপদ দূরত্ব, নিরব প্রশাসন, বাড়ছে ঝুঁকি
একুশে জার্নাল
মে ১৯ ২০২০, ১০:৫৮
ওসমানীনগরে করোনা ভাইরাসের মাহামারি প্রতিরোধে সরকারী বরাদ্দের আসা ত্রাণ সামগ্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গৃহবন্দি লোকজনের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিলেও থামানো যাচ্ছে না বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে জনসমাগম করে উপজেলা প্রশাসনসহ লকডাউনকৃত এলাকার পার্শ্ববর্তী স্থানে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ।
ফলে গোটা উপজেলায় বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি। মাহামারি প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার জনসমাগম না করার কথা থাকলেও উপজেলা বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন উপজেলা প্রশাসনের সামনসহ আশপাশ এলাকায় প্রতিদিনই জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এসব ত্রাণ বিতরণী অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অতিথিওতা করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার হাট বাজার গুলোতে বেরেই চলছে জনসমাগম। জনসমাগম রোধে প্রশাসন দায়সারা ভাব থাকায় বাড়ছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি।
অভিযোগ উঠেছে মহামারি প্রতিরোধে এসব ত্রাণ বিতরণী কার্যক্রম ও হাট বাজারগুলোতে লোকারণ্য কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সচেতন মহলের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে বার বার বলার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের এমন রহস্যজনক কারণে উপজেলার হাট বাজারগুলোতে অবাধে লোকজনের জনসমাগমসহ জনবহুল স্থানে লোকজনকে জড়ো করে সামাজিক সংগঠনগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।
এক্ষেত্রে ত্রাণ গ্রহিতারা ও ত্রাণ প্রদানকারী কেউই মানছেন না নিরাপদ দূরত্ব। প্রবাসী অধ্যুষিত ওসমানীনগর উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে এবং জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে জনসমাগম করলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব রয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর গরিব কল্যাণ ট্রাস্ট বার্মিংহাম ইউকে নামক সংগঠন উপজেলা প্রশাসন ভবনের সামনে নিরাপদ দূরত্ব না মেনে ত্রাণ বিতরণের নামে ফোটসেশন করলেও সেখানে গাদাগাদি করে ছবি উঠতে দেখা যায়।
উপজেলায় ইতিমধ্যে ৩ জন করোনা রোগী সনাক্ত হলেও থেমে নেই তাদের জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ।
গত শনিবার উপজেলার তাজপুরবাজারস্থ মশ্রব আলী মার্কেটের করোনা রোগী সানাক্ত হওয়ার পর তাজপুরস্থ ওই ৫ তলা ভবনটি লকডাইন করে উপজেলা প্রশাসন। ওই দিনই শনিবার দুপুরে লকডাউনকৃত ভবনের ১০০ গজ দূরে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করে বালাগঞ্জ ওসমানীনগর আদর্শ সমিতি ইউকে। করোনা মহামারি প্রতিরোধে কোনো বিদ্যালয়ে সভা বা জনসমাগম করতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার অনুমতি নিয়ম থাকলেও এক্ত্রে দাতা সংগঠনটি কোনো প্রকার নিয়ম নীতিরও তোয়ক্কা করেনি।
সোমবার উপজেলার তাজপুর লকডাউনকৃত বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তার কার্য়ালয়ের সামনে জনসমাগম করে বালাগঞ্জ ওসমানীনগর গরিব কল্যাণ ট্রাষ্ট বার্মিংহাম ইউকে নামের একটি সংগঠন। বিতরণী অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরাসহ জনপ্রতিনিধিদের অতিথি হতে দেখা গেছে। করোনা প্রতিরোধে মার্স্ক-গ্লাপস ছাড়াই লোকজনকে জড়ো করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও ত্রাণ দাতা সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাসহ অতিথিরা মানেননি কোনো প্রকার সামাজিক গুরুত্ব।
এছাড়া উপজেলার প্রধান প্রধান রাস্তা ঘাটসহ প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র তাজপুর ও গোয়াবাজার এলাকায় প্রতিদিন হচ্ছে লোকে লোকারাণ্য। কেউ মানছেন না সামাজিক নিরপদ দূরত্ব। ফলে গোটা উপজেলার সাধারণ মানুষদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে সরাসরি ত্রাণ বিতরনী কার্যক্রমে অনেকটা নিরব দেখা গেলেও সরকারকে বেকাদায় ফেলতে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা কৌশলে তাদের নিযুক্ত সামাজিক সংগঠনের ব্যানারকে সামনে নিয়ে জন গুরুত্বপূর্ন এলাকায় লোকজনকে জড়ো করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে এসব ত্রাণ বিতরনী অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অতিথি করা হচ্ছে। করোনার মহামারি প্রতিরোধে জনসমাগমসহ লোকজন জড়ো করে ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ থাকার পর ওসমানীনগরে সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করে আওয়ামীলীগের লোকজনকে অতিথি বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্থ রয়েছেন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। অঙ্গসংগঠন গুলো সামাজিক সংগঠনের নাম করে ত্রাণ দেওয়ার নামে জনসমাগম করে অনুষ্ঠানে দিচ্ছেন রাজনৈতিক বক্তব্যও দিতে দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনা মিয়া বলেন, উপজেলার প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক প্রাণ কেন্দ্র তাজপুর ও গোয়ালাবাজার এলাকায় প্রতিদিন লোক সমাগম বেড়ে চলায় বাড়ছে ভাইরাসের ঝুঁকি। হাট বাজারে জনসমাগম কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কোনো কঠোরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
লকডাউন চলাকানি সময়ে জনসমাগম ঠেকানো না গেলেও করোনার প্রকোপ বাড়বে ছাড়া কমানো যাবেনা। উপজেলার এমন প্ররিস্থিতি নিয়ে সচেতনমহল হতাশ হচ্ছেন। শনিবার উপজেলার তাজপুর বাজার এলাকায় একজন করোনা রোগী সনাক্তের পরও পাশ্ববর্তী এলাকায় লোকজন জড়ো করে সামাজিক দূরাত্ব না মেনে ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি আমি শুনেছি।
এলাকার যেকোনো দূর্যোগে আমাদের প্রবাসী ভাইদের সাহায্যে সহযোগিতার অবদান অপূরনীয়। তবে এবারের দূর্যোগটিতে ভিন্নতা থাকায় সরকারের নির্ধারিত নিয়মে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি সবাইকে আহব্বান জানাচ্ছি।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাহমিনা আক্তার বলেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধে সর্ব ক্ষেত্রে জনসমাগম নিষিদ্ধ রয়েছে। কেউ যদি এর ব্যাতিক্রম করেন তাহলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া কোনো বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে লোকজন জড়ো করে ত্রাণ বিতরণসহ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলেও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। বিনা অনুমতিতে কেউ এসব কার্যক্রম চালিয়ে গেলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।