ওসমানীনগরে পুলিশের সহায়তায় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বসতভিটা দখলের অভিযোগ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১৩ ২০১৯, ০২:৩৩

একুশে জার্নাল ডেস্ক: ওসমানীনগরে পুলিশের সহায়তায় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বসতভিটা দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে এমনটা ঘটে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সুত্রে, বসতভিটা রক্ষায় পুলিশকে ফোন করে আনলেও পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ভূক্তভোগীকে স্বজনসহ থানায় এনে চাঁদাবাজী মামলা দিয়ে আটকে রাখে এবং পুলিশের সহায়তায় ওই শিক্ষকের বসতঘর গুড়িয়ে দিয়ে আসবাবপত্রসহ সকল জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে দখল নেয়া হয়। এঘটনায় এলাকায় তোলপাড়া শুরু হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব রুকনপুর গ্রামের রাহাত উল্লাহ’র ছেলে মদিনাতুল উলুম বড় দিরাই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্বাস আলী লেপাসের সাথে তার চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রভাবশালী মিজানুর রহমানের (আক্কাস) ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিপক্ষের ভয়ে আব্বাস আলী দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে অনত্র বসবাস করছেন। শুক্রবার দুপুরে প্রতিপক্ষের ভাড়া করা লোকজন ওই শিক্ষকের বসতঘর ভাংচুর করে জায়গা দখলের চেষ্ঠা চালায়। খবর পেয়ে স্বজনদের নিয়ে বাড়িতে ছুটে যান আব্বাস আলী। সেখানে গিয়ে ভাড়াটে লোক কর্তৃক তার বাড়ি ভাঙচুর করতে দেখে থানা পুলিশকে খবর দেন।

ঘটনার পরপর বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাঙচুরকারী ২জনকে আটক করে। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশ ভাঙচুরকারী ভাড়াটে ১জনকে এবং থানায় আসার পর অপরজনকে ছেড়ে দেয়।

এসময় মামলা দায়েরের জন্য শিক্ষক মাওলানা আব্বাস আলী লেপাস সাক্ষী হিসেবে তার ভগ্নিপতি চান্দাইরপাড়া গ্রামের খালিক মিয়া, তার ভাগিনা কাশিপাড়া গ্রামের মুহিবুর রহমান উজ্জ্বল এবং ভাড়েরা গ্রামের সালিশান মফজ্জুলকে থানায় নিয়ে আসেন। এসময় ২৫লাখ টাকা চাঁদাবাজীর অভিযোগে মাওলানা আব্বাস আলী লেপাসসহ থানায় আসা তার স্বজনদের আসামী করে মামলা দায়ের করে আটকে রাখা হয়।

জানা যায়, তাদের আটক রেখে শুক্রবার রাতের মধ্যেই ওই শিক্ষকের জায়গার বসতঘর সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে ঘরের আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল অনত্র সরিয়ে নেয়া হয়।

এদিকে প্রতিপক্ষ মিজানুর রহমানের কেয়ারটেকার তাজউদ্দিন মাস্টার বাদি হয়ে দায়েরকৃত চাঁদাবাজী মামলার এজাহারে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ ঘর থেকে নগদ ৩৮ হাজার টাকা এবং ৪ভরি স্বর্ণালংকার নেয়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ঘর থেকে কিছু নেয়া হয়নি বলে জানান। এছাড়া মামলার এজাহারে ৬জন আসামীর নাম উল্লেখ থাকলেও তিনজনের নাম ছাড়া কাউকে চিনেন না বলেও জানান।

উল্লেখ্য, বিগত সময়ে ওই শিক্ষক পরিবারের মহিলাসহ পুরুষদের মিথ্যে মামলায় হয়রানি করার অভিযোগে ওসমানীনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে শিক্ষক আব্বাস মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, আমাদের ঘর ভাঙচুর করার সময় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে কৌশলে আমার স্বামীসহ অন্যান্যদের থানায় নিয়ে চাাঁদাবাজির মামলায় আটকে রাখে। কিন্তু অপরাধী ২জনকে নিলেও পথিমধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আজ (শনিবার বিকেলে) ডিআইজি ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে এসেছি। এর আগে মিথ্যা মামলায় মহিলাসহ তাদের হয়রানি করা হয় বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য এহসানুল হক বলেন, শুক্রবার আমি এলাকার বাইরে ছিলাম। এসে ঘর-দুয়ার ভাঙচুর এবং এরসাথে জড়িত দুজন আটকের পর থানায় নিয়ে ছেড়ে দিয়ে ভুক্তভোগীকে আটকের কথা শুনেছি।

ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, পুলিশের সহায়তায় গরিব শিক্ষকের ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে শোনেছি যা খুবই দুঃখ জনক। বিষয়টি জানার পর থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলেও পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করে।

ওসমানীনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আনা মিয়া বলেন, গরিব ওই শিক্ষকের ঘর ভাঙচুর করে দখল নেয়া এবং চাদাবাজী মামলায় আসামী করার বিষয়টি শুনেছি।

যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও গত নির্বাচনে তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী অরুনোদয় পাল ঝলক বলেন, নিরীহ লোকদের থানায় আটকে রেখে এলাকার একজন গরীব লোকের ঘর দখল করে নেয়া হয়েছে। বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।

এব্যাপারে ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম আল মামুন পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাদাবাজীর অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করি। তবে ঘর ভাঙচুর করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জায়গাটি কার জানা নেই তবে এব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে কথা বলতে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।